‘গত বছরের নভেম্বরে আমার বাবা মারা যান। তার লাশ দাফনের জন্য বিভিন্ন কবরস্থানে ঘুরেছি, জায়গা পাইনি। এমনকি আইটিও-তে দিল্লি গেটের কাছে বৃহত্তম মুসলিম কবরস্থানে গেলেও জানানো হয় যে, জমি ফাঁকা নেই।’ কথাগুলো বলছিলেন জামা মসজিদ এলাকার বাসিন্দা আবরার আলী। শুধু তিনিই নন, প্রিয়জনকে হারানোর পর সমাহিত করার জন্য দুই গজ জায়গা খুঁজে পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দিল্লির অনেক মুসলিমকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নগরায়ণ, দখলদারি ও অবহেলাই কবরস্থানের জায়গা সংকটের কারণ। দিল্লি-ভিত্তিক হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির একটি গবেষণা অনুযায়ী, দিল্লিতে ১৩১টি কবরস্থান রয়েছে। একটি পুরোপুরি চালু, ৩২টিতে কোনো ফাঁকা জায়গা নেই, ব্যবহার করা হয় না ১৬টি, ৪৩টি দখলে। অন্যদিকে দিল্লি ওয়াকফ বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী ৬২৪টি কবরস্থান রয়েছে। এই সরকারি রেকর্ড ও বাস্তবতার ব্যবধানই প্রমাণ করে কীভাবে একাধিক জায়গা অদৃশ্য হয়ে গেছে। ওই গবেষণায় তুলে ধরা হয়, ওখলার মতো মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাতে কবরস্থানে জায়গা পেতে রীতিমতো লড়াই করতে হয়। বাটলা হাউস মুসলিম কবরস্থানের কেয়ারটেকার শাকিল বলেন, বাটলা হাউস কবরস্থানে কোনো জায়গা নেই। প্রতিদিন এটি সংকুচিত হচ্ছে। আশপাশের বাসিন্দারা প্রিয়জন কবর দিতে অন্য এলাকায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এসবকিছুর পিছনে রয়েছে জবরদখল। অনেক কবরস্থানের জমি দখল হয়ে আবাসিক কলোনি, সরকারি অফিস, রাস্তা, পার্ক এবং কমপ্লেক্স গড়ে উঠেছে।
হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি সতর্ক করেছে, বিদ্যমান কবরস্থানগুলোতে যে অবশিষ্ট জায়গা আছে তাতে দাফনের জন্য বড়জোর আরও দুই বছরের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এখনি জরুরি ব্যবস্থা না নিলে মুসলিম সম্প্রদায়ের কবরস্থান সম্পূর্ণরূপে ফুরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দিল্লি সংখ্যালঘু কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. জাফরুল-ইসলাম খান বলেন, সরকারি এবং বেসরকারি উভয় সংস্থাই কবরস্থান দখল করেছে। সমাজকর্মীরা বলছেন, সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যমান কবরস্থানগুলো রক্ষা করতে হবে, পরিত্যক্ত কবরস্থানগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে এবং নগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় কবরস্থানের জন্য জমি বরাদ্দ করতে হবে। ইসমাইল নামে পুরাতন দিল্লির একজন সমাজকর্মী বলেন, দিল্লিতে বর্তমানে খুব কম সংখ্যক মসজিদ খোলা রয়েছে। এখন আবার কবরস্থানগুলোও সংকুচিত হচ্ছে এবং দখল করা হচ্ছে। এটি সম্পূর্ণভাবে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় বিশ্বাস লঙ্ঘন করার শামিল।