পূর্বে বিষখালী, পশ্চিমে সুন্দরবনসংলগ্ন বলেশ্বর নদী আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর মধ্যবর্তী পাথরঘাটা উপজেলা। নদী ভাঙনকবলিত এ জনপদে মৎস্যজীবীসহ দরিদ্রদের বাস। জীবিকার তাগিদে স্বজন ছেড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরে মাছ শিকার করতে যান এখানকার জেলেরা। অথৈ সাগরে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে অনেকেই মারা যান, অনেকের লাশ পাওয়া গেলেও অনেক জেলের সন্ধান পাওয়া যায় না। বছরের পর বছর ধরে এখানকার পরিবারের সদস্যরা পথপানে চেয়ে থাকে। পরিবারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে পরিবার। ওই পরিবারের হাল ধরতে হয় নারীদের (স্ত্রী)। মাটির কাজ, মাছ ধরাসহ নানা ঝুঁকির কাজে যুক্ত হন উপকূলের নারীরা। পাথরঘাটায় এমন চিত্র চোখে পড়ার মতো। উপকূলের এই দরিদ্র নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে আশীর্বাদ হয়ে এলো বসুন্ধরা গ্রুপ। দেশসেরা সামাজিক সংগঠন বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে উপকূলের অতিদরিদ্র নারীদের বিনামূল্যে তিন মাস সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের হাতে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়। গত ১৬ মে শুক্রবার পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের হলরুমে আনুষ্ঠানিকভাবে অসচ্ছল, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত নারীর হাতে সেলাই মেশিন তুলে দিয়েছে দেশের অন্যতম শিল্প পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপ। এ সময় উপস্থিত নারীরা তাঁদের জীবনকাহিনি তুলে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। নারীদের কাহিনি শুনে আবেগঘন মুহূর্ত তৈরি হয়। কেঁদে ফেলেন উপস্থিত অতিথিরাও। নারীদের চোখেমুখে বিষণ্নতার ছাপ, চোখে টলমল করছে পানি। তবে তাঁদের এই কান্না কষ্টের মধ্যেও আনন্দের। এদের মধ্যে অনেকে স্বামীহারা, অনেকে বাবাহারা, অনেকে সন্তানহারা। তাঁদের পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। বসুন্ধরা গ্রুপের দেওয়া সেলাই মেশিন পেয়ে এখন তাঁরা স্বপ্ন বুনছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ পাথরঘাটা উপজেলা শাখার সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা মনিরুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সদস্যসচিব ইসমাইল হোসেন এসমে সিকদার, পৌর জামায়াতের আমির মাওলানা বজলুর রহমান, পাথরঘাটা মডেল প্রেস ক্লাব সভাপতি জাকির হোসেন খান, উপজেলা প্রেস ক্লাব সভাপতি জসিম উদ্দিন, পাথরঘাটা প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক নজমুল হক সেলিম প্রমুখ। জাকারিয়া জামান বলেন, এখন পর্যন্ত সারা দেশে দুই হাজারের বেশি নারীকে স্বাবলম্বী করতে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে। আপনারা সেলাই মেশিনটি যথাযথভাবে কাজে লাগান এবং নিজেদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলেন। বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় শুভসংঘের এই সহানুভূতির হাত বদলে দিচ্ছে হাজারো জীবনের গল্প। আমরাও চাই উপকূলের নারীদের স্বপ্নের সারথি হতে, তাঁদের উপার্জনের সঙ্গে থাকতে। তাঁরা যেন ভাগ্য বদলাতে পারেন, পরিবারের অর্থনীতির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবেন আমাদের নারীরা। মো. মিজানুর রহমান বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ যে মানবিক উদ্যোগটি গ্রহণ করেছে, তা অনেক প্রশংসনীয়। নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও মানবিক সেবায় তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য। এই সেলাই মেশিন উপহার সেই মহতী প্রয়াসেরই অংশ। তাঁরা শুধু ব্যবসায়িক সফলতায় থেমে থাকেননি, সমাজের অসহায় ও পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে পাথরঘাটার অসচ্ছল, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত নারীর হাতে প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়েছে। এটা তাঁদের আত্মনির্ভরশীল করে তুলবে ইনশাআল্লাহ। এই মেশিন শুধু একটি যন্ত্র নয়, বরং এটি তাঁদের আত্মবিশ্বাস ও সম্মান ফিরে পাওয়ার প্রতীক। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন ভূমিকা সমাজ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও মানবিক সহায়তার মতো খাতে বসুন্ধরা শুভসংঘের কার্যক্রম অত্যন্ত ইতিবাচক। আমি আশা করি, এই সহায়তা পেয়ে নারীরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন এবং সমাজে তাঁদের অবস্থান আরও দৃঢ় হবে।