রংপুর সিটি করপোরেশনের ৪ ও ৫ নং ওয়ার্ডে রয়েছে খটখটিয়া নামে একটি গ্রাম। আড়াই দশক আগে এই গ্রাম বেগুন চাষের জন্য সারা দেশে বিখ্যাত ছিল। কৃষি বিভাগ গ্রামের নাম অনুসারে এর নাম দিয়েছিল খটখটিয়া বেগুন। একসময় দেশের ভোজনপ্রেমীদের কাছে এই বেগুন ছিল সমাদৃত এবং সবার পরিচিত। কিন্তু আধুনিক চাষাবাদের প্রসার, নতুন নতুন উন্নত জাতের বেগুন উদ্ভাবন এবং বাণিজ্যিকভাবে লাভবান না হওয়ার কারণে আজ রংপুর থেকে হারিয়ে গেছে খটখটিয়ার বেগুন। বর্তমানে দুএকজন কৃষক শখ করে খাওয়ার জন্য সামান্য চাষ করলেও বাণিজ্যিক চাষ আর নেই।
খটখটিয়া বেগুন মূলত ভাদ্র থেকে অগ্রহায়ণ অর্থাৎ আগস্টের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত চাষ করা হত। চারা লাগানোর ৬০–৬৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ শুরু করা যেত এবং ৩–৪ মাস পর্যন্ত ফলন অব্যাহত থাকত। স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবিত এই জাতের গড় জীবনকাল ছিল প্রায় ১৬০ দিন। এর রঙ ছিল কালচে বেগুনি, গাছের উচ্চতা মাঝারি এবং পাতাও মাঝারি আকারের। শতক প্রতি ফলন হত ১২০–১৫০ কেজি এবং হেক্টরপ্রতি ৩৫–৩৬ মেট্রিক টন।
একসময় সারা দেশে খটখটিয়া বেগুনের ব্যাপক চাহিদা ছিল এবং এর চাষ আশপাশের এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বছর জুড়ে নতুন জাতের বেগুন বাজারে পাওয়া যেতে শুরু করায় কৃষকরা অন্য জাত চাষে বেশি লাভবান হন। ফলে ধীরে ধীরে হারিয়ে যায় খটখটিয়া বেগুন।
চিলমন গ্রামের বাসিন্দা গৌরাঙ্গ রায় বলেন, “আমাদের বাবা-কাকারা একসময় খটখটিয়া বেগুন চাষ করতেন। কিন্তু অন্যান্য জাতের বেগুন আসায় এখন আর খটখটিয়া জাতের বেগুন চাষ করা হচ্ছে না। আমাদের এলাকা থেকে এই বেগুন হারিয়ে গেছে।”
বধু কমলা এলাকার সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আমরা একসময় খটখটিয়া বেগুন চাষ করতাম। গত ১০–১৫ বছর ধরে এই বেগুন আর চাষ করছি না। নতুন জাত বাজার দখল করায় খটখটিয়া বেগুনে লাভ হত না, তাই বন্ধ করে দিয়েছি।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের এক সহকারী পরিচালক জানান, “একসময় খটখটিয়া বেগুন জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সময়মতো কেউ আবেদন না করায় এটি জিআই স্বীকৃতি পায়নি।”
রংপুর বুড়িহাট হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু সায়েম বলেন, “খটখটিয়া গ্রামের নামেই এই বেগুনের নামকরণ করা হয়েছিল। আধুনিক চাষাবাদ এবং নতুন নতুন জাতের উদ্ভাবনের কারণে এখন কেউ আর এই জাতের বেগুন চাষ করতে চান না। ফলে ধীরে ধীরে খটখটিয়া বেগুন বিলুপ্তির পথে।”
বিডি প্রতিদিন/আশিক