অনেক সময় প্রিয় গানগুলোর জগৎ বদলানোর প্রয়োজন হয়। হয়তো আপনার স্পটিফাইয়ে ইন্ডি ব্যান্ড নেই, তাই চলে যেতে চান অ্যাপল মিউজিকে। কিংবা টাইডালের নতুন অফার হাতছাড়া করতে চান না। যাই হোক, মিউজিক প্ল্যাটফর্ম বদলানোর কারণ অনেক, কিন্তু ভয় একটাই-নিজের সাজানো গান আর প্লেলিস্টগুলো হারিয়ে যাবে না তো?
চিন্তার কিছু নেই। এখন এমন বেশ কিছু টুল ও ফিচার এসেছে, যা দিয়ে সহজেই আপনার পুরো মিউজিক কালেকশন নতুন প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যেতে পারেন, কোনো গান না হারিয়েই।
অ্যাপল মিউজিকে নতুন ফিচার : অন্য প্ল্যাটফর্ম থেকে সরাসরি গান স্থানান্তর
অ্যাপল সম্প্রতি একটি নতুন ফিচার চালু করেছে, যা দিয়ে স্পটিফাই, অ্যামাজন মিউজিক বা টাইডালের মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে সরাসরি লাইব্রেরি ইমপোর্ট করা যায়। এই প্রক্রিয়াটি SongShift নামের থার্ড পার্টি সার্ভিসের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
যেভাবে করবেন :
♦ আইফোনে যান Settings>Apps>Music
♦ ট্যাপ করুন ‘Transfer Music from Other Music Services’
♦ পছন্দের প্ল্যাটফর্ম সিলেক্ট করে লগ ইন করুন। এরপর চাইলে All Songs and Albums বা শুধু Playlists স্থানান্তর করতে পারবেন।
পুরো প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয়। আপনার স্পটিফাইয়ের লাইব্রেরিতে থাকা অ্যালবাম, প্রিয় গান ও প্লেলিস্টগুলো কয়েক মিনিটের মধ্যেই অ্যাপল মিউজিকে চলে আসবে। তবে মনে রাখবেন-অ্যাপল প্ল্যাটফর্ম-নির্মিত প্লেলিস্ট (যেমন ‘This is Taylor Swift’) স্থানান্তর করে না। এ ছাড়া ‘Liked Songs’ তালিকাটিও স্বয়ংক্রিয়ভাবে কপি হয় না, তাই চাইলে আগে নিজস্ব প্লেলিস্ট তৈরি করে রাখতে পারেন।
Tune My Music : সব প্ল্যাটফর্মে কাজ করে
আপনি যদি অ্যাপল মিউজিক ব্যবহার না করেন, তাহলেও চিন্তা নেই। বেশ কিছু জনপ্রিয় থার্ড পার্টি পরিষেবা আছে যেগুলো যে কোনো দুটি স্ট্রিমিং সাইটের মধ্যে সংযোগ তৈরি করতে পারে। তন্মধ্যে জনপ্রিয় Tune My Music। এই সার্ভিসটি দিয়ে স্পটিফাই, টাইডাল, ডিজার, ইউটিউব মিউজিক, এমনকি কিছু কম পরিচিত প্ল্যাটফর্মের মধ্যেও গান স্থানান্তর করা যায়।
Tune My Music-এর সুবিধা :
♦ কোনো অ্যাপ ইনস্টল করার দরকার নেই, ওয়েবসাইট থেকেই কাজ হয়।
♦ আপনি বেছে নিতে পারেন : পুরো লাইব্রেরি, নির্দিষ্ট প্লেলিস্ট বা প্রিয় গানগুলো।
♦ সময় বাঁচে : ১৬ হাজারেরও বেশি গান স্থানান্তর করতে ৫ মিনিটেরও কম সময় লাগে!
তবে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। কোনো গান যদি নতুন প্ল্যাটফর্মে না থাকে বা নাম আলাদা হয়, তবে সেটা বাদ পড়তে পারে। Tune My Music এ ক্ষেত্রে অনুপস্থিত ট্র্যাকগুলোর তালিকা দেয়, যাতে পরে নিজে থেকে খুঁজে নিতে পারেন।
অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের স্থানান্তর পদ্ধতি Tidal ও Deezer : উভয়ই তাদের ওয়েবসাইটে Tune My Music-এর লিংক দিয়েছে, যা দিয়ে সহজে ট্রান্সফার করা যায়।
♦ Amazon Music : SongShift ও Soundii- নামের টুলও ব্যবহার করতে পারেন।
♦ YouTube Music : এখানে সরাসরি অ্যাপল মিউজিক থেকে ডেটা এক্সপোর্ট করার অপশন আছে। তবে অনেক প্লেলিস্ট থাকলে সময় একটু বেশি লাগতে পারে।
♦ Spotifz : এরা বর্তমানে নিজস্ব লাইব্রেরি স্থানান্তর টুল টেস্ট করছে, যা শিগগিরই চালু হবে।
কিছু কার্যকর টিপস
♦ সব কিছু একসঙ্গে স্থানান্তর করবেন না- কেবল প্রিয় প্লেলিস্টগুলো ট্রান্সফার করুন, নইলে সময় অনেক লাগবে।
♦ ডাউনলোড করা গানগুলো পুনরায় ডাউনলোড হবে না-সেগুলো নতুন প্ল্যাটফর্মে শুধু যুক্ত থাকবে।
♦ মূল লাইব্রেরি থাকে আগের জায়গায়ই- স্থানান্তর মানে কপি, মুছে ফেলা নয়।
মিউজিক ট্রান্সফার এখন আর ঝামেলা নয়
আগে মিউজিক প্ল্যাটফর্ম বদলানো মানে ছিল নতুন করে শুরু করা। কিন্তু এখন প্রযুক্তি বদলে দিয়েছে সেই ধারণা। SongShift, Tune My Music বা Soundiiz-এর মতো সার্ভিসগুলো আপনার মিউজিক অভিজ্ঞতাকে করে তুলছে আরও স্বাধীন। একটা ক্লিকেই আপনি নতুন প্ল্যাটফর্মে যেতে পারেন, সঙ্গে নিতে পারেন প্রিয় সুরের ভান্ডারটাও। কারণ, মিউজিক শুধু প্ল্যাটফর্ম নয়, এটা আপনার স্মৃতির অংশ, আপনার জীবনের সাউন্ডট্র্যাক।
তথ্যসূত্র : অ্যাসোসিয়েড প্রেস (এপি)