আবহাওয়ার চরম বৈরীতায় নদীর বুকে অসংখ্য চর জেগে উঠেছে। এক সময় যে নদীর থৈ থৈ পানিতে নৌকা দাপিয়ে জেলেরা মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠত। প্রয়োজনীয় সময়ে বৃষ্টিপাতের অভাব আর ঋতু পরিবর্তনে ভাটা পড়ায় বদলেছে নদীর পাড়ের মানুষের পেশাও। এখন তারা নদীর বুকে জেগে উঠা চরে ধান চাষ করে ঘুরে দাঁড়াবার স্বপ্ন দেখছেন। তাই সেই নদীতে মাছের বদলে দেখা মেলে সোনালি ধানের শীষ। জেগে উঠা চর নদীপাড়ের ভূমিহীন মানুষের এখন নতুন জীবিকার ঠিকানা।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জের ঢেপা নদীর স্লুইসগেট এলাকায় পানির নাব্যতা হারানোয় জেগে উঠা চরে চলছে ধান কাটার ধুম। এসব চরের জমিতে চাষ হচ্ছে ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-৮৮ এবং হাইব্রিড জাতের ধান।
ফেরুয়ারি মাসের শুরুতে এসব চর জমিতে ধান রোপন করা হয়। রোপনের তিন মাসের মধ্যে অর্থাৎ এপ্রিলে ফসল ঘরে তুলতে শুরু করে কৃষকেরা। এই আগাম জাতের ধান অল্প সময়ে ভালো ফলন দেয়। ফলে জমিতে অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। গরীব মানুষের জন্য এই চর এখন এক আশীর্বাদ বলে মনে করছেন কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষক হাফিজ (৬০) বলেন, নদীতে চর জেগে উঠার পর, এক বিঘা জমিতে ধান আবাদ করি। ফেরুয়ারি মাসে ধান লাগাই। খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। তিন মাসেই ধান ঘরে তুলতে পারবো। আশা করছি ৩৫ থেকে ৪০ মণ ধান পাবো, যার বাজার মূল্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হবে। গরীব মানুষের জন্য এই চর এখন এক আশীর্বাদ।
একই এলাকার কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, চর ও ঢেপা নদী পাড়ের জমিতে ব্রি ধান-৮৮ রোপন করি। প্রতিবেশী সাবিদ হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করেছে ১ বিঘা জমিতে। ফলন ভালো হয়েছে। এই ধান পরিবারের ৬ মাসের খাবারের চাহিদা পূরণ করবে। জমি না থাকা অনেক গরীব মানুষর এখন নদীর পরিত্যক্ত জমিতে আবাদ করে উপকৃত হচ্ছেন।
বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শরিফুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বীরগঞ্জ উপজেলায় ১৪,৭৫৯হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ঢেপা ও করতোয়া নদীর পাড় এবং জেগে উঠা চরে চাষ হয়েছে ৩৫ হেক্টর জমিতে। ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-৮৮ ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করে কৃষকরা ভালো ফলন পাচ্ছেন। আগাম জাতের এই ধানের কর্তন শুরু হয়েছে এবং একর প্রতি ফলন ৭০ থেকে ৮০ মণ পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। বাজার মূল্য ভালো থাকায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। চর ও পাড়ের পরিত্যক্ত জমি চাষের আওতায় আনতে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। যাতে জমিকে চাষের আওতায় আনা যায়।
নদীর বুকে জেগে উঠা চরে ধান চাষের এই সফলতা এখন বীরগঞ্জের কৃষকদের জন্য শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, বরং বীরগঞ্জের কৃষকদের জীবনে নতুন আশার আলো হিসেবে দেখা দিয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল