পৃথিবী এমন অনেক রহস্যে ভরা, যেগুলো বিজ্ঞানীরা এখনো সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পারেননি। বহু বছরের গবেষণার পরও কিছু ঘটনা বা বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে। এ রহস্যগুলো বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রজুড়ে বিস্তৃত, যেমন : হারিয়ে যাওয়া পদার্থ থেকে শুরু করে অদ্ভুত প্রাকৃতিক ঘটনা। আমরা আজ পাঁচটি চমকপ্রদ পৃথিবীর রহস্য সম্পর্কে জানব, যা এখনো আমাদের বিজ্ঞানের সীমাকে চ্যালেঞ্জ করে।
সব ‘ডার্ক ম্যাটার’ কোথায়?
বিজ্ঞানীদের ধারণা, মহাবিশ্বের বেশিরভাগ অংশ ডার্ক ম্যাটার হিসেবে পরিচিত একটি পদার্থ নিয়ে গঠিত, যা মূলত পরমাণু এবং কণার মতো উপাদান অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু দীর্ঘদিনের অনুসন্ধানের পরও এই পদার্থের বড় কোনো অংশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ‘হারিয়ে যাওয়া ম্যাটার’ রহস্য অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্টদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে চিন্তার বিষয় হয়ে আছে। এই ডার্ক ম্যাটার কোথায় লুকিয়ে আছে? এটি কি এমন কোনো অংশে রয়েছে, যা আমরা দেখতে পারি না, নাকি এখনো আবিষ্কার করতে পারিনি?
‘চেতনা’- আমরা যেভাবে সচেতন হই
চেতনার কাজ কীভাবে হয়- আমাদের মস্তিষ্ক কীভাবে চিন্তা, অনুভূতি এবং আত্ম-সচেতনতা তৈরি করে। এটি আজকের বিজ্ঞানের অন্যতম একটি বড় রহস্য। আমরা জানি যে, মস্তিষ্ক এতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তবে নিউরনের ক্রিয়াকলাপ কীভাবে আমাদের চেতনা তৈরি করে তা আমরা পুরোপুরি বুঝতে পারিনি। কেন আমরা চিন্তা করি এবং ‘স্বত্ব’-এর একটি অনুভূতি রাখি? স্নায়ুবিজ্ঞানে অনেক অগ্রগতি সত্ত্বেও আমরা এখনো চেতনার ধাঁধার সম্পূর্ণ উত্তর থেকে অনেক দূরে।
অদ্ভুত জলোচ্ছ্বাস গোলক
‘বল বজ্রপাত’- (Ball lightning) একটি বিরল এবং অস্বাভাবিক ঘটনা, যা বজ্রঝড়ের সময় জ্বলজ্বলে এবং ভাসমান গোলকের মতো দেখা যায়। এ গোলকগুলো কখনো এলোমেলোভাবে নড়াচড়া করে এবং প্রায়শই কোনো চিহ্ন ছাড়াই অদৃশ্য হয়ে যায়। বছরের পর বছর অসংখ্য মানুষ এটি দেখেছেন, তবে এ বল বজ্রপাতের কারণ এখনো কেউ সঠিকভাবে জানে না। এটি হয়তো এক ধরনের অদ্ভুত বৈদ্যুতিক নির্গমন অথবা সম্পূর্ণ অন্যকিছু। তবে এটি এখনো বিজ্ঞানীদের জন্য একটি রহস্য।
তরল পদার্থ কেন এত বিশৃঙ্খল হয়?
তরল প্রবাহের বিশৃঙ্খলা (Turbulence) আমরা প্রায়ই দেখতে পাই, যেমন সাগরের ঢেউ বা ঝড়ের সময় প্রবল বাতাস। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখনো সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পারেননি যে, উচ্চ গতিতে তরল কীভাবে আচরণ করে। তরল চলাচল ব্যাখ্যা করার জন্য তাদের সমীকরণ রয়েছে, তবে তারা বিশৃঙ্খল ও এলোমেলো গতির ধরন পূর্বাভাস দিতে পারে না। এটি দীর্ঘদিন ধরে একটি কঠিন সমস্যা হয়ে রয়েছে এবং এর সমাধান করলে বিমান বা আবহাওয়ার মতো বিষয়গুলোকে আরও ভালোভাবে বোঝা সম্ভব হতে পারে।
টাঙ্গুস্কা ঘটনা
অনলাইন তথ্য অনুসারে, ১৯০৮ সালে সাইবেরিয়ায় একটি বিশাল বিস্ফোরণে গাছপালা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিল, যা টাঙ্গুস্কা ঘটনা নামে পরিচিত। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এটি বায়ুমণ্ডলে ধূমকেতু বা গ্রহাণুর বিস্ফোরণের কারণে ঘটেছিল। তবে সেই বস্তুটির কোনো অংশ আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি সেখানে কোনো গর্তও খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং বিস্ফোরণটি অদ্ভুতভাবে ঘটেছিল, যা বিভিন্ন তত্ত্বের জন্ম দিয়েছে। তবে ১০০ বছরের বেশি সময় পরেও এটি পৃথিবী বিজ্ঞান সম্পর্কিত অন্যতম বড় রহস্য।
ভূ অভ্যন্তরে এভারেস্টের চেয়ে ১০০ গুণ বড় দুই ‘পর্বত’
ভূপৃষ্ঠের গভীরে এভারেস্টের চেয়েও ১০০ গুণ বড় দুই ‘পর্বত’ আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে এ-সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, এর একটি আফ্রিকা মহাদেশ এবং অন্যটি প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে। দুটি পর্বতের উচ্চতাই প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার। যেখানে বিশ্বের ওপরিভাগে সবচেয়ে উঁচু পর্বত এভারেস্টের উচ্চতা ৮ দশমিক ৮ কিলোমিটার। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই পর্বতগুলোর বয়স কমপক্ষে ৫০ লাখ বছর। এগুলো মাটি থেকে ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার গভীরে অবস্থিত এবং টেকটনিক প্লেটে বেষ্টিত। গবেষণায় বলা হয়, পৃথিবী পিঁয়াজের মতো আলাদা অংশে বিভক্ত। বাইরে পাতলা খোসার মতো এবং তারপর স্থিতিস্থাপক ম্যানটেল আউটডোর। এরপর তরল আউটার কোর। এখানে দুটি পর্বত অবস্থিত।
তথ্যসূত্র : স্পেসল্যাব