ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের ৩৯তম ওভারের শেষ বলটি অফ স্ট্যাম্পের বাইরে ফেলেন রিশাদ হোসেন। গুগলি বলটি হালকা টার্নে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে ড্রাইভ খেলেন জায়দান সিলস। বল ব্যাটের কানায় লেগে প্রথম স্লিপে অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজের তালুবন্দি হয়। সিলস আউট। অলআউট ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিলসের উইকেটটি ছিল রিশাদের ম্যাচের ৬ নম্বর উইকেট। দীর্ঘকায় রিশাদের লেগ স্পিনের মায়াবী জালে ৩৯ ওভারে ক্যারিবীয়রা অলআউট মাত্র ১৩৩ রানে। মিরপুরের রহস্যময় কালো মাটির উইকেটে ৭৪ রানে বাংলাদেশ তুলে নেয় সহজ জয়। এই জয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে এগিয়েই যায়নি টাইগাররা, নেতৃত্বের দোলাচলে দুলতে থাকা অধিনায়ক মিরাজ হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। ২১ অক্টোবর দ্বিতীয় ম্যাচটি বাংলাদেশ যদি জিতে যায়, তাহলে এ যাত্রায় নেতৃত্বও বেঁচে যাবে মিরাজের। অধিনায়ক মিরাজ ১১ ম্যাচে মাত্র দ্বিতীয় জয় পেয়েছেন। সব মিলিয়ে সর্বশেষ ১৩ ম্যাচে বাংলাদেশের এটা দ্বিতীয় জয়। বাংলাদেশের প্রথম স্পিনার হিসেবে রিশাদ ৬ উইকেট নেন এক ম্যাচে। এর আগে স্পিনার হিসেবে সেরা বোলিং স্পেল ছিল বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের, ২০২২ সালের জুলাইয়ে প্রোভিডেন্সে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৮ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। টাইগারদের সেরা বোলিং স্পেল সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার কেনিয়ার বিপক্ষে ২৬ রানে ৬ উইকেট ২০০৬ সালে নাইরোবিতে। মিরপুরে সেরা বোলিং পেসার রুবেল হোসেনের নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৩ সালে ২৬ রানে ৬ উইকেট। ম্যাচসেরা রিশাদের বোলিং স্পেল ৯-০-৩৫-৬।
ম্যাচের আগের দিন উইকেটের ওপর চটের কাভার সরিয়ে চোখ ছানাবড়া হয়ে গিয়েছিল সফরকারী কোচ ড্যারেন স্যামির। সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়ানো স্যামি বিপিএলে খেলেছেন। এখানকার উইকেট সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রয়েছে ক্যারিবীয় কোচের। ম্যাচের আগের দিন কালো মাটির উইকেট দেখে বিস্মিত স্যামি বলেছিলেন, এমন কালো উইকেট তিনি কখনোই দেখেননি। ম্যাচ শুরুর আগে গতকাল উইকেটের কাটাছেঁড়া করেন শ্রীলঙ্কার সাবেক অলরাউন্ডার ফারভিজ মাহারুফ। কালো রঙের উইকেট তিনিও দেখেননি বলেন। আলোচিত সেই উইকেটে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি খেলেছে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে মিরাজ বাহিনীর সংগ্রহ ছিল ৪৯.৪ ওভারে ২০৭ রান। কালো উইকেটে মানিয়ে নিতে ব্যাট হাতে লড়াই করেছেন তাওহীদ হৃদয়রা। এতটাই ধীরলয়ে ব্যাটিং করেছে মিরাজ বাহিনী, ইনিংসে ২৯৮ বল খেলে ডটবল খেলেছে ১৮৩! অবিশ্বাস্য! যা মোট বলের ৬০.৪০ শতাংশ। ইনিংসটিতে টাইগার ব্যাটাররা চার মেরেছেন ১৩টি ও ছক্কা ৩টি। আশ্চর্য হলেও সত্যি, বাংলাদেশ ইনিংসেও প্রথম ছক্কা মারেন রিশাদ হোসেন ৪৮তম ওভারে। মিরাজ বাহিনীর ছক্কা তিনটিই এসেছে শেষ দুই ওভারে।
লিটন দাসের ইনজুরিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজে নেতৃত্ব দিয়েছেন জাকের আলি অনীক। টি-২০ এশিয়া কাপের সুপার ফোরের শেষ দুটি ম্যাচের অধিনায়কও ছিলেন তিনি। দায়িত্ব পেয়ে হঠাৎ ছন্দ হারিয়ে ফেলেন জাকের। ছন্দ হারানো জাকেরকে গতকাল খেলায়নি টিম ম্যানেজমেন্ট। তার জায়গায় ১৫৪ নম্বর ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে অভিষেক হয় মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-২০ স্কোয়াডে থাকার পরও ভিসা জটিলতায় শারজাহতে যেতে পারেননি সৌম্য সরকার। এবার সুযোগ পেয়েছেন ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে। ব্যর্থ হয়েছেন। দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও সৌম্য সাজঘরে ফেরেন ইনিংস শুরুর ১৩ বলে। ৮ রানে ২ উইকেটের পতনের পর তৃতীয় জুটিতে ৭১ রান যোগ করেন সাবেক অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহীদ হৃদয়। ৬৩ বলে ৩২ রান করে পিরেকে সুইপ খেলে লেগ বিফোর হন নাজমুল। হাফ সেঞ্চুরি করেন ছন্দে থাকা হৃদয়। ৯০ বলে ৩ চারে ৫১ রানের ইনিংসটি হৃদয়ের ৪২ ম্যাচের ১১তম হাফ সেঞ্চুরি। সর্বশেষ ১০ ম্যাচে হৃদয়ের এটি চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরি করেন ভারতের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে।
তানজিদ তামিমের পরিবর্তে অঙ্কন ৪৬ রানের প্রত্যয়ী ইনিংস খেলেন ৭৬ বলে ৩ চারে। শেষ দিকে রিশাদের ১৩ বলে ২০০ স্ট্রাইক রেটে ২ ছক্কা ও ১ চারে ২৬ রানে ভর করে ২০৭ রান করে স্বাগতিকরা। বাংলাদেশ সর্বশেষ ১১ ইনিংসে ৯ বার পুরো ৫০ ওভার ব্যাটিং করতে পারেনি। প্রথম ব্যাটিংয়ে ২০৭ বা তার চেয়েও কম রান করে বাংলাদেশের জয় রয়েছে ৩টি। সর্বনিম্ন ১৭৪ রান করে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছিল ২০১০ সালে রুবেল হোসেনের বিধ্বংসী বোলিংয়ে। গতকাল জিতল রিশাদের বোলিংয়ে। তাকে সহায়তা করেন মুস্তাফিজুর রহমান, মিরাজ ও তানভির ইসলাম।