ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদের ওপর বাঁশের সাঁকোই ভরসা বাঞ্ছারামপুর ও নবীনগর উপজেলার ১৭ গ্রামের ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষ নদী পারাপার হয়। এ সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হয় শিশু শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। স্বাধীনতার পর এত বছরেও এখানে হয়নি সেতু নির্মাণ। তিতাস নদের এক পাড়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ইমামনগর গ্রামের আনন্দ বাজার। অন্য পাড়ে নবীনগর উপজেলার ভিটিবিশারা গ্রামের বাংলাবাজার। শত বছরেরও বেশি সময় ধরে এই স্থানে খেয়া নৌকা চলাচল করেছে। সেখানে কয়েক বছর আগে এলাকাবাসী প্রায় ৪০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে। তবে সেতু না থাকায় যানবাহন চলাচল করতে পারে না। ভোগান্তির শিকার হয় সাধারণ মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার দরিকান্দির ইমামনগর এলাকার আনন্দবাজার সংলগ্ন এলাকায় তিতাস নদ পলি পড়ে প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে এই এলাকার অনেক জায়গা দিয়ে মানুষ হেঁটেই নদী পারাপার হতে পারে। ইমামনগর আনন্দবাজার থেকে পার্শ্ববর্তী নবীনগর উপজেলার ভিটিবিশারা গ্রামের মধ্যে শত বছর ধরে নদীতে খেয়া নৌকা চলাচল করত। কয়েক বছর ধরে এলাকাবাসী বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে যাতায়াত করছে। এই সাঁকো ব্যবহার করে নবীনগর উপজেলার রতনপুর ও শ্রীকাইল ইউনিয়নের ভিটিবিশারা, বাজেবিশারা, শাগদা, শ্রীকাইল, পেন্নাই, চন্দ্রনাইল, দুবাচাইল, রতনপুর, সাহাপুর, সাতমোড়া, মোল্লা, ভাউচাইল গ্রামের লোকজন বাঞ্ছারামপুরের কড়িকান্দি ফেরি পার হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। অন্যদিকে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ইমামনগর, দরিকান্দি, গোকুলনগর, খাল্লা, ফরদাবাদ গ্রামের লোকজন নবীনগর উপজেলাসহ কুমিল্লা, চট্টগ্রামে যাতায়াত করে। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এই পথে যাতায়াত করে।
স্কুল শিক্ষার্থী শিউলি আক্তার জানান, সাঁকো দিয়ে স্কুলে আসা যাওয়ার সময় ভয়ে থাকি কখন যেন সাঁকো থেকে পড়ে যাই। আনন্দ বাজারের ব্যবসায়ী মুসা মিয়া জানান, নদীতে পাকা সেতু না থাকার কারণে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এতে করে অনেকেই আমাদের এখান থেকে বাজার করতে আগ্রহী হন না। আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। রতনপুর গ্রামের চুন্নু মিয়া জানান, ঢাকায় গেলে এই পথ ব্যবহার করি। কিন্তু নদীতে সাঁকোর কারণে সরাসরি গাড়ি দিয়ে যেতে পারি না। ভোগান্তির শিকার হই, টাকাও বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে।
দরিকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল করিম জানান, তিতাস নদের এই জায়গাটি দিয়ে দুই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। বিশেষ করে নবীনগর উপজেলার মানুষ ঢাকায় যেতে এই রোডটি ব্যবহার করে এতে করে তাদের দূরত্ব অনেক কমে যায়। সেতু নির্মাণ হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম যেতে পারবে। বাঞ্ছারামপুর উপজেলার প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, সেতু নির্মাণের জন্য কয়েকবার সার্ভে করা হয়েছে। দুই উপজেলা হওয়ার কারণে সময় লাগছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতু নির্মাণের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।