কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে প্রচার-প্রচারণায় মুখর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। পোস্টার বিলির পাশাপাশি শুনছেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা। নিজেদের ইশতেহারে রাখছেন শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীদের কথা জানাচ্ছেন- আকতারুজ্জামান ও ছাব্বিরুল ইসলাম
পড়াশোনার সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করব
মো. আবিদুল ইসলাম খান, সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী, ব্যালট নম্বর-২১
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পরিপূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে চাই আমরা। আমাদের লক্ষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করা। গণরুম গেস্টরুম কালচার ও সব রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি যা ছাত্রলীগের আমলে বেড়ে উঠেছে তা দূর করা। শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনা, ভালো রেজাল্ট, গবেষণা ও জরুরি সব ক্ষেত্রে যা যা দরকার তা আমরা করব। তিনি বলেন, নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করতে আসেন। যথাযথ সুযোগ-সুবিধার অভাবে অনেকে চার-পাঁচটি করেও টিউশনি করেন। এসব প্রেশারের কারণে পরীক্ষার ফল খারাপ হয়। আমরা শিক্ষার্থীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করব। অন-ক্যাম্পাস জবের সুযোগও তৈরি করব। আবিদ বলেন, যে জুলাইয়ের শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি, সামনে কথা বলতে পারছি সেই চেতনা ধারণ করে আমরা এগিয়ে যাব। আমাদের লক্ষ্য হবে তাদের স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করা। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন মানসিক প্রশান্তি নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে সে ব্যবস্থা আমরা করব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পরিপূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় বানানোর প্রচেষ্টা করব এবং শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার গণ্ডিতে আনতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। নারীদের জন্য ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করে তুলব। এই ক্যাম্পাসে ছেলে-মেয়ে যাতে সমান সুযোগ-সুবিধা পায়, তা নিশ্চিত করব। কারণ এ ক্যাম্পাস সবার, এখানে কোনো ধরনের বৈষম্য চলবে না। সর্বোপরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিরাপদ ক্যাম্পাসে রূপান্তরে কাজ করব। আবিদুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল যথেষ্ট অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল ঘোষণা করেছে এবং যোগ্যতার ভিত্তিতেই এ প্যানেল গঠন করা হয়েছে। এ প্যানেলে আদিবাসী, ক্রীড়াবিদ, ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ব্যক্তিদেরও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করছি, শিক্ষার্থীরা আমাদের পক্ষে তাদের সমর্থন দেবে। ডাকসু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার ক্ষমতা কারও নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বাচনের আয়োজন করেছে অথচ নির্বাচন বন্ধের ফাঁকফোকর রেখে দিয়েছে। ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।
শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থাকব
শেখ তানভীর বারী হামিম, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী, ব্যালট নম্বর-১৭
আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল শিক্ষার্থীদের ভালো সাড়া পাচ্ছে, আমাদের ভালোভাবে গ্রহণ করছেন ছাত্রছাত্রীরা। নির্বাচন সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাও এমনভাবে কথা বলছেন যার কারণে শিক্ষার্থীদের মনে ভয়ের সঞ্চার হচ্ছে। ডাকসু নির্বাচনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা অনেকে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দেওয়ার পরও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। এসব নানান কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। তানভীর বারী হামিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে ছিলাম। শিক্ষার্থীদের জন্যই রাজনীতি করেছি। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সর্বদা সরব ছিলাম। এমন কোনো আন্দোলন ছিল না যেখানে আমি অনুপস্থিত ছিলাম। ৫ আগস্টের পরও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীবান্ধব রাজনীতি করেছি, শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করেছি। আমি জিএস পদে নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার আদায়ে কাজ করব। তারা যেন শিক্ষা জীবনে একটি শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ পায় তা আমি নিশ্চিত করার চেষ্টা করব। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তুলব। ক্যাম্পাসকে পরিপূর্ণভাবে নারীবান্ধব করার জন্য কাজ করব। আমি এমন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চাই যেখানে নারী শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারবে।
মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ ও গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করব
তানভীর আল হাদী মায়েদ, সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী, ব্যালট নম্বর-০৮
যারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম থেকে ছাত্র রাজনীতি করছেন তাদের মধ্যে আমি একজন। দীর্ঘ সময় ধরে ছাত্রছাত্রীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের সংগ্রামে থাকার চেষ্টা করেছি। এসব নানা কারণেই ছাত্রছাত্রীরা আমাকে সমর্থন দেবে বলে প্রত্যাশা করি। ছাত্রদলের মতো বড় একটি ছাত্র সংগঠন করার অভিজ্ঞতা থাকায় ছাত্রছাত্রীদের অধিকার আদায়ের জায়গায় ভূমিকা রাখতে পারব বলে প্রত্যাশা করি। আমরা কেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চাই, শিক্ষার্থীদের কেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দিতে চাই- সে ব্যাপারে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ১০ দফা ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে। এর বাইরে বড় পরিসরে বলতে গেলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকে গুরুত্ব দেব। মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ ও গুণগত শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। উন্নত গবেষণার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া হবে। নারী শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে নানান সমস্যা রয়েছে। এ সমস্যাগুলো সমাধান করতে চাই। তাদের জন্য উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে চাই।
অনুষদভিত্তিক সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করব
মো. আরকানুল ইসলাম রূপক, ক্যারিয়ার উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী, ব্যালট নম্বর-৯
ক্যারিয়ার নিয়ে আমার দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতা আছে। আমি করপোরেট ক্ল্যান, ক্যারিয়ার ক্লাবসহ আরও কয়েকটি ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। মোটামুটি ওসব ক্লাবে যুক্ত থাকাকালীন আমি ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং, ক্যারিয়ার কনফিউশন দূর করতে কার্যকর ভূমিকা রাখাসহ আরও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলাম।
সেই জায়গা থেকেই আমার এই পদ বেছে নেওয়া। আমি নির্বাচিত হলে অনুষদভিত্তিক সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করব এবং শিক্ষার্থীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে উপকারী হবে এমন কিছু পদক্ষেপ নেব, যেগুলো আমার ইশতেহারে উল্লেখ আছে।
বিশ্বমানের কারিকুলাম ও কোর্স প্রণয়নে কাজ করব
মেহেদী হাসান, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী, ব্যালট নম্বর-৮
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এমনভাবে গড়তে চাই যেন আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতা করে ক্যারিয়ারে এগিয়ে যেতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক মডিউল, কোর্সগুলো আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে অনেক সময় মেলে না। যার কারণে এখান থেকে কেউ বিদেশে পড়তে গেলে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আমি চাই আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোর্সের ও মডিউলের সঙ্গে মিল রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সগুলো প্রণয়ন করতে- যেন বিদেশে পড়তে যেতে সমস্যা না হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়াশোনার জন্য যেতে চাইলে সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট পাঠানোসহ অনেক প্রশাসনিক জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। আন্তর্জাতিক সম্পাদকের অধীনে একটি অফিস তৈরি করতে চাই। যেন প্রশাসনের কাজ তদারকি করা যায় এবং এক্সপার্ট প্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যথাযথ সহায়তা দেওয়া যায়। আন্তর্জাতিক মেলা তৈরি করতে চাই- যেখানে বিদেশি শিক্ষকরা শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবেন। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাবিকে নিরাপদ সংস্কৃতির মাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
ক্যাম্পাসে পূর্ণাঙ্গ শাটল ব্যবস্থা গড়ে তুলব
