এক বুক রঙিন স্বপ্ন নিয়ে মাতৃভূমি ছেড়ে দূরদেশ ওমানে পাড়ি জমিয়েছিলেন তারা। কিন্তু একটি সড়ক দুর্ঘটনা সেই স্বপ্নগুলো নিমিষেই ছিন্নভিন্ন করে দিল। রঙিন স্বপ্ন ফিরল সাদা কফিনে নিথর দেহ হয়ে। ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আট প্রবাসীর মরদেহ একসঙ্গে দেশে ফিরেছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তাঁদের মরদেহ চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে। পরে মরদেহগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বিমানবন্দরে স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে পুরো পরিবেশ। কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকেই। পরে মরদেহগুলো সীতাকুণ্ডের কুমিরা ঘাট হয়ে সন্দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়।
ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- সন্দ্বীপের মোহাম্মদ আমিন (৫০), মো. সাহাবুদ্দিন (২৮), মো. বাবলু (২৮), মো. রকি (২৭), মো. আরজু (২৬), মো. জুয়েল (২৮), মোশারফ হোসেন (২৬) এবং রাউজান উপজেলার চিকদাইর গ্রামের মো. আলাউদ্দিন (২৮)। এর মধ্যে আলাউদ্দিনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় শনিবার রাতে, আর বাকি সাতজনের জানাজা রবিবার সকালে নিজ নিজ গ্রামে সম্পন্ন হয়। জানাজা শেষে তাঁদের দাফন করা হয়। নিহত সাতজনই ওমানে মাছ শিকারের কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল বলেন, শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তাদের মরদেহ চট্টগ্রামে পৌঁছে। পরে স্বজনেরা মরদেহ গ্রহণ করেন।
সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মং চিনু মারমা বলেন, রবিবার সকালে স্বজনরা মরদেহ নিয়ে সন্দ্বীপে পৌঁছান। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টায় পূর্ব সন্দ্বীপ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে একসঙ্গে সবার জানাজা হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। পরে নিজ নিজ গ্রামে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
জানা গেছে, গত ৮ অক্টোবর ওমানের ধুকুম প্রদেশের সিদরা এলাকায় আট প্রবাসীকে বহনকারী একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে অপর একটি গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁরা নিহত হন। নিহত মোহাম্মদ আমিনের নেতৃত্বে তাঁরা সবাই মাছ ধরার পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। সেদিনও সাগরে মাছ ধরে ফেরার পথে দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনার ১০ দিন পর গত শনিবার তাঁদের মরদেহ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।
রবিবার সকালে সাতজনের মরদেহ নেওয়া হয় সীতাকুণ্ডের কুমিরা ঘাটে। সেখান থেকে স্পিডবোটে করে শেষবারের মতো কফিনবন্দি হয়ে সাগর পাড়ি দেন তারা। নিহত রাউজানের আলাউদ্দিনের মরদেহ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় তাঁর বাড়িতে পাঠানো হয়। চোখের সামনে একসঙ্গে এতগুলো কফিন—আহাজারিতে ভরে ওঠে ঘাটপাড়। কান্নায় ভিজে যায় নৌযানের মাঝিমাল্লা, গ্রামবাসী, আর দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা মানুষজন।
বিডি-প্রতিদিনি/মাইনুল