একটি শহর বলতে সাধারণত একটি অঞ্চলকে বোঝায়, যা মূলত গ্রাম থেকে বড় কিন্তু নগরীর তুলনায় ছোট। এর অবশ্য নিজস্ব সরকার রয়েছে, আছে নাম এবং সীমানাও। যেখানে রয়েছে বাজার, এমনকি আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাস করে মানুষজন। তবে কিছু শহর ব্যতিক্রমী। একেবারেই অদ্ভুত। দেখতে অন্য শহরের মতো মনে হলেও আদতে এগুলো জনবসতিহীন। কোথাও মাত্র একজন মানুষ বাস করে, আবার কোথাও পুরো শহরের মানুষ বাস করে এক ছাদের নিচে
অস্ট্রিয়ার হলস্ট্যাটের হুবহু কপি ‘রেপ্লিকা হলস্ট্যাট’ বা ‘হলস্ট্যাট ২.০’
অস্ট্রিয়ার শতাব্দী প্রাচীন গ্রাম ‘হলস্ট্যাট’, যা ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। আর হবেই না কেন! অস্ট্রিয়ার এই ‘হলস্ট্যাট’ যেন ইউরোপীয় কোনো রূপকথার গল্প থেকে উঠে আসা এক স্থান। ইউনেস্কো স্থাপত্য আর শতাব্দী প্রাচীন নিদর্শনগুলোকে ঘিরে থাকা শহরে রয়েছে শান্ত নদী আর ছবির মতো সুন্দর পাহাড়, যা এর সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
‘হলস্ট্যাট’ এতটাই মনোমুগ্ধকর যে, ২০১২ সালে চীন এই গ্রামের হুবহু রেপ্লিকা বা প্রতিলিপি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রায় এক বিলিয়ন ডলার খরচ করে এই প্রকল্পটি অস্ট্রিয়ার আসল গ্রামের প্রতিটি সূক্ষ্ম বিবরণে তৈরি করা হয়, এমনকি এর গির্জা এবং টাউন স্কোয়ারও যেন নিখুঁতভাবে অনুকরণ করা হয়। এটি চীনের গুয়াংডং প্রদেশে নির্মিত হয়েছে। একজন চীনা ধনকুবেরের পৃষ্ঠপোষকতায় নির্মিত এই প্রকল্পটি আসল হলস্ট্যাটের বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে, কারণ তারা এই প্রকল্প সম্পর্কে কিছুই জানত না। পরে অস্ট্রিয়ার হলস্ট্যাটের বাসিন্দারা (মেয়রসহ) এই নকল শহরটি পরিদর্শন করেন। তারা বলেন, শহরটি নকল করা হয়েছে বলে তারাও গর্বিত, কিন্তু যেভাবে এটি করা হয়েছে তা তাদের পছন্দ হয়নি। তারা মনে করেন, ভবনগুলোর নকল করা হয়েছে তবে তার মালিকদের সঙ্গে দেখা করে অনুমতি নেওয়া দরকার ছিল। মিনমেটালস নামের কোম্পানি; যারা শহরটি নির্মাণ করে, তারা তাদের কর্মীদের অস্ট্রিয়ার হলস্ট্যাটে পাঠিয়ে সেখান থেকে ছবি তুলে এনেছিলেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মারলথ পার্ক একটি অনন্য বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং দূরদূরান্ত থেকে আগত মানুষের জন্য ছুটির দিন কাটানোর শহর
মারলথ পার্ক দক্ষিণ আফ্রিকা
ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কের সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত দক্ষিণ আফ্রিকার একটি রত্ন, নাম মারলথ পার্ক। যা অতিথি এবং দর্শনার্থীদের অবকাশ উপভোগের সুযোগ দেয়। পাশাপাশি বন্যপ্রাণীদের জন্যও অভয়ারণ্য হিসেবে কাজ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মারলথ নিজেই বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপ এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য আদর্শ জায়গা। যেখানে বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী যেমন-সিংহ, হাতি, জলহস্তী এবং কুমিরের আবাসস্থল। শহরটি নানান কারণে অনন্য। এরমধ্যে বন্যপ্রাণীর আক্রমণের ভয় থাকা সত্ত্বেও স্থানীয়রা তাদের বাড়ির চারপাশে দেয়াল দিতে পারেন না। পার্কের একমাত্র দেয়ালটি মাত্র ১.২ মিটার (৪ ফুট) উচ্চতার, যা মূলত প্রাণীদের পার্কের ভিতরে রাখতে নয় বরং মানুষকে পার্ক থেকে বাইরে রাখতে তৈরি করা হয়েছে। এই শহরে বন্যপ্রাণীদের অবাধে চলাফেরা যেন সাধারণ দৃশ্য। তবে চোরেরা জানালা দিয়ে বাড়িতে ঢুকে ফ্রিজ থেকে জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যায়। হাতি ও জিরাফ রাস্তা আটকে রাখে। মানুষের ওপর সিংহের আক্রমণও কোনো বিরল দৃশ্য নয়। কয়েক বছর আগে, একটি সিংহ এক চোরকে আক্রমণ করে, হত্যা করে ও খেয়ে ফেলে। পুলিশ কেবল চোরের মাথা ও একটি পা অবশিষ্ট পেয়েছিল। এ ঘটনার পরেও শহরের বাসিন্দা সিংহগুলোকে রেখে দেয়। যদিও কেউ কেউ বলেন, পালাতে গিয়ে চোর গুলিবিদ্ধ হয় এবং তার লাশ সিংহ খেয়ে ফেলে। কেউ বলেন, সিংহগুলো শহরের ক্রমবর্ধমান চুরি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। তবে সাইকেল আরোহীরা প্রায়ই আক্রমণের শিকার হয়। এর পেছনে নাকি জাতিগত সমস্যা জড়িত। কারণ, বেশির ভাগ সাদা চামড়ার বাসিন্দাদের গাড়ি রয়েছে, আর সাইকেল আরোহীরা মূলত কৃষ্ণাঙ্গ। যারা কাজের জন্য যাতায়াত করে থাকেন।
মার্কিন সেনাবাহিনীর ‘প্রশিক্ষণের শহর’ অ্যাসিমেট্রিক ওয়্যারফেয়ার ট্রেনিং সেন্টার, ভার্জিনিয়া
উত্তর ভার্জিনিয়ার ক্যারোলাইন কাউন্টিতে নতুন একটি শহর তৈরি করা হয়েছে, যেখানে রয়েছে একটি স্কুল, একটি গির্জা, একটি মসজিদ, একটি পাতাল রেলস্টেশন, সুড়ঙ্গ, সেতু এবং পাঁচতলা ভবনের দূতাবাস। কিন্তু এই শহরে কেউ বসবাস করে না। কারণ এটি কোনো সাধারণ শহর নয়, বরং এটি মার্কিন সেনাবাহিনীর জন্য তৈরি প্রায় ৯০.১ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। যেখানে মার্কিন সেনাবাহিনী তাদের সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। শহরটির নাম অ্যাসিমেট্রিক ওয়্যারফেয়ার ট্রেনিং সেন্টার (AWTC)। অ্যাসিমেট্রিক ওয়্যারফেয়ার গ্রুপ নামক এক বিশেষ মিশনের অধীনে এই ট্রেনিং সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। শহরটি ইরাক ও আফগানিস্তানের আদলে তৈরি। ২০০৬ সালে আইইডির (IEDs) এই দলটি আধুনিক শহুরে যুদ্ধবিগ্রহের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেবে। সেনাবাহিনীর মতে, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি ‘জটিল অপারেশনাল পরিবেশ’ তৈরি করবে। সমর বিশ্লেষকদের ভাষ্য, একবিংশ শতকের যুদ্ধক্ষেত্র আর খোলা ময়দান হবে না, বরং হবে শহরের ভিতরের সংকীর্ণ জায়গা। তাই মার্কিন প্রশাসনের এমন প্রশিক্ষণের উদ্যোগ।
ভূতুড়ে শহর অর্ডোস
চীন
চীনের বৃহত্তম ভূতুড়ে শহর ‘অর্ডোস’। এখানকার বেশির ভাগ নতুন ভবনই খালি বা অসম্পূর্ণ। কিন্তু এক সময় এই এলাকায় ১০ লাখ মানুষের বসবাসের কথা ছিল, সেখানে এখন মাত্র এক লাখ মানুষের বসবাস। জানা যায়, শহরটির দুই শতাংশ আজও ব্যবহৃত হয়নি। বাকি অংশ খালি এবং পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এই শহরের গল্প শুরু হয়েছিল প্রায় ২৫ বছর আগে। ২০০০ সালের গোড়ার দিকে যখন মঙ্গোলিয়ায় কয়লা খনির সন্ধান মেলে। কয়লা উত্তোলনও শুরু হয়। আর চীনের খনি কোম্পানিগুলো মঙ্গোলিয়ার সবুজ চারণভূমি খুঁড়ে উন্মুক্ত কয়লা খনি তৈরি করে। স্থানীয় কৃষক তাদের জমি বিক্রি করে রাতারাতি ধনী হয়ে যান। নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এবং কয়লার ট্রাকের নিরন্তর যাতায়াত রাস্তাগুলোকে ব্যস্ত করে তোলে। কয়লা উত্তোলনের ফলে পুরোনো অর্ডোস শহরও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। কিন্তু আজ শহরটি প্রায় জনশূন্য। অর্ডোস শহর গড়ে তোলার জন্য চীনা কর্মকর্তারা ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ ব্যয় করেন। কারণ, তৎকালীন বিনিয়োগকারীরা কয়লা খনিকে কেন্দ্র করে জনবসতি গড়ে তোলে। বিশাল বিশাল ভবন (অ্যাপার্টমেন্ট) তৈরি করে। উদ্দেশ্য, ভাড়া দেওয়া। তবে চাহিদা নির্মাতাদের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি এবং অনেক বিনিয়োগকারী ভবন সম্পূর্ণ করার আগেই সরে যান বা দেউলিয়া হয়ে যান। ফরাসি ফটোগ্রাফার রাফায়েল অলিভিয়ের মতে, জনশূন্য এই নগরটি এখন ‘বৈপরীত্যে ভরা এক সুন্দর শহর’। আজ এখানকার রাস্তাগুলো অসম্পূর্ণ বাড়িতে ভরা। শহরে যারা ছিলেন, তারাও অন্য কোথাও চলে যাচ্ছেন। মাত্র পাঁচ বছরে, প্রতি বর্গফুটের দাম ১,১০০ ডলার থেকে কমে ৪৭০ ডলারে নেমে আসে। মানুষকে বসবাসে উৎসাহিত করতে বিনিয়োগকারীরা দাম কমিয়ে দিয়েছেন।
লংইয়াবায়েন
নরওয়ে
লংইয়াবায়েন; পৃথিবীর উত্তর প্রান্তের সর্বশেষ শহর। এটি নরওয়ের সভালবার্ড দ্বীপপুঞ্জের এমন এক জায়গা, যা একই সঙ্গে অদ্ভুত, বুনো অথচ কাব্যিক। আর্কটিক মহাসাগরের কোলঘেঁষা শহরটি পৃথিবীর বিচ্ছিন্ন জনপদের মধ্যে অন্যতম। জনসংখ্যা ২৫০০ জনেরও কম। তবুও এটি সভালবার্ড দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী। আর্কটিক সার্কেলের গভীরে অবস্থিত এই ছোট্ট শহরের রঙিন বাড়িগুলো আর মেরুভালুক পাশাপাশি অবস্থান করে। অবাক করা তথ্য, স্থানীয় শ্বেতভালুকের সংখ্যা মানুষের চেয়ে বেশি (৩,০০০ মেরুভালুক), তাই আত্মরক্ষার্থে স্থানীয়রা অনুমোদনপ্রাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করেন, যা