মাদক ও সন্ত্রাসের করাল গ্রাসে বিপর্যস্ত রাজবাড়ী জেলা। ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে মাদক, বাড়ছে খুন, সহিংসতা ও অপরাধ। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে এবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একক অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাকায় কর্মরত এক গণমাধ্যমকর্মী। তার দাবি—রাজবাড়ী ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে, আর প্রশাসন শুধু দর্শক।
বুধবার (৩ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়ান সরদার রাজিব নামের ওই তরুণ সাংবাদিক। পেশায় তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের কর্মী। একাই ‘রাজবাড়ী বাঁচাও’ দাবিতে অবস্থান নিয়ে তিনি বলেন, “আমার প্রিয় রাজবাড়ী আজ মাদক ও খুনে পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে। প্রশাসন দায় এড়াতে পারে না।”
তিনি আরও বলেন, “তরুণ সমাজ ভয়াবহভাবে ধ্বংস হচ্ছে। প্রতিদিন মাদক-সম্পর্কিত অপরাধ, খুন, ধর্ষণ, চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। অথচ বড় মাদক গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে। চলছে লোক দেখানো অভিযান আর দায়সারা কর্মকাণ্ড।”
প্রতিবছরই রাজবাড়ীতে ঘটছে ভয়াবহ সব হত্যাকাণ্ড। চলতি বছর জুন মাসেই কমপক্ষে পাঁচটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রয়েছে—
১১ জুন কালুখালীতে দুর্বৃত্তের হাতে খুন অটোরিকশাচালক আসলাম, ২০ জুন বালিয়াকান্দিতে স্বামীর হাতে খুন গৃহবধূ মনিরা, ২২ জুন দৌলতদিয়ায় মাদক বিরোধে নিহত নজরুল, ২৪ জুন যৌনপল্লিতে শ্বাসরোধে হত্যা তানিয়াকে, ২৫ জুন নিখোঁজের দুদিন পর দাদশী থেকে যুবক আদরের মরদেহ উদ্ধার।
এছাড়া নানা এলাকায় প্রতিনিয়ত ইয়াবা, হেরোইনসহ গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু মূল অপরাধীরা ধরা পড়ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
বিশেষ করে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লিকে মাদকের অন্যতম ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এখান থেকে মাদক ছড়িয়ে পড়ছে দুর্গম চরাঞ্চল থেকে শুরু করে জেলার প্রত্যন্ত এলাকায়। পোড়াভিটা, লোকোসেড, পাচুরিয়া, বাগমারাসহ বহু এলাকায় মাদকের ভয়াবহতা বাড়ছে।
রাজিব বলেন, “জনগণ আজ অসহায়। প্রশাসন দায়সারা অভিযান চালিয়ে দায় মেটাচ্ছে, কিন্তু মাদকের গডফাদারদের কিছু হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে রাজবাড়ী আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।”
তিনি আরও বলেন, “এই প্রতিবাদ শুধু আমার না, রাজবাড়ীর প্রতিটি ভুক্তভোগী মানুষের আত্মচিৎকার। আমি রাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যাতে সময় থাকতে এই পরিস্থিতি রুখে দেওয়া যায়।”
রাজবাড়ীর এই সংকট নিরসনে প্রশাসনের জোরালো ও কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি হয়ে উঠেছে—বলেই মনে করছেন সচেতন মহল।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল