নীলফামারী জেলা শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে নটখানা (নীলকুঠি)। বিশাল জায়গা নিয়ে একতলা ভবন। যে ভবনের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে নিপীড়ন, শোষণের গল্প। ভবনটির দিকে চোখ পড়লেই হৃদয়পটে ভেসে উঠে দরিদ্র কৃষকের ওপর অত্যাচারী নীলকরদের নির্যাতনের বীভৎস দৃশ্য। ব্রিটিশ আমলে এ জেলায় প্রচুর পরিমাণে নীল চাষ হতো। সে জন্য ব্রিটিশরা নির্মাণ করে নীলকুঠি। যা ছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের নীলকুঠিয়ালাদের নীল চাষের কেন্দ্রস্থল। ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের পর কলকারখানায় তৈরি কাপড়ের রঙের জন্য নীলের প্রয়োজন হয়। ভারত উপমহাদেশ তখন ব্রিটিশদের অধীনে। সেই সূত্র ধরে পূর্ব বাংলার কৃষকদের তারা জোর করে নীল চাষে বাধ্য করত। নীল চাষ ছিল বর্গাপদ্ধতি। জমি বর্গা নিয়ে নীল চাষ করতেন কৃষকরা। নীলকর, জমি মালিকের পাওনা, চাষ খরচ সবকিছু বাদ দিয়ে কৃষকের ভাগ্যে হতাশা ছাড়া কিছুই জুটত না। ফলে নীল চাষে অস্বীকৃতি জানান তারা। তখন তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। চাষিদের স্ত্রী-সন্তান ধরে নিয়েও অত্যাচার করা হতো। এমন অনেক মর্মস্পর্শী ঘটনা মনে করিয়ে দেয় ভবনটি। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, নীলফামারী জেলার উৎপত্তি নীলকুঠি থেকে। নীল চাষ নিয়ে নীলফামারীর নামকরণ। নীলকুঠির ঐতিহ্য রয়েছে। এটা আমরা সংরক্ষণ করতে চাই। জানা যায়, আগে স্থানটির নাম ছিল ‘লটখানা’। অবাধ্য নীলচাষিদের এ খামারে এনে লটকিয়ে শাস্তি দেওয়া হতো। কালের আবর্তে লটখানা শব্দটি ‘নটখানা’য় রূপ নেয়। নটখানা থেকে ‘নীলফামারী’ শব্দটির প্রচলন। ধারণা করা হয়, স্থানীয়দের বাচনভঙ্গির কারণে ‘নীল খামার’ রূপান্তরিত হয় ‘নীলখামারী’তে। পরে অপভ্রংশ হয়ে নীলখামারী হয়ে যায় নীলফামারী। কারও কারও মতে, নীল ফার্মা পরিবর্তিত হয়েও নীলফামারী হতে পারে।