শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙন চলছে। ইতোমধ্যে পদ্মার তীররক্ষা বাঁধের ২ কিলোমিটার অংশ বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া ভাঙনে এক মাসে গৃহহীন হয়েছে প্রায় ২০০ পরিবার।
পাউবো সূত্র জানান, পদ্মা নদী জাজিরার নাওডোবা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনায় মিলিত হয়েছে। নাওডোবায় নির্মাণ করা হয় পদ্মা সেতু। তার ভাটিতে পূর্ব নাওডোবার জিরো পয়েন্ট থেকে বিলাসপুর ইউনিয়ন এলাকায় পদ্মার ভাঙন চলছে। ওই ভাঙনের কবল থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষায় ২০২৩ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৮৬০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়। এ প্রকল্পের আওতায় পূর্ব নাওডোবা, পালের চর, বড়কান্দি, জাজিরা ও বিলাসপুর ইউনিয়নে ৮ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার দীর্ঘ তীররক্ষা বাঁধ হচ্ছে। সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও পাথরের ব্লক ফেলা হচ্ছে। তবে এরই মধ্যে ওই বাঁধের জিরো পয়েন্ট থেকে কাথারিয়াকান্দি পর্যন্ত ২ কিলোমিটার নদীতে বিলীন হয়েছে। যাতে প্রায় ৪০ কোটি টাকার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডুবে গেছে। ওই স্থানে পদ্মা নদী ২০ থেকে ১২০ মিটার পর্যন্ত ভেঙে গেছে। এক মাসের ভাঙনে ২০০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে।
পাওবো সূত্র জানান, পদ্মার তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণে ৩১টি গুচ্ছ প্রকল্পের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। গত বছর ১৭ মে প্রকল্পের কাজ শুরু করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো। ওই এলাকায় ৩১টি গুচ্ছ প্রকল্পের আওতায় ১০টি প্রতিষ্ঠান কাজ করছিল। প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকল্পে থাকা ৫ লাখ ২৪ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলেছে; যা ভাঙনে ভেসে গেছে। যার মূল্য বাবদ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে পাউবো থেকে প্রায় ৪০ কোটি টাকা বিল তুলে নিয়েছে। আর পুরো প্রকল্প থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পর্যন্ত ৩৪৮ কোটি টাকা বিল উত্তোলন করেছে।
বুধবার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের পৈলান মোল্যাকান্দি গিয়ে দেখা যায়, নদীর তীরের বাসিন্দারা বসতঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। জিরো পয়েন্ট থেকে পালের চর বাজারে যাওয়ার সড়কের দেড় কিলোমিটার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ওই এলাকায় তীরজুড়ে পাথরের ব্লক জড়ো করে রাখা হয়েছে। কিছু স্থানে পাথরের ব্লক, বসতবাড়ি ও ফসলি জমি, রাস্তা বিলীন হয়ে গেছে।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান খুলনা শিপইয়ার্ডের প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তিনজন সাব ঠিকাদার দিয়ে কাজটি বাস্তবায়ন করছি। চারটি প্যাকেজে কাজ গত বছর শুরু করেছি। প্রথম প্যাকেজের সাব ঠিকাদার নিতে দেরি হওয়ায় কাজ শুরু করতে সময় লেগেছে।’
পাউবোর এক প্রকৌশলী বলেন, খুলনা শিপইয়ার্ড ভাঙন শুরুর তিন-চার দিন পর জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করেছে। তাতে কোনো কাজ হয়নি। মাঝির ঘাট গ্রামের ব্যবসায়ী মান্নান মাদবরের দোকানসহ বসতবাড়ি বিলীন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘শেষ আশ্রয়টুকু হারালাম। মা-বাবার কবরটাও নদীতে চলে যাবে।’ ভাঙনের শিকার জেবুননেছা বলেন, ‘পদ্মা আমাদের সব কেড়ে নিয়ে গেছে। এখন আমাদের থাকার ব্যবস্থা নেই, অন্যের বাসায় থাকি। দিন আনি দিন খাই।’
সোনিয়া বেগমের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি পদ্মায় বিলীন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কাজের ধীরগতিতে সর্বনাশ হয়ে গেল। সরকারের কাছে দাবি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে দেওয়ার।’
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, ‘নদীর তীররক্ষা বাঁধ প্রকল্পের কিছু অংশ ভাঙনের কবলে পড়েছে। ওই এলাকা দিয়ে সার্ভে করছি। সার্ভের প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে ডিজাইন সংশোধন করে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। কিছু ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে।’