প্রজাদের সুপেয় পানির অভাব থেকে মুক্তি দিতে প্রায় ২৫০ বছর পূর্বে খনন করা হয় বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা এলাকায় দুর্গা সাগর দিঘি। দিঘির নিরাপত্তা সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে চন্দ্রদ্বীপ পরগনার তৎকালীন রাজা শিবনারায়ণ এলাকাবাসীর পানির সংকট নিরসনে মাধবপাশায় বৃহৎ দিঘি খনন করেন। তাঁর মা দুর্গাদেবীর নামে দিঘিটির নামকরণ করা হয় দুর্গাসাগর। বর্তমানে দিঘির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে বরিশাল জেলা প্রশাসন। এত বড় দিঘি বরিশাল বিভাগে আর নেই। বরিশাল জেলা প্রশাসন পর্যটনের মাধ্যমে দুর্গা সাগর দিঘি এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। দিঘির চারপাশে নিরাপত্তা প্রাচীর দেওয়া হয়েছে। শিশুদের জন্য পার্ক করা হয়েছে। একটি রেস্ট হাউস করা হয়েছে। একটি উন্নতমানের ওয়াশ ব্লক করা হয়েছে। পিকনিক করার জন্য পিকনিক শেড করা হয়েছে। একটি মিনি চিড়িয়াখানা করা হয়েছে। সেখানে হরিণ আছে ১২টি, ককাটিল দুটি, ইমু দুটি, বানর চারটি, ময়ূর দুটি, ঘুঘু চারটি, কবুতর ১০টি। কেনাকাটা করার জন্য ছয়টি স্টল রয়েছে। ইউস্যাপের ফুড কোর্ট রয়েছে। এখানে প্রবেশ করতে জনপ্রতি ২০ টাকা করে টিকিট রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার ৩৬ ঘণ্টা বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা যায়।
জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দিঘিটি ৪৫ একর ৪২ শতাংশ জমিতে অবস্থিত। এর ২৭ একর ৩৮ শতাংশ জলাশয় এবং ১৮ একর চার শতাংশ পাড়। দিঘির উত্তর-দক্ষিণ পাড়ের দৈর্ঘ্য ১৪৯০ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রশস্ত ১৩৬০ ফুট। দিঘির চারপাশ দিয়ে হাঁটার জন্য ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এ ছাড়াও দিঘিটির মূল সৌন্দর্য এর মাঝখানের ছোট্ট টিলাটি। যা এ দিঘির সৌন্দর্যকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। দিঘির চারপাশে নারিকেল, সুপারি, শিশু, মেহগনি প্রভৃতি বৃক্ষরোপণ করে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়াও দিঘির দুই পাশে রয়েছে দুটি বিশালাকার শান বাঁধানো ঘাট। আগত পর্যটকদের বিনোদনের জন্য দিঘিতে নৌকার ব্যবস্থাও রয়েছে। ঘণ্টা প্রতি ২০০ টাকার বিনিময়ে নৌকা নিয়ে পুরো দিঘি ঘুরে বেড়াতে পারেন ভ্রমণপিপাসুরা। দিঘিতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তায় রয়েছে সিসি ক্যামেরাও।
দিঘি খননের পেছনেও একটি কল্পকাহিনি রয়েছে। জনশ্রুতি রয়েছে দুর্গা দেবী যতদূর হেঁটে যেতে পারবেন, সেই পরিমাণ জমিতে দিঘি খনন করা হবে। প্রতি বছর চৈত্র মাসের তিথি অনুযায়ী এ দিঘিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পুণ্যস্নান করেন। অন্তত ২০ হাজার সনাতনী এখানে পুণ্যস্নানে অংশ নেন।