মো. সাইফ উল্লাহ্ (সাইফ), ছাত্র পরিবহনবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী, ব্যালট নম্বর-১১
দেখুন আমি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই অনাবাসিক থাকার কারণে বাসে আসা-যাওয়া করতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সমস্যাগুলো আমি নিজেও অনুধাবন করেছি। বিজয়ী হলে সবার প্রথমে আমি বাসের যে অপ্রতুলতা সেটি ট্রিপ বৃদ্ধির মাধ্যমে কমিয়ে আনার চেষ্টা করব। বাসের ফিটনেসসহ অন্য সব সমস্যার দেখভাল এবং সমাধানের জন্য মনিটরিং সেল গঠন করব। সাপ্তাহিক বন্ধের দিন এবং উৎসবের দিনগুলোতে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য বাসের ট্রিপ বরাদ্দ রাখব। নারীদের হলগুলোকে একটি রুটের মধ্যে নিয়ে এসে ২০ সিটের ইলেকট্রিক কার্ট নিয়ে আসব যেগুলো একই রুটে সার্বক্ষণিক চলাচল করবে। ক্যাম্পাস যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে পূর্ণাঙ্গ শাটল ব্যবস্থা প্রণয়ন করা নিয়ে কাজ করব।
ক্যাম্পাসে মিলবে বিনামূল্যে হাইস্পিড ওয়াইফাই
এহসানুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী, ব্যালট নম্বর-০৭
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা-সহায়তা, ডিজিটাল সেবা এবং প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা এখনো অপ্রতুল। এর ফলে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বাস্তবতা বদলানোই আমার অঙ্গীকার। আগামী এক বছরের মধ্যে হলের যাবতীয় সেবা অটোমেশন করব ও সব ধরনের পেমেন্ট ক্যাশলেস করব। ক্যাম্পাসজুড়ে বিনামূল্যে হাইস্পিড ওয়াইফাই নিশ্চিত করব। উন্নত গবেষণাগার সুবিধা বৃদ্ধি ও গবেষণা পেপার প্রকাশে সহায়তা করব। এআই, কোডিং, ফ্রিল্যান্সিংবিষয়ক প্রশিক্ষণ আয়োজন। নিয়মিত কোডিং কমপিটিশন ও হ্যাকাথন আয়োজন করব। দলমতনির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীর অধিকার নিশ্চিত করব। আমি বিশ্বাস করি, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করা সম্ভব।
হলে হলে সাংস্কৃতিক সম্প্রীতি গড়ে তুলতে চাই
আবু হায়াত মো. জুলফিকার জেসান, সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী, ব্যালট নম্বর-৩
সৃষ্টিশীল সাহিত্য নির্মাণ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য নিশ্চিত করাই আমার লক্ষ্য। আমার ভিশন হলো মুক্ত, প্রগতিশীল ও বহুত্ববাদী সাংস্কৃতিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণ ও সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক মেধার পরিচর্যা। নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উৎসবের পাশাপাশি আন্তবিশ্ববিদ্যালয়, আন্তহল ও আন্তবিভাগীয় সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের পাশাপাশি হলে সাংস্কৃতিক সম্প্রীতি গড়ে তুলতে চাই। এ ছাড়া নিয়মিত ত্রৈমাসিক সাহিত্য ম্যাগাজিন প্রকাশ করা, প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ উৎসব’ আয়োজন করা, প্রতি মাসে অন্তত একটি করে ফিল্ম উৎসব, চারুকলা ইনস্টিটিউটে বৃহৎ পরিসরে বার্ষিক চারু উৎসব আয়োজন করা এবং শিল্পীদের কাজের স্বীকৃতি প্রদান। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাইয়ের গণ অভ্যুত্থানের চেতনায় নতুন সাংস্কৃতিক বয়ান গড়ার লক্ষ্যে ১টি ‘কালচারাল কমপ্লেক্স’ গড়ে তোলা হবে। ক্যাম্পাসে ক্ষতিগ্রস্ত ভাস্কর্য ও সাংস্কৃতিক স্থাপনাগুলো সংস্কার করা।
বুলিং ও নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি রোধে ‘কুইক রেসপন্স টিম’
সৈয়দ ইমাম হাসান অনিক, সমাজসেবা সম্পাদক প্রার্থী, ব্যালট নম্বর-১৭
বিজয়ী হলে শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী ‘প্রায়োরিটি লিস্ট’ তৈরি করা এবং সেগুলোর সময় হিসাব করে পূরণ করা। শিক্ষার্থীদের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করার চেষ্টা করব, অনাবাসিক মেয়েদের হলে রেস্টরুমের ব্যবস্থা করা, এক হলের মেয়েরা যেন অন্য হলে দেখা করতে যেতে পারেন এবং পরিবারের সদস্যরা যেন হলে আসতে পারেন সেই দাবিতে কাজ করা, Social Welfare club এর মাধ্যমে ক্যাম্পাসের সামাজিক কার্যক্রম সমন্বয় করা, শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তির পরেই বুলিং, হ্যারাসমেন্ট সচেতনতায় কর্মশালা করা এবং তাদের সুরক্ষায় অনলাইন এবং অফলাইন কুইক রেসপন্স টিম করা, এনিমেল ওয়েলফেয়ার টিম গঠন করে ক্যাম্পাসের পশুপাখির নিয়মিত চিকিৎসা ও ছুটি খাদ্য প্রদানের ব্যবস্থা করা। এক বছর সময় শেষে আমি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে পরবর্তী ডাকসুর পথ সুগম করে শিক্ষার্থীদের কাতারে ফিরে আসব।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা ও চর্চা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করব
আরিফুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী, ব্যালট নম্বর-৪
মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরব। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অধিকতর জ্ঞানচর্চার লক্ষ্যে ক্যাম্পাসে একটি ‘মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা ও চর্চা কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করব। স্বাধীনতা সংগ্রামে সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অবদান বিশেষভাবে তুলে ধরব। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও দেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নারী শিক্ষার্থীদের ভূমিকার কথা স্মরণীয় করে রাখতে টিএসসি থেকে ভিসি চত্বর পর্যন্ত সড়কটিকে ‘জুলাই সাহসিকা সরণি’ হিসেবে নামকরণ করব। এ ছাড়া একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চব্বিশের শহীদদের নামে বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণ, গণতান্ত্রিক আন্দোলন গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করব।
গড়ব ক্রীড়াঙ্গনমুখী নতুন শিক্ষার্থীসমাজ
চিম চিম্যা চাকমা, ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী, ব্যালট নম্বর-৩
আমি যেহেতু একজন খেলোয়াড়, খেলার মাঠের সব প্রতিকূলতাকে নিজে কাছ থেকে দেখেছি, তাই প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে শুরু থেকেই এসবের সমাধানের পথগুলোকে সহজ করতেই আমি এ পথকে বেছে নিয়েছি। আমার প্রথম পরিকল্পনা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অ্যাথলেটকে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা। যেখানে তারা নিয়মিত খেলার সুযোগ পাবে, চর্চার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সম্ভাবনা গড়ে উঠবে। এ জন্য প্রয়োজন স্পোর্টস ক্লাব, আমি যেটি গঠনে উদ্যোগী হব। সর্বোপরি, ক্রীড়াঙ্গনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আমি নিজে যেমন অর্জন দিয়ে যেতে চাই, তেমনই গড়ে তুলতে চাই ক্রীড়াঙ্গনমুখী এক নতুন শিক্ষার্থীসমাজ।
প্রথম লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের খাবারের সমস্যা দূর করা
চেমন ফারিয়া ইসলাম মেঘলা, কমনরুম, পাঠকক্ষ ও ক্যাফেটেরিয়াবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী, ব্যালট নম্বর-২
আমার প্রথম লক্ষ্য থাকবে শিক্ষার্থীদের খাবারের সমস্যা দূর করা। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের যুক্ত করে ফুডকার্টের ব্যবস্থা করা যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান হবে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুডচেইন রাখা যাবে। এ ছাড়া ছেলেদের কমনরুম করা, পোর্টেবল চার্জারের ব্যবস্থা করা, গেমসরুম করার পরিকল্পনা আছে। সবচেয়ে ইনোভেটিভ লক্ষ্য হচ্ছে, সেন্ট্রাল লাইব্রেরির জন্য একটা অ্যাপস তৈরি করব। শিক্ষার্থীদের আর ভোর ৫টায় এসে লাইন ধরতে হবে না। সবাই জানবে কোন সিট ফাঁকা আছে। এ ছাড়া লাইব্রেরি ও বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের সেমিনারে কোন বইগুলো কোথায় আছে এবং সেগুলোর অনলাইন ভার্সন সেই অ্যাপসে থাকবে।
শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে আইনি সেবার অঙ্গীকার
মু. মেহেদী হাসান মুন্না, মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী, ব্যালট নম্বর-৬
নির্বাচিত হলে আমার কাজ হবে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমিয়ে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা। গেস্টরুম, গণরুম এবং জুলাই অভ্যুত্থানে ঢাবির সন্ত্রাসীদের বিচারকার্য নিশ্চিত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত, শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে আইনি সেবা দিতে লিগ্যাল এইড সেল গঠন, ’৭৩-এর আদেশ এবং ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কার করতে বাধ্য করে প্রতিবছর ডাকসুসহ কিছু কাজ আমি আমাদের জন্য করতে চাই। আমি এমন কিছু করতে চাই যেখানে আমার পদের মেয়াদ এক বছর থাকলেও আমার কাজের মেয়াদ থাকবে সারা জীবন। মানুষ যেন আমাকে ধারণ করে তাদের হৃদয়ে।
পরিবেশ রক্ষা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রাধান্য
আনোয়ার হোসাইন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী, ব্যালট নম্বর-১
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলার দায়িত্ববোধ থেকেই আমি স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। আমার লক্ষ্য- শিক্ষার্থীদের জন্য সহজলভ্য চিকিৎসা সুবিধা, মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা, দূষণমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস এবং সবুজ টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করা। আমি বিশ্বাস করি- একটি সুস্থ প্রজন্মই আগামী দিনের শক্তি।