২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি সারা দেশের ১০৪ জন দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী হাজির হয়েছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘ কার্যালয়ে। তাঁদের প্রত্যেকেই এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। সঙ্গে এসেছেন তাঁদের বাবা কিংবা মা, কারও সঙ্গে আবার বড় ভাই অথবা বড়বোন। কঠিন দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে উঠে আসা এই মেধাবীদের কলেজে ভর্তিসহ পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছিল বসুন্ধরা গ্রুপ। সেদিন প্রত্যেককে কলেজে ভর্তি ও অন্যান্য খরচ বাবদ নগদ ২৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছিল। এরপর থেকে প্রতি মাসে তাদের বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দেওয়া হতো। এতে করে নিশ্চিন্তে পড়াশোনা চালিয়ে গেছে সবাই। সেই ১০৪ জনের মধ্যে অনেকেই এবার দেশসেরা নানা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে ভর্তির সুযোগপ্রাপ্ত হয়েছে। এখনো তারা প্রতিমাসে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে টাকা পাচ্ছে। পড়াশোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই মেধাবীদের পাশে থাকবে বসুন্ধরা গ্রুপ। শত বাধা পেরিয়ে উচ্চশিক্ষার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানো কয়েকজন মেধাবীর অনুভূতি নিয়ে এবারের আয়োজন-
এই সহযোগিতা না পেলে পড়াশোনাই থেমে যেত
হরিবল বোনার্জী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগপ্রাপ্ত
আমি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার হুগলীছড়া চা বাগানে থাকি আমরা। বাবা একজন দরিদ্র চা শ্রমিক। বাবার দৈনিক মজুরি মাত্র ১৭৮ টাকা। ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করতে হয়েছে আমাকে। শুধু মাধ্যমিক পর্যন্তই দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পড়াশোনার সুযোগ করে দিয়েছিল সরকার থেকে। সেজন্য মাধ্যমিকে যথেষ্ট ভালো ফলাফল করার পরও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছিলাম। আর্থিক সমস্যা, বইয়ের সংকট সবমিলিয়ে আমার জীবনের কঠিন দুঃসময় চলছিল। আমার এই কঠিনতম খারাপ সময়ে সর্বপ্রথম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে বসুন্ধরা শুভসংঘ। বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে আমাকে ভর্তির জন্য এককালীন ২৫,০০০ টাকা দেওয়া হয়। সেদিন সারা দেশে ১০৪ জন দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীকে ভর্তির টাকা দেওয়া হয়েছিল। পড়াশোনা নির্বিঘ্নে চালানোর জন্য আমাদের সবাইকে মাসিক বৃত্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই থেকে শুরু, এখনো চলছে। এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। এখনো প্রতিমাসে বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে বৃত্তির টাকা পাই। তাদের আর্থিক সহযোগিতার কারণেই বই রেকর্ড শ্রুতি লেখকের খরচসহ কলেজের যাবতীয় পড়াশোনার খরচ চালাতে সক্ষম হই। এই সহযোগিতা না পেলে হয়তো উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনাই থেমে যেত। হয়তো আর পড়াশোনাই করতে পারতাম না। দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এই মহৎ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে অনুরোধ, আমার পরবর্তী পড়াশোনা চালিয়ে নিতে সহযোগিতা করবেন। পড়াশোনা শেষ করে আমিও যেন বসুন্ধরা গ্রুপের মতো মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি।
দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য কৃতজ্ঞতা
তাসনিম আহম্মেদ আলাভী, ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ প্রাপ্ত
আমি তাসনিম আহম্মেদ আলাভী। এ বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ১১২তম স্থান অধিকার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নের সুযোগ পেয়েছি। নটর ডেম কলেজ থেকে আমি উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনা সম্পন্ন করেছি। ২০২২ সালে খেপুপাড়া সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। পরীক্ষার মাধ্যমে নটর ডেম কলেজে পড়ার সুযোগ পাই। সেই সময়ে আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থার অবনতি দেখা দেয়। পড়াশোনা এবং আনুষঙ্গিক খরচ বহন করা পরিবারের জন্য অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ে। সেই সময়ে আমার পাশে দাঁড়ায় বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে আমাকে এককালীন ভর্তির জন্য টাকা দেওয়া হয়। এরপর প্রতিমাসে আমার পড়াশোনার জন্য বৃত্তি দেওয়া হতো। সেই বৃত্তি আমার পড়াশোনার পথকে সহজ করতে অনেক ভূমিকা পালন করে। দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে আমি ও আমার পরিবার চির কৃতজ্ঞ। তাঁদের দেওয়া সেই বৃত্তি আমি এখনো পাচ্ছি। আশা করছি সামনের দিনগুলোতেও আমার পথ চলায় পাশে থাকবে বসুন্ধরা গ্রুপ। একজন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করার ইচ্ছা আছে আমার। সেই ইচ্ছা পূরণে বসুন্ধরা গ্রুপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এমনটাই আশা করছি।
আমার সাফল্যের বড় অংশীদার বসুন্ধরা গ্রুপ
মো. আরিফুল ইসলাম, নীলফামারী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগপ্রাপ্ত
এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে খুব হতাশায় ভুগছিলাম। দরিদ্র পরিবারের ছেলে আমি। বাবা রিকশা চালিয়ে যা আয় করেন তাতে পরিবারের ভরণপোষণ চলে। আমি ও আমার বোনের পড়ার খরচ বাবা কোথা থেকে দেবেন? ভেবেছিলাম আর মনে হয় পড়ালেখা হবে না। তখনই পাশে পাই বসুন্ধরা গ্রুপকে। বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে তারা আমার কথা জানতে পারেন। এরপর কলেজে ভর্তি, বই কেনা এমনকি পোশাক কেনার টাকাও আমাকে দেয় বসুন্ধরা গ্রুপ। এরপর প্রতি মাসে আমাকে পড়ার খরচ দেওয়া হতো। তাদের সহযোগিতা নিয়ে আমি এইচএসসি পাস করি। কলেজ বাসা থেকে দূরে তাই কলেজের পাশে একটি মেসে থাকতাম। বসুন্ধরার টাকার পাশাপাশি বাবা রিকশা চালিয়ে কিছু খরচ দিতেন। বসুন্ধরার এই বৃত্তিটি আমার কণ্টকময় পথের হাঁটা সহজ করে দিয়েছিল। ২০২৪-২৫ বর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নীলফামারী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলাম। বসুন্ধরা শুভসংঘের সহযোগিতা না পেলে এটা সম্ভব হতো না। বসুন্ধরা গ্রুপ আমার সাফল্যের অনেক বড় অংশীদার। তাদের এই উপকার কোনো দিন ভুলব না। এখনো আমি প্রতি মাসে টাকা পাই। দোয়া করি তারা যেন এমন শুভ কাজ করতেই থাকে।
বসুন্ধরার সহায়তা পেয়ে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে
শান্তি আক্তার, ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগপ্রাপ্ত
আমার বাবা একজন রিকশাচালক। শত দরিদ্রতার কঠিন সব রাস্তা পাড়ি দিয়ে আমি এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিলাম। এরপর এইচএসসিও পাস করে আজ আমি পৌঁছেছি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজায়। এটা আমার পক্ষে কখনোই সম্ভব হতো না যদি বসুন্ধরা শুভসংঘ পাশে না থাকত। ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখেছি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। কিন্তু কখনো ভাবিনি চরম দরিদ্রতা জয় করে কীভাবে স্বপ্নের কাছে পৌঁছাব। এইচএসসিতে ভর্তি করানোর টাকাই কখনো বাবার পক্ষে দেওয়া সম্ভব ছিল না। বসুন্ধরা শুভসংঘ আশীর্বাদ হয়ে আমার পাশে দাঁড়ায়। আমাকে কলেজে ভর্তির টাকা দেয়। পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতি মাসের শুরুতেই টাকা পাই। এখনো পর্যন্ত প্রতি মাসে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে টাকা পাচ্ছি। বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তা না পেলে আজ হয়তো আমার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় পেতাম না। কখনো দরিদ্রতা জয় করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারতাম না। আমার স্বপ্নগুলো স্বপ্নের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকত। আমার মতো হাজারো দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণ করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে আমার মতো অনেক দরিদ্র পরিবারে অসহায় শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণে কাজ করছে দেশের সবচেয়ে বড় এই শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
বসুন্ধরা গ্রুপ পাশে না থাকলে স্বপ্ন অধরাই থাকত
সুমাইয়া আক্তার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগপ্রাপ্ত
কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বসুন্ধরা গ্রুপ ও বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি। বসুন্ধরা গ্রুপ শিক্ষাবৃত্তি না দিলে পড়াশোনা করার স্বপ্ন অধরাই থেকে যেত। প্রত্যন্ত গ্রামে থেকে একরাশ স্বপ্ন দেখতে পারতাম না, পড়ালেখা করে একদিন অনেক বড় হব। বাবা একজন সাধারণ দিনমজুর। তাঁর পক্ষে আমাদের লেখাপড়ার খরচ, সংসার চালানো খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। সেই মুহূর্তে বসুন্ধরা গ্রুপ শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি ও একনিষ্ঠভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। কোনোভাবেই আমাদের পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য ছিল না লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার। উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি ও পড়ার জন্য প্রতি মাসে খরচ দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এখনো মাসিক সেই বৃত্তি চলমান। আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও বিউপিতে চান্স পেয়েছি। আমার স্বপ্ন পূরণে আরেক ধাপ এগোতে পেরেছি যেটা বসুন্ধরা গ্রুপের শিক্ষাবৃত্তি ছাড়া অসম্ভব ছিল। বসুন্ধরা শুভসংঘের সহায়তায় আগামী দিনগুলোতেও যেন ভালোভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারি এবং আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি সেই প্রত্যাশা করি। একজন সুনাগরিক হয়ে আমিও বসুন্ধরা গ্রুপের মতো দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করব ইনশা আল্লাহ।