এখানকার সাধারণ দৃশ্য। ছোট্ট এই শহরতলিতে রয়েছে গির্জা, এটিএম বুথ, জাদুঘর, পোস্ট অফিস, বিমানবন্দর এবং বিশ্ববিদ্যালয়। এখানকার অধিবাসীরা বেশি দিন থাকেন না; গড়ে ছয় বছরের কিছু বেশি সময় তারা এখানে বাস করেন। তবে এটি আর্কটিক অঞ্চলের এমন একটি শহর, যেখানে মৃত্যুবরণও নিষিদ্ধ। কারণ, চরম ঠান্ডায় লাশ পচে না। অসুস্থ বা মৃতপ্রায় কাউকে প্লেন বা জাহাজে করে নরওয়ের অন্য অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়। আর যদি কেউ হঠাৎ মারাও যায়, তবে তাকে অন্যত্র সমাহিত করা হয়। বিজ্ঞানীরা কয়েক বছর আগে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির টিস্যু সরিয়ে পরীক্ষা করে তাতে ১৯১৭ সালের মহামারি ভাইরাসের চিহ্ন পান। এই অঞ্চলে বছরের তিন মাস (নভেম্বর থেকে জানুয়ারি) সূর্য অস্তমিত থাকে, যা পোলার নাইট হিসেবে পরিচিত। এই শহরে বিড়াল পালনও নিষিদ্ধ। স্থানীয় পাখিদের সুরক্ষার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
‘মোনোউই’ এক ব্যক্তির শহর!
নেব্রাস্কা
‘মোনোউই’ নেব্রাস্কার একটি অনন্য স্থান। যদিও এটি কোনো বিনোদন কেন্দ্র নয়, তবুও এটি আমেরিকার জনপ্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। কারণ, এটি এক ব্যক্তির বসবাসের শহর! মোনোউই বয়ড কাউন্টির একটি নিবন্ধিত গ্রাম। বর্তমান মার্কিন জরিপ অনুযায়ী, এই গ্রামের শুধু একজন বাসিন্দা রয়েছেন, এলসি আইলার। বয়স ৭৭ বছর। তিনি শহরের ট্যাভার্ন চালান, যেখানে আশপাশের শহর থেকে দিনে বহু মানুষ ঘুরতে আসেন। এলসির ট্যাভার্ন কেবল মদের দোকান নয়; এটি শহরের সামাজিক কেন্দ্রও। তা ছাড়া এলসির কাছে আছে বিশাল একটি লাইব্রেরি, যেখানে তার স্বামীর সংগ্রহ করা পাঁচ হাজারের বেশি বই রাখা। আগতরা চাইলে ইচ্ছামতো বই ধার নিতে পারেন। লাইব্রেরিটি এই গ্রামের এক জীবন্ত স্মৃতিস্তম্ভ, যেখানে মোনোউইয়ের অতীতের গল্প, স্মৃতি জড়িয়ে আছে। জনসংখ্যার দিক থেকে এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ছোট জনপদ। ১৯০৩ সালে মোনোউই প্রতিষ্ঠিত হয়, যখন মেসন, এলকহর্ন এবং মিসৌরি ভ্যালি রেলরোড এই স্থানে পৌঁছায়। ১৯০২ সালে এখানে একটি ডাকঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত কার্যক্রম চালায়। আর এর সর্বোচ্চ সময়কাল ছিল ১৯৩০-এর দশকে, তখন জনসংখ্যা ছিল ১৫০। ২০১৮ সালে এই গ্রামটি আরবি এবং প্রুডেনশিয়ালের বিজ্ঞাপনে দেখানো হয়। এ ছাড়া মোনোউই বিশ্বের বৃহত্তম বিজ্ঞাপন পোস্টারের শুরু স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা ২০১৮ সালে সম্পন্ন হয়।
বুসিঙ্গেন আম হোচরিন
জার্মানি
