রাজধানীর ক্লান্তিকর ব্যস্ত জীবনে প্রশান্তির একটু অবসরের জন্য সবাই ব্যাকুল। গতকাল তেমন আয়োজন ছিল ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) হেরিটেজ রেস্টুরেন্টে। সুফিসংগীতের সুরে মুগ্ধ অতিথিরা আপ্যায়নে পেয়েছেন ভিন্ন রকম স্বাদ। সন্ধ্যায় এ রেস্তোরাঁয় আয়োজন করা হয় গ্র্যান্ড সুফি নাইট, যেখানে একসঙ্গে মিশে ছিল সুফিসংগীতের সুর, মোগল আমলের ঐতিহ্য এবং আধুনিকতায় উজ্জ্বল আতিথেয়তা। একই রকম আয়োজন ছিল এক সপ্তাহ আগেও।
রাজকীয় সজ্জা ও ভোজ : রেস্টুরেন্টের প্রবেশদ্বারে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান মোগল পোশাক পরা প্রহরী। দরজা পেরিয়ে ভিতরে ঢুকলে চোখে পড়ে কারুকাজ করা ডাইনিং টেবিল, নরম কুশনে সাজানো আসন আর মৃদু আলোয় তৈরি রাজকীয় আবহ। অতিথিদের পরিবেশিত খাবারও ছিল অনন্য। সবই পরিবেশিত হলো পিতলের থালায়, ঠিক যেমনটা একসময় সম্রাটদের দরবারে হতো।
খাবার পরিবেশন করা হয় থালা হিসেবে। একটি থালায় থাকে কয়েক রকমের মোগলাই পদ। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিককাবাব, শাহি মাটন লেগ রোস্ট, চিকেন হারিয়ালি কাবাব, মোরগ মাসাল্লাম ইত্যাদি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চলে সংগীত ও ভোজ। প্রতিবারের মতো এবারও সুফিগানের পরিবেশনা মুগ্ধ করেছে অতিথিদের। আয়োজকদের ভাষায়, হেরিটেজ রেস্টুরেন্ট শুধু খাবার পরিবেশনের জায়গা নয়, বরং অতীত ও বর্তমানের মিলনস্থল।
সংগীতে ধ্যানের ছোঁয়া : দেখা যায়, মোগল আমলের দরবারে যেমন সংগীতের আসর বসত, হেরিটেজ রেস্টুরেন্টও সেই ধারা অনুসরণ করছে। সুফিসংগীত এখানে শুধু বিনোদন নয়, বরং মনে প্রশান্তি জাগানোর এক বিশেষ ধারা। শিল্পীদের কণ্ঠ ও সুরে অতিথিরা মগ্ন হয়ে পড়েন ভিন্ন জগতে। আয়োজকরা জানান, শুরু থেকেই হেরিটেজ রেস্টুরেন্টের মূল লক্ষ্য ছিল ঐতিহ্য সামনে আনা। স্থাপত্য থেকে অন্দরসজ্জা, খাবার থেকে আতিথেয়তা-সবখানেই মোগলদের ছোঁয়া। তবে এর সঙ্গে আধুনিক সুবিধা সেবার মান আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
আইসিসিবির ভিতরে এ রেস্টুরেন্ট রাজধানীর প্রাণ কেন্দ্রে হলেও এর পরিবেশ প্রশান্তিময়। অতিথিরা জানান, ব্যস্ত নগরের ভিড় থেকে কিছু সময়ের জন্য বেরিয়ে আসতে এ আয়োজন তাঁদের এক অনন্য অভিজ্ঞতা দিয়েছে। পরিবার নিয়ে আসা ব্যবসায়ী আলী আকবর বলেন, ‘আমি আগেও এখানে বন্ধুদের সঙ্গে এসেছিলাম। আজ পরিবার নিয়ে এলাম। এখানে শুধু খাবার নয়, পুরো পরিবেশটাই অন্য রকম। মনে হলো, আমরা যেন সময় ভ্রমণ করে মোগল যুগে চলে গেছি। সুযোগ পেলে আবারও আসার চেষ্টা করব।’ আরেক ব্যবসায়ী মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘পিতলের বাসনে খাবার খাওয়া এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে সুফিগান-এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনো পাইনি।’
আইটি পেশাজীবী সাবরিনা তাসনিম বলেন, ‘কর্মব্যস্ত থাকতে হয়। সারাক্ষণ মোবাইল ফোন, কম্পিউটার আর ইন্টারনেটই হয়ে গেছে জীবন। পরিবার পাশে থেকেও যেন পাশে নেই। অনেক বন্ধুবান্ধব থেকেও যেন গল্প বা আড্ডা দেওয়ার সময় নেই। একটা দীর্ঘ সপ্তাহে অফিসের কাজের চাপে ক্লান্ত মন এখানে এসে প্রশান্তি পেল। সংগীতের সঙ্গে খাবারের এমন আয়োজন আরও হওয়া উচিত।’