শিক্ষাঙ্গনে মানবাধিকার রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখা তরুণদের দক্ষতা ও সচেতনতা বাড়াতে অ্যাডভোকেসি, তথ্য সংগ্রহ, নিরাপত্তা কৌশল ও সংগঠিত প্রতিরোধ গঠনের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত হয়েছে দিনব্যাপী কর্মশালা।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী কলা অনুষদ সভাকক্ষে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান সহিংসতা, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষাপটে 'সোচ্চার-টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশ' 'এমপাওয়ারিং ক্যাম্পাস হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স: ন্যাশনাল ওয়ার্কশপ অন এডভোকেসি অ্যান্ড অ্যাকশন' শীর্ষক দিনব্যাপী জাতীয় কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালায় দেশের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নির্বাচিত ৪৫ জন মানবাধিকার সচেতন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। মানবাধিকার রক্ষায় ক্যাম্পাসভিত্তিক অ্যাডভোকেসি, সহিংসতা প্রতিরোধ, আইনি সহায়তা, ট্রমা ম্যানেজমেন্ট এবং গবেষণার ভূমিকা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়। এতে দেশের খ্যাতনামা মানবাধিকারকর্মী, গবেষক, আইনজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
কর্মশালায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ বাংলাদেশের সিনিয়র মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান, ইউনিভার্সিটি অব রেজাইনা কানাডার সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ।
জাতিসংঘ বাংলাদেশের সিনিয়র মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান বলেন, তরুণ শিক্ষার্থীরা কেবল ভবিষ্যতের নেতাই নয়- তারা ইতিমধ্যেই পরিবর্তনের কারিগর। আজকের কর্মশালা তাদের সাহস এবং অঙ্গীকারের প্রমাণ। জাতিসংঘ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে মানবাধিকার শুরু হয় শ্রেণিকক্ষে, ক্যাম্পাসের করিডোরে এবং প্রতিটি কণ্ঠস্বর থেকে যা নীরব হতে অস্বীকার করে। আমাদের এই রক্ষকদের কথা শোনা, সমর্থন করা এবং ক্ষমতায়িত করা নিশ্চিত করতে হবে।
ড. মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যেই আছে সমাজ পরিবর্তনের শক্তি। আজকের কর্মশালায় যে গভীর সচেতনতা ও বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি দেখা গেছে, তা প্রমাণ করে- বিশ্ববিদ্যালয় মানেই কেবল জ্ঞানচর্চা নয়, বরং মানবিক মূল্যবোধের চর্চারও কেন্দ্রবিন্দু।
কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন সিভিক ইয়ুথ বাংলাদেশের জাতীয় সমন্বয়ক রাকিবুল ইসলাম খান, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির গবেষণা কর্মকর্তা তামিম খান, সোচ্চার লিগ্যাল সাপোর্ট বিভাগের ডিরেক্টর ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার শাইখ মাহদি, সোচ্চার ট্রমা ম্যানেজমেন্ট ও সাপোর্ট বিভাগের সহকারি ডিরেক্টর, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সুমাইয়া তাসনিম, এবং সোচ্চারের প্রজেক্ট ম্যানেজার, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের রিসার্চ ফেলো সুমাইয়া তামান্না।
ব্যারিস্টার শাইখ মাহদি বলেন,অধিকার আদায়ের জন্য সঠিক আইনি জ্ঞান ও কৌশল জানা জরুরি। কর্মশালায় আমরা শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসভিত্তিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কীভাবে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা হাতে-কলমে দেখিয়েছি।
তিনি বলেন, অধিকাংশ সহিংসতার পেছনে অব্যক্ত মানসিক ক্ষত থাকে। ট্রমা ম্যানেজমেন্টের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করে আজ আমরা দেখেছি, কেবল শারীরিক নয়, মানসিক সহায়তাও মানবাধিকার রক্ষার অপরিহার্য অংশ। সোচ্চার টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, একটি অধিকারের ক্যাম্পাসই পারে একটি অধিকারের সমাজ গড়ে তুলতে। এই কর্মশালা সেই সমাজ গঠনেরই একটি সাহসী পদক্ষেপ।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত