ইউক্রেনে টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাতে প্রস্তুত নন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন আভাস দেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে দৃশ্যত ‘শূন্য হাতেই’ হোয়াইট হাউসের বৈঠক থেকে ফিরতে হয়েছে। বৈঠকের পর ইউক্রেনের এ প্রেসিডেন্ট টমাহক প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে বলেছেন, বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিনি ও ট্রাম্প দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে কথা বললেও এ বিষয়ে মন্তব্য না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কারণ উত্তেজনা বাড়ুক এমনটা চায় না যুক্তরাষ্ট্র।
পরে ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া পোস্টে কিয়েভ ও মস্কোকে ‘যেখানে আছে সেখানে থামতে’ ও যুদ্ধ বন্ধ করতে আহ্বান জানান বলে জানিয়েছে বিবিসি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফোনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলার এক দিন পর হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকটি হলো। ফোনালাপে ট্রাম্প ও পুতিন হাঙ্গেরিতে শিগগিরই বৈঠকে বসার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন। জেলেনস্কির ধারণা, টমাহক দিয়ে রাশিয়ার তেল ও জ্বালানি স্থাপনায় হামলা চালানো গেলে তা পুতিনের যুদ্ধ অর্থনীতিকে বেকায়দায় ফেলবে। সে সম্ভাবনা উড়িয়ে না দিলেও শুক্রবার ট্রাম্প দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রটি ইউক্রেনকে দেওয়া হবে-এমন প্রতিশ্রুতি দিতে পারেননি। ‘আশা করছি তাদের এটা দরকার হবে না। টমাহকের কথা ভাবা ছাড়াই আমরা যুদ্ধ শেষ করতে পারব বলে আশা করছি,’ বলেছেন ট্রাম্প। এই ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রটি যুক্তরাষ্ট্রের বেশি দরকার বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। ‘এই ক্ষেপণাস্ত্র পাঠালে উত্তেজনা বেড়ে যেতে পারে, তবে আমরা এ নিয়ে কথা বলব,’ বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
টমাহকের কল্যাণেই পুতিন তড়িঘড়ি ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করছেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি ভালো, কিন্তু সেই হুমকি তো সবসময় থাকেই।’ যুক্তরাষ্ট্র টমাহক দিলে তার বদলে ইউক্রেন ড্রোন দিতে পারে-জেলেনস্কির এমন ইঙ্গিতে ট্রাম্পকে হাসতে ও মাথা নেড়ে সম্মতি দিতে দেখা গেছে। গাজায় শান্তি চুক্তির প্রথম পর্যায় নিশ্চিত করতে পারায় ট্রাম্পের প্রশংসাও করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। এই ‘মোমেন্টাম’কে কাজে লাগিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনে যুদ্ধ থামাতে পারবেন বলেও তার আশা। হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে হতে যাওয়া বৈঠকে পুতিন কী চুক্তি করতে চাইবেন নাকি এর মাধ্যমে তিনি সময় নষ্ট করার চেষ্টা করবেন, কী মনে করছেন-বৈঠকের পর হোয়াইট হাউসের বাইরে এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি জানি না। তবে ইউক্রেনের টমাহক পাওয়ার সম্ভাবনা রাশিয়াকে ভীত করেছে, কারণ এটি বেশ শক্তিশালী অস্ত্র।’ ইউক্রেন শেষ পর্যন্ত টমাহক পাবে-এ ব্যাপারে আশাবাদী কি না জানতে চাওয়া হলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি বাস্তববাদী।’ এদিকে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে একটি রাসায়নিক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হয়েছেন। গতকাল আঞ্চলিক গভর্নর এ তথ্য জানিয়েছেন, তবে বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে কিছু জানাননি। রাশিয়ার বাশকোরতোস্তান অঞ্চলের স্টারলিটামাকে অবস্থিত ‘আভানগার্ড’ নামক কারখানাটি অস্ত্র ও গোলাবারুদ উৎপাদন করে, যা ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য ব্যবহৃত হয়, রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলো এমন তথ্য জানিয়েছে। -রয়টার্স ও এএফপি
এক মাস আগে একই অঞ্চলে একটি বড় তেল শোধনাগারে ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছিল। বাশকোরতোস্তানের গভর্নর রাদিয় খাবিরোভ গতকাল টেলিগ্রামে জানান, অত্যন্ত শক্তিশালী বিস্ফোরণে কারখানার একটি ভবন ধ্বংস হয়ে যায় এবং এতে তিনজন নারী নিহত হন। তিনি আরও জানান, বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন পাঁচজন, যাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর।