এইচএসসি পরীক্ষায় বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটিই কমেছে। তবুও ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউনুস আলী সিদ্দিকী।
বৃহস্পতিবার সকালে বোর্ডের সভাকক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন তিনি। ঘোষিত ফল অনুযায়ী, বরিশাল বোর্ডের পাসের হার ৬২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৬৭ জন শিক্ষার্থী। গত বছর পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৪ হাজার ১৬৭ জন শিক্ষার্থী।
ফলাফল ঘোষণার পর বোর্ড চেয়ারম্যান ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। সেখানে দেশের শিক্ষার প্রকৃত অবস্থা জানতে চাওয়া হয় এবং নির্দেশনা দেওয়া হয় সব পাবলিক পরীক্ষা কঠোরভাবে নেওয়ার জন্য। পরীক্ষা সুষ্ঠু ও নকলমুক্ত পরিবেশে সম্পন্ন করতে এবং সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়। আমরা চেষ্টা করেছি যেন অতিমূল্যায়ন বা অবমূল্যায়ন না হয়। শিক্ষার্থীরা যতটুকু লিখেছে, ততটুকুই নম্বর পেয়েছে। সেই কারণে পাসের হার কিছুটা কমেছে। তবে অন্যান্য বোর্ডের ফলের সঙ্গে তুলনা করলে বরিশাল বোর্ডের ফলাফল নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট।
তিনি আরও বলেন, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেননি, তাদের প্রধানদের আগামী রবিবার বা সোমবারের মধ্যে ডাকা হবে। তারা সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিলের সুপারিশ করা হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
ঘোষিত ফল অনুযায়ী, এ বছর পরীক্ষায় অংশ নেয় ৫৯ হাজার ২৩৯ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ২৭ হাজার ৮৩৭ জন এবং ছাত্রী ৩১ হাজার ৪০২ জন। পাস করেছে মোট ৩৭ হাজার ৬৬ জন, যার মধ্যে ছাত্র ১৪ হাজার ৬৪২ জন ও ছাত্রী ২২ হাজার ৪২৪ জন।
বিভাগের ছয় জেলার মধ্যে পাসের হারে বরিশাল জেলা এগিয়ে এবং বরগুনা জেলা সবচেয়ে পিছিয়ে। বরিশাল জেলায় পাসের হার ৬৮ দশমিক ১৬ শতাংশ, বরগুনায় ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ, পিরোজপুরে ৬৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ, ভোলায় ৬২ দশমিক ৯৮ শতাংশ, ঝালকাঠিতে ৫৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ, পটুয়াখালীতে ৫৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ,
এ বছর বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ও জিপিএ-৫ উভয় ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৭১ দশমিক ৫৮ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৮০৬ জন (ছেলে ৩২৪, মেয়ে ৪৮২ জন)। মানবিক বিভাগে পাসের হার ৬০ দশমিক ২১ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৭৭৭ জন (ছেলে ১১১, মেয়ে ৬৬৬ জন) ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৬২ দশমিক ০৪ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯১ জন (ছেলে ২২, মেয়ে ৬৯ জন)।
তিন বিভাগ মিলিয়ে দেখা যায়- ছাত্রীদের পাসের হার ৭১ দশমিক ৪১ শতাংশ, আর ছেলেদের পাসের হার ৫২ দশমিক ৬০ শতাংশ। এ বছর ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষার্থী পাস করেননি, আর দুটি প্রতিষ্ঠানে শতভাগ পাস করেছে।
যেসব প্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করতে পারেনি সেগুলো হলো- বরগুনার বামনা সরকারি সারওয়ারজান পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, বরিশাল সদরের কমার্স কলেজ, বাবুগঞ্জের মোহনগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মেহেন্দিগঞ্জের আন্ধারমানিক ইউনিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভোলার দেলুয়া তালুকদারবাড়ি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, লালমোহনের বালুরচর দালালবাজার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভোলা সদরের ভাষা শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয় ও মেদুয়া কলেজ, ঝালকাঠির রাঙ্গাপাশা সেকেন্ডারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও আব্দুস সালাম কলেজ, পটুয়াখালী সদরের আউলিয়াপুর সাবিনা আক্তার হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং দুমকি উপজেলার দুমকি নাছিমা কেয়ামত আলী মহিলা কলেজ।
এছাড়া, ৫০ শতাংশের ওপরে পাস করেছে ১৯৭টি কলেজে এবং ৫০ শতাংশের নিচে পাস করেছে ১৩৮টি কলেজে। এর মধ্যে ২০ শতাংশের নিচে ছয়টি, ১৫ শতাংশের নিচে ছয়টি এবং ১০ শতাংশের নিচে দুটি কলেজে শিক্ষার্থীরা পাস করেছে।
বিডি-প্রতিদিন/মাইনুল