ঢাকাই চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে আলোড়ন সৃষ্টি করার তালিকায় রয়েছেন অনেক ব্যান্ড শিল্পী। এসব ব্যান্ড তারকা বাংলা চলচ্চিত্রের গতানুগতিক ধারার গানগুলোর মধ্যে এনে দিয়েছিলেন বৈচিত্র্যের ছোঁয়া। সেই কয়েকজন ব্যান্ড শিল্পী নিয়ে আয়োজন সাজিয়েছেন- পান্থ আফজাল
আজম খান (উচ্চারণ)
মুক্তিযোদ্ধা, পপসম্রাট আজম খান ২০০৩ সালে ‘গডফাদার’ ছবিতে ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’ গানটি করেন। এ ছাড়াও সিনেমায় তিনি ‘আলাল ও দুলাল’ গানটি গেয়েছেন। বেশ কিছু চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয়ও করেছেন।
আইয়ুব বাচ্চু (এলআরবি)
‘লুটতরাজ’ ছবির ‘অনন্ত প্রেম’ থেকে ‘আম্মাজান’ চলচ্চিত্রে আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া ‘আম্মাজান’ গান এখনো সবার মুখে মুখে ফিরে। তাঁর গাওয়া সব গানই পেয়েছে দর্শকপ্রিয়তা। চলচ্চিত্রে গাওয়া আইয়ুব বাচ্চুর উল্লেখযোগ্য গান- ‘সাগরিকা’ ছবির ‘আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে’, ‘ব্যাচেলর’ ছবির ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি প্রেম আমার ওপরে পড়েছে’, ‘লাল বাদশা’ ছবির ‘আরও আগে কেন তুমি এলে না’, ‘তেজী’ ছবিতে ‘এই জগৎ সংসারে তুমি এমনই একজন’, ‘আম্মাজান’ ছবির ‘আম্মাজান’, ‘স্বামী আর স্ত্রী’, ‘তোমার আমার প্রেম এক জনমের নই’, ‘মেয়েরা মাস্তান’ ছবিতে ‘ঘড়ির কাঁটা থেমে থাক’, ‘চোরাবালি’ ছবিতে ‘ভুলে গেছি জুতোটার ফিতেটাও বাঁধতে’ শিরোনামের গান।
জেমস (নগর বাউল)
জেমস গেয়েছেন ‘আসবারকালে’ (মনের সাথে যুদ্ধ), ‘বিধাতা’ (সুইটহার্ট), ‘এত কষ্ট কষ্ট লাগে’ (ওয়ার্নিং)-সহ বেশ কিছু বাংলা চলচ্চিত্রে গান। সৈকত নাসিরের ‘দেশা দ্য লিডার’ সিনেমার ‘পতাকাটা খামচাতে কখনো আসে যদি...’ গানটিতে প্লেব্যাক করার জন্য শ্রেষ্ঠ গায়ক নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৭ সালে হাসিবুর রেজা কল্লোলের ‘সত্তা’ ছবিতে তিনি ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ আমি’ গানটি গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এবং সেই বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও অর্জন করে। ২০০৫ সালে বলিউডে গ্যাংস্টার চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন। চলচ্চিত্রে তাঁর গাওয়া ‘ভিগি ভিগি’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং এক মাসেরও বেশি সময় গানটি বলিউড টপচার্টের শীর্ষে ছিল। ২০০৬ সালে আবারও বলিউডের ছবিতে কণ্ঠ দেন। ২০০৭ সালে তিনি ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’ চলচ্চিত্রে রিশতে এবং আলবিদা গান দুটিতে কণ্ঠ দেন।
বিপ্লব (প্রমিথিউস)
রক ব্যান্ড দল প্রমিথিউসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বিপ্লব একই সঙ্গে সুরকার, গীতিকার, নেপথ্য গায়ক ও অভিনেতা হিসেবেও পরিচিত। ‘গেইম’ চলচ্চিত্রে তিনি খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন। একই বছর মুক্তিপ্রাপ্ত আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত ‘দুই বেয়াইয়ের কীর্তি’র গানের দৃশ্যে বিপ্লব, আজম খান ও হাসান অংশ নেন। ‘মাটির ফুল’ ছবিতে বিপ্লবের গাওয়া এই ‘বুকেতে কষ্ট আছে’ ও ‘ভালোবাসা সর্বনাশা’ গান দুটি জনপ্রিয় হয়।
মাকসুদুল হক (ফিডব্যাক)
আলাউদ্দীন আলীর সুরে ফিডব্যাক ও পরে ঢাকা ব্যান্ডের মাকসুদের প্রথম প্লেব্যাক ছিল অঞ্জলি ছবিতে। গানটির নাম ‘তোমাকে দেখলে একবার মরিতে পারি শতবার’। তরুণদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয় হয় এ গানটি।
সুমন (অর্থহীন)
দেশের শ্রোতাপ্রিয় ব্যান্ড দল অর্থহীনের প্রতিষ্ঠাতা ও দলনেতা সাইদুস সালেহীন খালেদ সুমন। বেজবাবা-খ্যাত সুমন দীর্ঘ সংগীত ক্যারিয়ারে প্রথমবার মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ ছবিতে কণ্ঠ দেন। ইমতিয়াজ বর্ষণ ও শার্লিনের পর্দায় উপস্থিতিতে গানটির নাম ‘প্রথম’।
অর্ণব (অর্ণব অ্যান্ড ফ্রেন্ডস)
শায়ান চৌধুরী অর্ণব। গিয়াসউদ্দিন সেলিমের সুপারহিট ছবি ‘মনপুরা’র সংগীত পরিচালনা করেছিলেন অর্ণব। অন্যদিকে ‘আহা!’ সিনেমায় গান গাওয়া, পরবর্তী সময়ে ‘জাগো’ চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা দিয়েই চলচ্চিত্রের গানে যাত্রা শুরু তাঁর। তারপর ‘কলকাতা কলিং’, ‘দীপ নেভার আগে’ সিনেমার সংগীত পরিচালনা করেছেন। ‘পদ্মপাতার জল’, ‘আইসক্রিম’ ও ‘আয়নাবাজি’ সিনেমার গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন। অর্ণব চলচ্চিত্রে গান কম গাইলেও হয়েছেন প্রশংসিত।
শারমিন সুলতানা সুমি (চিরকুট)
চিরকুট ব্যান্ডের প্রধান গায়িকা সুমি। দলের অধিকাংশ গান সুমির লেখা এবং সুরারোপ করা। টেলিভিশন, আয়নাবাজিসহ আইসক্রিম, ডুব ও ভয়ংকর সুন্দর-এ প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে সুমি আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।
হাসান (আর্ক)
‘জোর যার মুল্লুক তার’ সিনেমায় ব্যান্ড তারকা হাসান গেয়েছিলেন ‘একই আকাশ নীলে’ গানটি। সহশিল্পী ছিলেন মিতালী মুখার্জি। গানটির স্মৃতিচারণা করে হাসান বলেন, ‘শুধু আলাউদ্দীন আলী ভাইয়ের সম্মান রাখতে গানটি গেয়েছিলাম। তাঁকে খুব পছন্দ করতাম। সিনেমায় গান করার কোনো ইচ্ছাই ছিল না।’
পার্থ বড়ুয়া (সোলস)
বাংলা ব্যান্ড সংগীতের অন্যতম নাম পার্থ বড়ুয়া সিনেমায় কিছু গানও করেছেন। ‘মেইড ইন চিটাগং’ সিনেমায় তিনি ‘পেট পুর্যাইদে’ গানটি গেয়েছেন নিশিতা বড়ুয়ার সঙ্গে।