আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনেরও (ইসি) ভোট আয়োজনের সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ হওয়ার পথে। এই নির্বাচনের সময় যখন খুব কাছে, ঠিক তখনই ঢাকার তিনটি ‘বিশেষ’ আসনে বিশেষ উন্নয়ন বরাদ্দ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ২৭৪টি ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৭৩টি প্রতিষ্ঠানই পড়েছে ঢাকার ওই তিনটি সংসদীয় আসন এলাকায়।
ঢাকায় সংসদীয় আসন ২০টি। নির্বাচনের আগে সেখান থেকে কেন শুধু তিনটি এলাকায় এই বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়-এ প্রশ্ন এখন সামনে আসছে। যে ২৭৪টি মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির, শ্মশান ও কবরস্থানে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের অবস্থান এবং বরাদ্দ বিশ্লেষণ করেছে বিবিসি বাংলা।
গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি প্রতিষ্ঠান বাদে বাকি ২৭৩টি প্রতিষ্ঠানের অবস্থানই সংসদীয় আসন ঢাকা-৯, ঢাকা-১০ এবং ঢাকা-১১ এলাকায়। শুধু তিনটি সংসদীয় আসন এলাকায়ই কেন এত বরাদ্দ দেওয়া হলো-এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, ২৭৪টির মধ্যে ১৪৫টি মসজিদ, মাদরাসা ও মন্দিরের অবস্থান ঢাকা-১০ আসনের অন্তর্ভুক্ত ধানমন্ডি, কলাবাগান, হাজারীবাগ এবং নিউমার্কেট এলাকায়।
ঢাকা থেকে নির্বাচন করতে মাত্র সপ্তাহখানেক আগেই স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এই ঢাকা-১০ আসনের ভোটার হয়েছেন। প্রায় কাছাকাছি সময়ে ওই সংসদীয় আসনের মসজিদ, মাদরাসা, মন্দিরে তার মন্ত্রণালয় থেকেই কেন সিংহভাগ বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হলো? জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ দাবি করেন, ওই সব প্রতিষ্ঠানে কাদের সুপারিশে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা তিনি জানেন না।
এদিকে ২৭৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বরাদ্দের বাকি ১২৮টি প্রকল্প অন্য যে দুটি আসনে দেওয়া হয়েছে সেই দুটি হলো-ঢাকা-৯ এবং ঢাকা-১১ আসন। ঢাকার ওই দুটি আসন থেকে আগামী নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা অংশ নিচ্ছেন।
তাহলে কি ছাত্র উপদেষ্টা ও এনসিপি নেতারা ঢাকার যেসব আসনে নির্বাচন করবেন শুধু সেসব এলাকার মসজিদ, মাদরাসায় ভোটের আগে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার সময় তো শেষ হয়ে যায়নি। সারা দেশের অন্য অনেক জায়গায়ও তো বরাদ্দ গেছে।
ডিসেম্বরের শুরুর দিকেই জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পর আর এই ধরনের প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া যায় না। ভোটের আগে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দের নৈতিক ভিত্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তে জেলা পরিষদে এডিপি হিসেবে বিশেষ কিছু আসনের জন্য যে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে তা নিঃসন্দেহে দৃষ্টিকটু।