দিনদিন ছোট হয়ে আসছে গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের আওতা। ষাটের দশকে গড়ে তোলা দেশের বৃহত্তম গুরুত্বপূর্ণ এ সেচ প্রকল্পটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। বিশেষ করে এক বছর ধরে দুটি সেচ পাম্প বিকল, খালগুলো ভরাট ও বেদখল হয়ে যাওয়া, সংস্কার না হওয়া ও লোকবল সংকটে পড়ে খুঁড়িয়ে চলছে কার্যক্রম। সময়মতো সেচ না পাওয়ায় ফসল উৎপাদন যেমন ব্যাহত হচ্ছে তেমনি বিকল্প উপায়ে সেচ নিতে গিয়ে কৃষকদের খরচ বাড়ছে।
জিকে সূত্রে জানা গেছে, ষাটের দশকে নির্মিতি গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে চার জেলার ১৩টি উপজেলার প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হতো। কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার এ ১৩ উপজেলায় সেচ সরবরাহ করা হতো। তবে বর্তমানে কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সরবরাহ সুবিধা পাচ্ছে কৃষকরা। তাও পানি বিভাজন করে দিতে হয়। এক জেলা পেলে আরেকটির কৃষকরা পায় না।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি জিকে প্রকল্পের আধুনিকায়নে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। তবে সেটি এখনো আলোর মুখে দেখেনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, খরাপ্রবণ এলাকা হওয়ায় কুষ্টিয়া অঞ্চলে ষাটের দশকে জেলার ভেড়ামারায় বাহিরপুর ইউনিয়নের মসলেমপুর পদ্মাতীরবর্তী এলাকায় গড়ে তোলা হয় এ প্রকল্প। পরিকল্পনা অনুযায়ী কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার ১৩টি উপজেলার ওপর দিয়ে প্রধান খাল খনন করা হয়। ১৯৩ কিলোমিটার প্রধান খালের পাশাপাশি ৪৬৭ কিলোমিটার সেকেন্ডারি খাল আছে। এ ছাড়া টারশিয়ারি খাল আছে ৯৯৫ কিলোমিটার। তবে এসব খালের বড় অংশ দখল হয়ে গেছে। অনেক খাল ঝোপ-ঝাড়ে ভরে গেছে। ভেড়ামারায় জিকের প্রধান পাম্প স্টেশন আছে। তিনটি বড় পাম্প আছে স্টেশনে। তবে দুটি পাম্প এক বছর ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। একটি পাম্প সচল থাকলেও সেটি চালানোর জন্য পদ্মায় পানির লেভেল কমপক্ষে ৪.২০ সেন্টিমিটার প্রয়োজন।
মরফলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রইচ উদ্দিন বলেন, পাম্প চালাতে হলে পানির উচ্চত ৪.২০ সেন্টিমিটারের ওপর থাকতে হবে। এর কম হলে পাম্প সয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। পাম্প স্টেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, জাপানের প্রকৌশলীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তারা পরিদর্শন করেছে। কিছু যন্ত্রাংশ ইতোমধ্যে আনা হয়েছে। বাকি যন্ত্রাংশ পোর্টে এসেছে।’ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রশিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা উচ্ছেদের জন্য তালিকা প্রস্তুত করছি, কিছু উচ্ছেদ করেছি। বাজেট না থাকায় খাল সংস্কার কাজও ঠিকমতো করা যাচ্ছে না।’ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল হামিদ বলেন, নতুন করে দুটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দুটি বড় ও ৫টি ছোট পাম্প মেশিন স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া খাল সংস্কারসহ গাছ লাগানো হবে।
নতুন পাম্প স্থাপন করা হলে পদ্মার পানি ৩ সেন্টিমিটারের নিচে নামলেও পানি সরবরাহ সারা বছর সচল থাকবে।’
জিকে সেচ ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সভাপতি সাফায়েত হোসেন পল্টু বলেন, ‘মূল সমস্যা কৃষকরা পানি পাচ্ছেন না।’