দিনদিন জৌলুস হারাচ্ছে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল। একসময়ের জমজমাট টার্মিনালটি সংস্কারের অভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে অঘোষিতভাবে শাহ আমানত সেতু এলাকায় গড়ে উঠেছে বিকল্প টার্মিনাল। যার কারণে জৌলুস হারিয়ে ফেলছে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল। নগরীর প্রবেশমুখ শাহ আমানত সেতু এলাকার এ অঘোষিত টার্মিনালের কারণে নিত্য যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। নগরবাসীর দাবি, শাহ আমানত সেতু এলাকার অঘোষিত টার্মিনালের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। নগরবাসীকে যানজটের ভোগান্তি থেকে মুক্তির জন্য কোনো সংস্থার কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান নেই। ফলে যখন যে ক্ষমতায় থাকে তখন সেই রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রশাসন মিলে অবৈধ টার্মিনাল ঘিরে মাসে চলে কোটি টাকার বেশি নীরব চাঁদাবাজি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন আঞ্চলিক শাখার সভাপতি মো. মুছা বলেন, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল নির্মাণের পর থেকে বড় ধরনের কোনো সংস্কার করা হয়নি। পুরো টার্মিনাল ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ করার কারণে আশপাশ এলাকা থেকে টার্মিনাল এখন প্রায় ৩ ফুট নিচে পড়ে গেছে। এ ছাড়াও টার্মিনালের অর্ধেক অংশে বাইরের গাড়ি, ট্রাক রাখার কারণে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই এখানে চালক-শ্রমিকরা চলাচল করতে পারেন না। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে এখানে যাত্রীরা আসবেন এবং বাস পার্কিং করবে। আমরা বাইরে গাড়ি রাখা বা অবৈধ টার্মিনালের পক্ষে নয়। কারণ বাইরে রাখলে গাড়ির মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরিসহ নানা ঝুঁকি রয়েছে। এ অবস্থায় টার্মিনাল সংস্কারের জন্য আমরা বারবার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আন্দোলন করেছি ও বাস চলাচল বন্ধ রেখেছি। কিন্তু বড় ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যার কারণে দিনদিন এ টার্মিনাল জৌলুস হারিয়ে ফেলছে। এ ছাড়া বাইরে টার্মিনাল তৈরি করার কারণে নগরবাসীর ভোগান্তি বেড়েছে। আমাদের টার্মিনাল যদি সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবহারের উপযোগী করে তাহলে বাইরে কোনো স্টেশন হবে না।
জানা যায়, ১৯৯৫ সালে নগরীর বহদ্দারহাটে নির্মাণ করা হয় এই বাস টার্মিনাল। এ টার্মিনাল থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার বাস চলাচল করত। নগরীর কর্ণফুলী সেতুর পাড় ঘেঁষে মেরিনার্স সড়ক চালু হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে যৌবন হারিয়ে ফেলে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল। মূলত একসময় দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবান থেকে আসা যাত্রীদের শহরের মূল অংশে আসার জন্য বহদ্দারহাট হয়ে প্রবেশ করতে হতো।
ওই সময় চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জ পাথরঘাটা হয়ে সরু সড়ক থাকলেও বাস চলাচল করত না। শাহ আমানত সেতুর পাড় ঘেঁষে মেরিনার্স সড়ক হওয়ার পর থেকে কোতোয়ালি মোড় থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত সংযোগ সড়কটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এরপর ধীরে ধীরে দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী বাসগুলো শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বর এলাকাকে অঘোষিত বাস টার্মিনালে পরিণত করে। সড়কের অর্ধেকের বেশি অংশজুড়ে দখল করে স্টেশন করার কারণে সড়কজুড়ে নিত্য যানজট লেগে থাকে। পাশাপাশি অঘোষিত এ টার্মিনাল ঘিরে বিগত সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা প্রশাসনের সঙ্গে মিলে কোটি টাকার ওপরে মাসে চাঁদাবাজি করেছেন। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিভিন্ন দলের নেতারা সে চাঁদায় ভাগ বসাতে পরিবহন সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে গাড়ি রাখার সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। তাই সব বাস শাহ আমানত সেতু এলাকাজুড়ে পার্কিং করছে। এর ফলে সেখানে যানজট লেগেই থাকে। এ ছাড়াও দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে শহরে প্রবেশ করা আন্তজেলার বাসগুলোর যাত্রীরা আগে বহদ্দারহাট নামতেন। কিন্তু মেরিনার্স সড়ক হওয়ার পর যাত্রীরা এখন শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে ওঠানামা করেন। ফলে কিছু বাস টার্মিনাল এলাকায় গেলেও যাত্রীর জন্য বসে থাকতে হয় শাহ আমানত সেতু এলাকায়। যার কারণে এ এলাকা ঘিরে অঘোষিতভাবে টার্মিনাল তৈরি হয়েছে। ফলে দিনদিন বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালের বেশির ভাগই আন্তজেলার বাস শাহ আমানত সেতু থেকে গন্তব্যে যাচ্ছে। তবে উত্তর চট্টগ্রামের কাপ্তাইগামী বাস এখনো বহদ্দার বাস টার্মিনাল থেকেই যাতায়াত করছে।