শব্দদূষণ একটি নীরব ঘাতক হিসেবে প্রতিনিয়ত মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এই দূষণ রোধে এবং দূষণ সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে একটি সচেতনতামূলক র্যালি।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) বসুন্ধরা ডি ব্লকের বড় মসজিদের সামনে এই র্যালির আয়োজন করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কোয়াইট অ্যান্ড ক্লিন। এতে সংগঠনটির সদস্যদের পাশাপাশি বসুন্ধরা হাউজিং, আপন ফ্যামিলি মার্ট, জেসিএক্স ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, দোয়েল ডেভেলপমেন্ট প্রোপার্টিজ লিমিটেড, এভারকেয়ার হাসপাতাল এবং ওয়ালটন গ্রুপের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন।
র্যালিটি বড় মসজিদের সামনে থেকে শুরু হয়ে প্রধান সড়ক ঘুরে আপন ফ্যামিলি মার্ট হয়ে ক্যাফে লিওতে গিয়ে শেষ হয়। অংশগ্রহণকারীদের হাতে ছিল শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার।
র্যালির শুরুতে বক্তব্য রাখেন এভারকেয়ার হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. নাজিয়া জিহান। তিনি বলেন, শব্দদূষণ গর্ভবতী মায়েদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। গর্ভাবস্থায় শব্দদূষণ মায়েদের শরীরে স্ট্রেস হরমোন অনেক বাড়িয়ে দেয়। যে কারণে তার শরীরে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস, জেস্টেশনাল হাইপারটেনশন এগুলো বাসা বাঁধছে। পরবর্তীতে বাচ্চা প্রসবের সময় কম ওজনের শিশুর জন্ম হচ্ছে, অকাল প্রসব হচ্ছে। গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন-চার মাসের ভেতর মায়ের পেটেই বাচ্চা কানের সবকিছু তৈরি হয়। এ সময় যে মা শব্দদূষণের শিকার হবে, পরবর্তীতে তার বাচ্চা বধির হতে পারে, কানে শোনার গঠন তৈরিতে দেরি হতে পারে। সুতরাং, শব্দদূষণের ক্ষেত্রগুলোতে সর্বক্ষণ হর্ন ব্যবহার করা যাবে না, করলেও একদম কম হর্ন ব্যবহার করতে হবে, কনস্ট্রাকশনের ক্ষেত্রে কম শব্দদূষণ হয় এমন মেশিন ব্যবহার করতে হবে। মায়েদেরও গর্ভধারণের সময় কনসার্ট ও হেডফোনে উচ্চ শব্দে গান শোনা থেকে বিরত থাকতে হবে। আর যেসব শব্দদূষণ এড়ানো যাবে না, সেক্ষেত্রে ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করা যেতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মঞ্জুরে মোর্শেদ বলেন, আমাদের হর্ন দেওয়ার অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের মধ্যে এমন একটি মানসিক প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে, কার গাড়ির হর্ন কত বেশি হবে। এমন একটি ধারণা, গাড়ির হর্ন শক্তিশালী হলে দ্রুত সাইড কেটে চলে যেতে পারবে। এগুলো আমাদের পরিহার করতে হবে। একইসঙ্গে হর্ন যাতে বাজাতে না হয়, সেজন্য কী ধরনের ট্রাফিক সিস্টেম প্রণয়ন করা যায়, সেদিকেও আমাদের মনোযোগী হতে হবে। বাইরের দেশগুলোতে চার রাস্তার মোড়ে আয়না বসানো হয়, যাতে চালকরা দূর থেকেই দেখতে পারে কোনো পাশ দিয়ে গাড়ি আসছে।
শব্দ দূষণ রোধে আয়োজিত এ র্যালির প্রশংসা করে তিনি আরও বলেন, দেশের যেকোনো অগ্রগতিতে বসুন্ধরা সব সময় পথ প্রদর্শক। বসুন্ধরা যদি তাদের আবাসিক এলাকায় পথচারীদের রাস্তা পারাপারের জন্য জেব্রাক্রসিং বা বিদেশের মতো বাটন সিস্টেম করে উদাহরণ সৃষ্টি করে, তাহলে বসুন্ধরার ভেতর তো শব্দ দূষণ কমবেই, পাশাপাশি ঢাকার অন্যান্য এলাকা ও সরকারের জন্যও দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
বসুন্ধরা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশের মানুষের সচেতন হওয়া খুবই জরুরি। আমরা পানি, বায়ু ও শব্দ দূষণের মধ্যে বেঁচে আছি। আমরা যদি নিজেরা সচেতন না হই, তাহলে দূষিত সমাজ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো না। যারা আজকে শব্দদূষণ নিয়ে এ র্যালি আয়োজন করছে, তারা তাদের বোধ থেকে এ আয়োজন করেছে। আমি তাদের সাধুবাদ জানাই। আর আমরা বসুন্ধরাকে ভিন্নভাবে দেখতে চাই। ঢাকার অন্যান্য সোসাইটির চেয়ে বসুন্ধরা অনেক ভালো, অনেক সুন্দর। এখানে চমৎকার সিকিউরিটির ব্যবস্থা আছে। ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া বাস-ট্রাকের মতো অন্যান্য গাড়ি এখানে চলে না। ফলে এখানে দূষণ সৃষ্টির সুযোগ অনেক কম। আমরা যদি সচেতন হই, তাহলে দূষণ আরও কম হবে।
দোয়েল ডেভেলপমেন্ট প্রোপার্টিজ লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম বলেন, বসুন্ধরা ঢাকার অন্যতম গোছানো এলাকা, কিন্তু অপ্রয়োজনীয় হর্ন ব্যবহার পরিবেশকে নষ্ট করছে। এ ধরনের কাজ যাতে না হয়, সেজন্য আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত।
কোয়াইট অ্যান্ড ক্লিনের হেড অব অ্যাডমিন মশিকুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা শব্দদূষণের দিক থেকে বিশ্বের মধ্যে শীর্ষে। আমাদের শহর আমাদেরই ঠিক করতে হবে। বসুন্ধরা আমাদের নিজস্ব এলাকা, তাই আমরা শব্দ দূষণ রোধে সচেতনতা তৈরির কার্যক্রম এখান থেকে শুরু করলাম। আস্তে আস্তে আমরা অন্যান্য আবাসিক এলাকাগুলোতে যাবো। বসুন্ধরা এলাকায় যারা থাকেন, তাদের সবাইকে আমি অনুরোধ জানাবো, গাড়ি চালানোর সময় যতটা সম্ভব হর্ন কম বাজানোর জন্য।
বসুন্ধরা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মোক্তার হোসেন চৌধুরী বলেন, শব্দদূষণ সুস্থ জীবনের জন্য বড় হুমকি। এ দূষণ প্রতিরোধে সময়পযোগী এ র্যালি আয়োজন করার জন্য কোয়াইট অ্যান্ড ক্লিনকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