একটি দেশের সীমানা যে কত বিতর্ক জন্ম দেয়, তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ সুইজারল্যান্ড পরিবেষ্টিত জার্মানির গ্রাম বুসিঙ্গেন আম হোচরিন। জার্মানির ছোট্ট এই গ্রাম ভৌগোলিকভাবে অদ্ভুত ও ব্যতিক্রম। এটি দক্ষিণ জার্মানিতে অবস্থিত এবং বাসিন্দা মাত্র ১,৫১৯ জন। এর মূল ভূখণ্ড জার্মানি থেকে প্রায় ৭০০ মিটার চওড়া সংকীর্ণ ভূমির মাধ্যমে আলাদা। গ্রামটির অস্বাভাবিক অবস্থানের কারণে এটি জার্মান শহরের চেয়ে সুইস শহরই বেশি মনে হয়। অর্থনৈতিকভাবে এটি সুইস ব্যবস্থার অংশ হলেও আইন ও প্রশাসন চলে জার্মানির অধীনে। এই গ্রামের দৈনন্দিন জীবন তাই দ্বৈত বাস্তবতায় আবদ্ধ। এখানকার বাসিন্দারা লেনদেন করেন সুইস ফ্রাঁতে, তবে আয়কর দিতে হয় জার্মানিকে। প্রাথমিক শিক্ষা জার্মান কাঠামোতে হলেও মাধ্যমিক পর্যায়ে অভিভাবকরা দেশ বেছে নেওয়ার সুযোগ পান। এমনকি এর ফোন নম্বরও দুই দেশের! অর্থাৎ জার্মানি ও সুইজারল্যান্ড উভয়ের কোড ব্যবহার করা যায়। এই অদ্ভুত অবস্থার সূত্রপাত হয় সপ্তদশ শতকে-ধর্মীয় দ্বন্দ্ব ও রাজনৈতিক কারণে। ১৯১৯ সালে গণভোটে ৯৬ শতাংশ মানুষ সুইজারল্যান্ডের অংশ হতে চাইলেও জার্মানি ছাড় দেয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরও সীমান্ত বিতর্ক থেকে যায়। অবশেষে ১৯৬৭ সালে জার্মানি-সুইজারল্যান্ড একে সুইস অঞ্চলে অন্তর্ভুক্ত করে এবং এতে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ উঠে যায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান মাতেও কাউন্টির কোলমা শহরতলিতে জীবিত বাসিন্দা ১,৬০০ জন হলেও সেখানে কবরের সংখ্যা ১৫ লাখেরও বেশি
মৃতদের শহর ‘কোলমা’
ক্যালিফোর্নিয়া
আমেরিকার বেশির ভাগ শহর তাদের শপিং মল, ওয়ালমার্ট আর একাধিক রেস্তোরাঁর জন্য বিখ্যাত। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ার সান মাতেও কাউন্টির শহর কোলমা বিখ্যাত কবরস্থানের জন্য। এই শহরে রয়েছে ১৭টি কবরস্থান। তাই একে বলা হয় ‘মৃতদের শহর’। অর্থাৎ এই শহরে জীবিত মানুষের চেয়ে মৃত মানুষের সংখ্যা বেশি। মূলত এই শহরের বেশির ভাগ ভূমি কবরস্থানের জন্য নির্ধারিত হওয়ায় এখানকার মৃত মানুষের সংখ্যা জীবিত মানুষের সংখ্যার চেয়ে প্রায় ১০০০:১ গুণ বেশি। ১৯২৪ সালে শহরটির তৎকালীন স্থানীয় সরকার কোলমাকে একটি নেক্রোপলিস (সমাধিক্ষেত্র) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এর অবশ্য কারণও ছিল, ১৯০০-এর দশকে প্রথম কোলমা শহরতলিতে কবরস্থান স্থানান্তর করা হয়। সে সময় ১,৫০,০০০ কবর স্থানান্তরের পর থেকে এখানে মৃতদের সংখ্যা বেড়েছে জীবিতদের তুলনায় বহুগুণ। এরপরে ১৯২০-এর দশকে, সান ফ্রান্সিসকো ক্রমেই বিস্তৃত মহানগরে রূপ নিতে থাকায় শহরের কবরগুলো কোলমায় স্থানান্তর করা হয়। তবে এই শহরতলির মূল ইতিহাস রচিত হয়েছিল ১৮৪৯ সালের গোল্ড রাশ থেকে, যখন হাজার হাজার মানুষ কাছাকাছি সান ফ্রান্সিসকোতে পাড়ি জমায়। তবে তারা রোগশোক নিয়ে এসেছিল, এর