হাওরের বিস্তীর্ণ জলাভূমি, মেঘে ঢাকা আকাশ আর বাতাসে ভেসে বেড়ানো হাঁসের দল। এ যেন প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়া এক স্বপ্নের খামার। নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে কম খরচে হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন যুবকরা। ধান ও মাছের পাশাপাশি হাঁস পালন এখন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে হাঁস দ্রুত বেড়ে ওঠে, ফলে খামারিদের জন্য অতিরিক্ত খাবারের খরচ কমে যায়। হাওরের উন্মুক্ত জলাশয় এবং বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ হাঁস পালনের জন্য আদর্শ স্থান হয়ে উঠেছে। এতে একদিকে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে ডিম ও মাংসের চাহিদা পূরণ হচ্ছে।
হাওর ঘুরে দেখা গেছে, প্রাকৃতিক পরিবেশে হাঁস পালনের সংখ্যা বাড়ছে। ছোট-বড় বিভিন্ন খামারি গড়ে উঠছে, কৃষকেরা হাঁস পালনকে অতিরিক্ত আয়ের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। বর্ষাকালে হাওরের বিস্তীর্ণ জলরাশি হাঁসের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে। বৈশাখ মাসে ফসল কাটার পর মাঠে পড়ে থাকা ধান ও নানা প্রাকৃতিক খাদ্যে হাঁস বেড়ে ওঠে, ফলে অতিরিক্ত খাদ্য ব্যয়ও কমে আসে।
নেত্রকোনার মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরীতে হাঁস পালন বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জেলার নিচু এলাকাগুলোর প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই হাঁস পালন করা হচ্ছে। কেউ ঘরোয়া পরিবেশে কয়েকটি হাঁস পালন করছেন, আবার কেউ বাণিজ্যিক খামার গড়ে তুলছেন। কম পরিশ্রম, স্বল্প খরচ এবং অধিক লাভজনক হওয়ায় অনেকেই হাঁস পালনের দিকে ঝুঁকছেন।
উৎপাদনে নতুন রেকর্ড
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নেত্রকোনায় ডিম, মাংস ও দুধ উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে।
- ডিমের চাহিদা: ৫৩ কোটি, উৎপাদন: ৫৩.৮০ কোটি
- মাংসের চাহিদা: ১.৭৩ লক্ষ মেট্রিক টন, উৎপাদন: ১.৮০ লক্ষ মেট্রিক টন
- দুধের চাহিদা: ২.৮০ লক্ষ মেট্রিক টন, উৎপাদন: ২.৯০ লক্ষ মেট্রিক টন
নুরপুর বোয়ালির মো. কাজল মিয়া জানান, তার খামারে তিন হাজার হাঁস রয়েছে, যা প্রতিদিন ১৮০০-১৯০০টি ডিম দেয়। শুকনো মৌসুমে ধান ওঠার আগে কিছু বাড়তি খাবার দিতে হয়, তবে তাও তুলনামূলকভাবে কম। প্রতি মাসে ১৩-১৪ হাজার টাকা খরচ হলেও ডিম বিক্রি করে আয় হয় ২১-২২ হাজার টাকা।
খামারি রাকিব হাসান বলেন, তার খামারে দুইজন কর্মী রয়েছেন, তবে কিছু সময়ে আরও দু-একজন বাড়তি শ্রমিক লাগে।
স্থানীয় গৃহিণী জাহেরা খাতুন জানান, বাড়িতে দু-চারটি হাঁস লালন-পালন করেন। মাছ-মাংস কেনার সামর্থ্য নেই, তাই নিজেদের খাদ্য চাহিদা পূরণে হাঁসের ডিম ও মাংস কাজে আসে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, হাওরাঞ্চলের মানুষ এখন হাঁসের খামারের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। জেলার প্রায় ৬০০০ বাণিজ্যিক হাঁস খামার রয়েছে। তবে ছোট আকারে লালন-পালনের হিসাব করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, হাঁস পালনের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে প্রোটিন ও আমিষের চাহিদা মিটছে। খামারিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আরও দক্ষ করার চেষ্টা চলছে। বেসরকারিভাবে হাঁস পালনকে সম্প্রসারিত করা গেলে এই অঞ্চল আরও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ করবে।
বিডি প্রতিদিন/আশিক