রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত সড়ক হাতিরঝিল মধুবাগ ব্রিজ থেকে রামপুরা পর্যন্ত ‘নতুন রাস্তা’। প্রতিদিন এ সড়কে ৪০০ থেকে ৫০০ প্রাইভেট কার, পিকঅ্যাপ ভ্যান, অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করে। রাস্তার দুই পাশে তিন থেকে সাড়ে তিন শতাধিক দোকান আছে। বর্ষার আগে ব্যস্ততম সড়কটিতে এখন (উন্নয়ন কাজ) খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। গত দেড় মাস খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে মধুবাগ থেকে মিরবাগ পর্যন্ত ৫০০ মিটার রাস্তা। ফলে ব্যস্ততম রাস্তাটিতে আর আগের মতো গাড়ি চলার সুযোগ নেই। অন্যদিকে দোকানিরাও পড়েছেন চরম বিপাকে। তাদের ব্যবসায় মন্দা। ‘নতুন রাস্তা’র দক্ষিণ পাশে একটি সরু গলি দিয়ে কিছু গাড়ি চলাচল করলেও প্রচণ্ড যানজট লেগে থাকছে। মানুষজন ঠিকমতো পায়েও হাঁটতে পারছেন না যানজটের কারণে।
সরেজমিন গতকাল নতুন রাস্তার মিরবাগ মোড়ে গিয়ে দেখা যায়-
“রাস্তা বন্ধ। রাস্তার উন্নয়ন কাজ চলিতেছে সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিক দুঃখিত।-কর্তৃপক্ষ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।”
স্থানীয়রা জানান, সাময়িক অসুবিধা যেন স্থায়ী সমস্যায় রূপ নিচ্ছে। রাস্তা খুঁড়ে রেখে ফেলে রাখা, ময়লা-আবর্জনার কারণে ভোগান্তি বাড়ছে।
অন্যদিকে রাস্তার দূরত্ব কমানোর জন্য এ সড়ক ব্যবহার করতেন তাঁরাও পড়েছেন বিপাকে। স্থানীয় বাসিন্দারা রামপুরা রাস্তার পূর্ব পাশে একটি বেসরকারি হাসপাতাল থাকায় যাঁরা সেখানে সেবা নিতেন তাঁরাও বিপাকে আছেন রোগী নিয়ে যাঁরা ওই হাসপাতালে সেবা নিতে আগ্রহী তাঁদের দুই থেকে তিন কিলোমিটার পথ ঘুরে আসতে হচ্ছে।
কবে নাগাদ রাস্তার কাজ শেষ হবে তা কেউ জানে না। প্রাইভেট কার চালক রবিন হোসেন ‘‘সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত’’ সাইনবোর্ড দেখিয়ে বললেন, সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত হলেও ‘সাময়িক’টা কত দিন? এক মাস হয়ে গেল মাত্র ৫০০ মিটার রাস্তা খুঁড়ে রেখ দিল। পুরোপুরি খুঁড়তে সময় লাগবে কত? আর রাস্তা কত দিনে যানবাহন ও মানুষ চলাচলের জন্য উপযুক্ত হবে?
মধুবাগ ফালু টাওয়ারের বাসিন্দা হান্নান হোসেন পারভেজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মধুবাগ ব্রিজ থেকে রামপুরা পর্যন্ত নতুন রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ির ফলে মানুষের চরম ভোগান্তি হচ্ছে।
বিকল্প রাস্তা হিসেবে মধুবাগ খেলার মাঠ থেকে গলির রাস্তা ব্যবহার করা হচ্ছে। রাস্তাটি ছোট হওয়ায় একটি প্রাইভেট কার ঢুকলে অন্য পাশ দিয়ে আরেকটি প্রাইভেট কার যেতে পারে না। এ ছাড়াও পিকঅ্যাপ, অটোরিকশা, রিকশা, ভ্যান চলাচল করায় অনেক সময় থমকে থাকে। তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, আমার বাসা থেকে আগে নয়াটোলা আসতে মোটরসাইকেলে যেতে আগে সময় লাগত মাত্র দুই মিনিট। এখন নতুন রাস্তার চাপ থাকায় দুই মিনিটের জায়গায় আধা ঘণ্টা লেগে যায়।’
স্থানীয় ফার্নিচার দোকানি আল-আমিন বলেন, প্রায় এক মাসের বেশি সময় দোকানে কেনাবেচা নেই। রাস্তা খুঁড়ে রাখায় ক্রেতা আসছে না। ফলে ঘরভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীর বেতন ব্যবসার মূলধন থেকে দিতে হবে।’ মালামাল বহন অসুবিধা হওয়ায় ক্রেতার দেখা মিলছে না বলেও জানান তিনি।
আরিফ হোসেন নামে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাময়িক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে আমাদের দীর্ঘ ভোগান্তি বেড়ে গেছে। রাজধানীর সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় না থাকায় একেক সময় একেক সংস্থা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করে। যে কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় স্থানীয় বাসিন্দাসহ পথচারীদের।
শুধু মধুবাগ ব্রিজ থেকে রামপুরা রাস্তা পর্যন্ত নয়, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ সড়কে এখন চলছে সড়ক সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ। করপোরেশনের পাশাপাশি সেবাদানকারী সংস্থা, ঢাকা ওয়াসা, বিটিসিএল, তিতাস, ডেসকোসহ সড়কের নিচে থাকা অন্যান্য সংস্থার সার্ভিস লাইন সংস্কারে নিয়মিতই রাস্তা খুঁড়তে হচ্ছে। ফলে রাজধানীর রাজপথ খোঁড়াখুঁড়িতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নিত্যদিনের ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী। সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে সড়কে এমন বিশৃঙ্খল অবস্থা প্রতি বছরই সৃষ্টি হয়।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, শহরজুড়ে দুই সিটির উদ্যোগে চলছে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি ও সংস্কার কাজ। সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি অন্য উন্নয়ন সংস্থাগুলো সড়কের নিচে থাকা সংযোগ সংস্কার করতে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করছে। ফলে মানুষের ভোগান্তি বেড়ে গেছে।
রাজধানীর রামপুরা, মিরবাগ, মগবাজার, খিলগাঁও, শান্তিবাগ, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, গুলশান, বনানী, জিগাতলা, ধানমন্ডি, মিরপুর, কল্যাণপুর, আহমদনগর, রাজাবাজার, তেজতুরী বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, এসব এলাকার বিভিন্ন সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে মন্থরগতিতে। বৃষ্টির মৌসুম আসায় হেঁটে চলাও কষ্টকর হয়ে পড়বে। বৃষ্টির কারণে রাস্তার মাটি, কাদাপানিতে একাকার হয়ে যাচ্ছে।