ফলে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ১৮৮০-এর দশকের মধ্যে সান ফ্রান্সিসকোর ২৬টি কবরস্থান ভরে গিয়েছিল। ১৯০০ সালে স্থানীয় সরকার সান ফ্রান্সিসকোয় নতুন কবর নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কারণ হিসেবে তারা বলেছিল, এই ভূমি কবরস্থানের চেয়েও মূল্যবান। কেননা, তৎকালীন সান ফ্রান্সিসকো ছিল দ্রুত বেড়ে ওঠা এক ব্যস্ত নগরী। দুর্ভাগ্যবশত শহরটি ছিল তৎকালীন ঘনবসতিপূর্ণ কাঠের বাড়িতে ভরা বিশাল বারুদভান্ডার, যেখানে বড়সড়ো বিপর্যয় ঘটার অপেক্ষা মাত্র। ১৯০৬ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে সান ফ্রান্সিসকো মৃতের নগরীতে পরিণত হয়। বাড়তে থাকে কবরের সংখ্যাও। ফলত ১৯১৪ সালে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কবরস্থানের সব মৃতদেহ কোলমায় সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। তখন থেকে শহরটির স্লোগান ‘কোলমাতে জীবিত থাকা দারুণ’!
দ্য ভিলেজেস
ফ্লোরিডা
গাছ শোভিত রাস্তার পাশে সারি সারি বাড়ি, গলফ কাটে বাসিন্দাদের চলাফেরা, টাউন স্কয়ারে আড্ডা এবং রাতে জমকালো কনসার্ট-সব স্বপ্নের মতো শোনালেও এটিই বাস্তব। এটাই ‘দ্য ভিলেজেস’, যাকে বলা হয় ‘ফ্লোরিডার অবসরপ্রাপ্তদের শহর’। এখানে বাড়ি থেকে স্বাস্থ্যসেবা, কেনাকাটা, বিনোদন ও খেলাধুলা, এমনকি রেস্টুরেন্ট; সবকিছুই কেবল প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। কারণ, শহরটি শুধুই অবসরপ্রাপ্তদের জন্য বানানো হয়েছে। ম্যানহাটনের চেয়েও বড় এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। অরল্যান্ডো থেকে মাত্র ৪৫ মিনিট উত্তরে সেন্ট্রাল ফ্লোরিডায় অবস্থিত। ১৯৬০-এর দশকে মিশিগানের ব্যবসায়ী হ্যারল্ড শোয়ার্টজ ফ্লোরিডার জমি কেনার মাধ্যমে এই ধারণা শুরু করেন। প্রথমে তিনি অরেঞ্জ ব্লসম গার্ডেনস নামে একটি ট্রেইলার পার্ক গড়ে তোলেন। পরে ছেলে গ্যারি মর্সকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাংক, দোকানপাট ও গলফ কোর্সের সুবিধা যোগ করেন। ১৯৯২ সালে এর নাম হয় ‘দ্য ভিলেজেস’। পরে জনসংখ্যা দ্রুত বেড়ে ওঠে। এখন বাসিন্দা ১ লাখ ২৫ হাজারেরও বেশি। তিনটি কাউন্টিজুড়ে বিস্তৃত এ কমিউনিটিতে আছে ৫০টি গলফ কোর্স, আড়াই হাজারেরও বেশি ক্লাব ও কার্যক্রম এবং তিনটি টাউন স্কয়ার। তবে এই শহরে শিশুদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। কারণ, এটি নানান বিতর্ক ও মাদক ও যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় জর্জরিত।
হুইটিয়ার
আলাস্কা
‘হুইটিয়ার’ এক বিস্ময়কর শহর। ছোট্ট এই শহরটি অনন্য এক বৈশিষ্ট্যের কারণে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এই শহরতলির প্রায় সব বাসিন্দাই থাকেন মাত্র ১৪ তলা একটি ভবনে, যার নাম ‘বেগিচ টাওয়ার্স’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৫৬ সালের সেনা ব্যারাক) সময় নির্মিত এই একটি ভবনেই রয়েছে হাসপাতাল, স্কুল, সিটি অফিস ও দোকানপাট সবকিছু! ফলে বাসিন্দাদের মাসের পর মাস বাইরে পা রাখারও প্রয়োজন হয় না। এখানে বছরে প্রায় ২২ ফুট তুষারপাত হয়, যা যুক্তরাষ্ট্রের গড় তুষারপাতের হাজার গুণ বেশি। চরম এই আবহাওয়ার মাঝেই প্রায় ২২০ জন মানুষ সারা বছর বসবাস করেন। তাদের উপার্জনের মাধ্যম কেবল ফিশিং (মাছ ধরা), পর্যটন, রেল এবং ফেরি সার্ভিস। এই শহরে প্রবেশের একমাত্র স্থলপথ একটি রেল টানেল। প্রতি ঘণ্টায় একবার যাতায়াতের সুযোগ থাকে এবং রাত ১০টা ৩০ মিনিটের পর আর ফেরার সুযোগ নেই। ২০০১ সালের আগে এটিও সম্ভব ছিল না; তখন সপ্তাহে মাত্র কয়েকবার চলা ট্রেন ও নৌকাই ছিল ভরসা।
০১. ‘রেপ্লিকা হলস্ট্যাট’ বা ‘হলস্ট্যাট ২.০’ ধনীদের বিলাসবহুল আবাসন এলাকা ও পর্যটন কেন্দ্র। যেখানে রয়েছে গির্জা, হ্রদ ও ইউরোপীয় স্থাপত্যের নিখুঁত অনুকরণ
০২. মারলথ পার্ক হলো বন্যপ্রাণীদের অভয়ারণ্য এবং ছুটির শহর, এটি ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কের দক্ষিণে অবস্থিত। পার্কের সীমানা ঘেঁষে রয়েছে ক্রোকোডাইল নদী
০৩. অ্যাসিমেট্রিক ওয়্যারফেয়ার ট্রেনিং সেন্টার ছোট এক শহর, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে সেনা প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। ২০২১ সালে যদিও এটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়
০৪. লংইয়ারবায়েন, এলাকা সভালবার্ডের প্রশাসনিক কেন্দ্র। যা মূলত একটি নরওয়েজিয়ান নগরী, যেখানে ৫৩ দেশের প্রায় ২,৪০০ বাসিন্দা বসবাস করেন
০৫. অর্ডোস হলো চীনের অভ্যন্তরীণ এক মঙ্গোলিয়ার শহর, যা একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সমৃদ্ধ শহর ও আধুনিক পরিকল্পিত ‘ভূতুড়ে শহর’ হিসেবে পরিচিত
০৬. মোনোউই আমেরিকার সবচেয়ে ছোট শহর। যার বাসিন্দা একজন! তিনি নিজেই এই শহরের মেয়র, কোষাধ্যক্ষ, ক্লার্ক এবং এমনকি শহরের একমাত্র ব্যবসায়ী
০৭. কোলমা ক্যালিফোর্নিয়ার ছোট শহর, যা ১৯২৪ সালে নেক্রোপলিস (সমাধিক্ষেত্র) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এখানে জীবিতদের
চেয়ে মৃতের সংখ্যা বেশি
০৮. হুইটিয়ার-বলা হয় এটি ‘এক বাড়ির শহর’। এটি শহরের সব বাসিন্দার আবাসস্থল। দক্ষিণ-পশ্চিম আলাস্কার শহর বাইরের জগৎ থেকেও প্রায় বিচ্ছিন্ন
০৯. সুইজারল্যান্ড দ্বারা আবৃত হলেও জার্মানির মালিকানাধীন ছোট শহর বুসিঙ্গেন আম হোচরিন শত শত বছর ধরে তাদের দ্বিজাতীয় অস্তিত্ব বজায় রেখেছে
১০. আমেরিকার ‘দ্য ভিলেজেস’, যাকে বলা হয় ‘ফ্লোরিডার অবসরপ্রাপ্তদের সবচেয়ে বড় শহর’। যা যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্তদের সবচেয়ে সেরা শহর হিসেবে পরিচিত