রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যদি ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ না করেন, তবে কিয়েভকে দূরপাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্বাগত জানালেও পরিণতি সম্পর্কে কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছে রাশিয়া।
টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার। এ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোসহ দেশটির গভীরে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা সম্ভব। এদিকে, রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের উপ-প্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেনকে দূরপাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেয়, তাহলে তা ট্রাম্পসহ সবার জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। তিনি এক টেলিগ্রাম বার্তায় লিখেছেন, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে পারমাণবিক বা সাধারণ ওয়ারহেডযুক্ত সংস্করণের কোনো স্পষ্ট পার্থক্য নেই, তাহলে রাশিয়ার পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়াটা কেমন হবে? ঠিক একই রকম। তার এই বক্তব্যটি মস্কোর সম্ভাব্য পারমাণবিক প্রতিক্রিয়ার ইঙ্গিত বহন করছে।
এদিকে, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যানশিয়াল টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র মাত্র ৫০টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনে পাঠাবে, যা যুদ্ধের গতিপথ বদলানোর জন্য যথেষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের (পেন্টাগন) সাবেক কর্মকর্তা মার্ক ক্যানসিয়ান বলেছেন, আমেরিকার কাছে মোট ৪১৫০টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ আছে। কিন্তু তারা কেবল সীমিত সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্রই ইউক্রেনকে দিতে সক্ষম। অন্যদিকে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো মঙ্গলবার সতর্ক করে বলেছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করে, তবে তা সরাসরি পারমাণবিক যুদ্ধের সূচনা করবে। আর পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদোসওয়াফ সিকোরস্কি বলেছেন, ইউরোপকে রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। তিনি ইউরোপের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদার না করা এবং পূর্ব সীমান্তে ড্রোন প্রতিরক্ষা প্রাচীর গঠনে বিলম্ব করাকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীনতা’ বলে আখ্যায়িত করেন এবং ইউক্রেনের প্রতি ধারাবাহিক সমর্থনের আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইউক্রেনকে রাশিয়ার অবকাঠামোতে হামলার জন্য দূরপাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা।
এদিকে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি জানিয়েছেন, ২০২৫ সালে লন্ডন ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর জন্য ড্রোন উৎপাদন ও সরবরাহ ত্বরান্বিত করতে ৬০ কোটি পাউন্ড বিনিয়োগ করবে। তিনি জানান, গত ছয় মাসে যুক্তরাজ্য ইউক্রেনকে ৮৫ হাজারেরও বেশি সামরিক ড্রোন দিয়েছে। রুশ সামরিক তৎপরতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই হুমকির জবাবে ড্রোন উৎপাদন বাড়াতে হবে এবং ন্যাটো সদস্যদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। এদিকে ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফ একটি অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, রুশ যুদ্ধবিমান যদি তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে, তাহলে যাতে সেটিকে ‘বৈধ লক্ষ্যবস্তু’ হিসেবে ধ্বংস করা সহজ হয়, তা নিয়েই আলোচনা করছে ন্যাটো সদস্যরা।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইউক্রেনকে ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করবে না বরং তা পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোকে সরবরাহ করবে। এ জোটের পক্ষ থেকে তা ইউক্রেনকে দেওয়া হতে পারে। ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেন, 'রাশিয়া কী চাইবে তার দিকে টমাহক ধেয়ে যাক? আমি তা মনে করি না।' সূত্র: ফিন্যানশিয়াল টাইমস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, দ্য হিল
বিডি প্রতিদিন/এএম