দুই বন্ধুর এক সঙ্গে বেড়ে উঠা সেই স্কুল থেকে। ইস্পাহানি স্কুল অ্যান্ড কলেজের বারান্দায় সহপাঠীরা যখন হৈ চৈ করে ব্যস্ত, ঠিক তখন এই দুই বন্ধুর ঝোঁক প্রযুক্তির দিকে। একজনের নাম এস এম রিফাত, আরেকজনের নাম নাওশাদ আরেফিন। বাংলাদেশে অনলাইন শপিং অভিজ্ঞতায় নতুন এক ধারণা নিয়ে হাজির হয়েছেন এই দুই তরুণ। নাম ‘ইয়্যামেজিং’।
রিফাতের বাবা ছিলেন সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা। থাকতেন চট্টগ্রামের নাসিরাবাদের বাসায়। প্রায় ১৬ বছর কেটেছে চট্টগ্রামের আলো বাতাসে রিফাতদের। আর নওশাদের বাবা ছিলেন চট্টগ্রাম ওয়াসার ইঞ্জিনিয়ার। জামাল খান বাসা। বিকাল হলেই দুই বন্ধু মিলে যুক্তি করতেন একদিন প্রযুক্তির বদৌলতে তরুণদের জন্য কিছু করবেন। হয়েছেও তাই।
ইয়্যামেজিং- মূলত একটি লয়ালটি ক্যাশব্যাক-ভিত্তিক সাশ্রয়ী স্মার্ট প্ল্যাটফর্ম, যা একই সঙ্গে ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীদের জন্য এনে দিচ্ছে সুবিধা ও সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত।
গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছে ইয়্যামেজিং। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা অ্যাপে লগইন করে দেখতে পাবেন প্রতিদিনের ডিল, চ্যাট করতে পারেন মার্চেন্টদের সঙ্গে, অর্ডার দিতে পারেন, এমনকি ইন-স্টোর কেনাকাটার পরও পেতে পারেন ক্যাশব্যাক। সবচেয়ে বড় কথা, এই ক্যাশব্যাক সরাসরি চলে যাবে ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্টে।
প্ল্যাটফর্মটির আরেকটি বড় দিক হলো- ইয়্যামেজিং নিজে কোনো পণ্য মজুত করে না, পেমেন্টও হ্যান্ডল করে না। ব্যবসায়ীরা সরাসরি গ্রাহকদের থেকে পেমেন্ট পান এবং নিজেরাই ইনভেন্টরি ও ডেলিভারি কন্ট্রোল করেন। ফলে তারা তাদের মূলধন আটকে না রেখে ব্যবসার গতি ধরে রাখতে পারেন। এই অভিনব উদ্যোগের পেছনে আছেন কানাডিয়ান-বাংলাদেশি উদ্যোক্তা এস এম রিফাত। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) থেকে স্নাতক শেষে কানাডায় পাড়ি জমান তিনি। সেদেশে স্নাতকোত্তর শেষে চাকরিও শুরু করেছিলেন এই তরুণ। এরই মধ্যে একবার দেশে বেড়াতে এসে রিফাত উপলব্ধি করেন- বাংলাদেশে লয়ালটি মার্কেটের বিশাল সম্ভাবনা আছে। এরপর শৈশবের বন্ধু, আইবিএ ও বুয়েট থেকে পড়াশোনা করা নওশাদ আরেফিনকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করেন পথচলা। দীর্ঘ প্রস্তুতির পর চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি শুরু হয় দুই বন্ধুর স্বপ্নের উড়াল। ওইদিন থেকে গুগল প্লে স্টোর ও অ্যাপল স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে ইয়্যামেজিং-অ্যাপটি। শুরুতেই ব্যাপক সাড়াও মেলে। এক মাসের মধ্যেই অ্যাপটি এক হাজারেরও বেশি ডাউনলোড হয়। মাত্র একটি ভাইরাল পোস্টে ৬০ হাজার টাকার ক্যাশব্যাক পাওয়ার গল্প মানুষকে বেশ আকৃষ্ট করে। এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীরা এতটাই সন্তুষ্ট যে, তাঁরা বলছেন ইয়্যামেজিং কেবল একটি অ্যাপ নয়- এটি একটি ‘অ্যামেইজিং’ অভিজ্ঞতা। এটি দেশের শপিং সংস্কৃতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
ইয়্যামেজিং-এর এগিয়ে যাওয়ার গল্প শুনিয়েছেন এস এম রিফাত। তিনি বলেন, ‘বিদেশে বেশ ভালো চাকরি করলেও মনটা পড়ে থাকতো দেশে। একবার ঘুরতে এসে দেশেই কিছু করার তাগাদা অনুভব করি। সেই ভাবনার সঙ্গে যুক্ত করি বন্ধু নওশাদকেও। প্ল্যাটফর্মটি চালুর শুরুতেই ব্যাপক সাড়া পাই। এই সাফল্য প্রমাণ করে, বাংলাদেশে লয়ালটি প্ল্যাটফর্মের বিশাল চাহিদা। আমাদের যাত্রা কেবল শুরু হলো। প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রম সম্প্রসারণ, ব্যবহারকারীদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি এবং প্রিমিয়াম মার্চেন্টদের যুক্ত করা আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে প্ল্যাটফর্মকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া আমাদের স্বপ্ন।’
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