বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় গুদামঘর। আসলে তা নয়, এগুলো হলো সিনেমা হল (সিঙ্গেল স্ক্রিন)। মানসম্মত ও পর্যাপ্ত সিনেমার অভাবে এসব সিনেমা হলের মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে লোকসান গুনে শেষ পর্যন্ত যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন বাধ্য হয়ে এগুলো বন্ধ করে দেন। বিশেষ করে মফস্বলের সব সিনেমা হলের এখন এ করুণ দশা। সম্প্রতি গোপালগঞ্জের ‘চিত্রবাণী’ সিনেমা হলের দৃশ্য দেখে এ সমস্যার বিষয়টি আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। গোপালগঞ্জ শহরের চৌরঙ্গীতে অবস্থিত চিত্রবাণী সিনেমা হলটি তৎকালীন পাকিস্তান আমলে নির্মিত হয়। ১৯৩২ সালে গোপালগঞ্জ মহকুমা মর্যাদা পেলে একটি করনোনেশন থিয়েটার হল করা হয়, যেখানে শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা হতো। পরবর্তীতে এটিকে স্বাধীনতার আগে সিনেমা হলে রূপান্তর করা হয় এবং লিজভিত্তিক বেসরকারিভাবে সিনেমা হল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে চলছে এখনো। একসময় এটি পুরোনো হওয়ায় গোপালগঞ্জের পাবলিক হল মোড়ের পাবলিক হলে শহরের দ্বিতীয় সিনেমা ‘ছায়াবাণী’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, যা ছিল আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন, এসি, লেদার সিট, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সিনেমা হল। কিন্তু যথেষ্ট দর্শকের অভাবে ক্রমাগত লোকসানে জর্জরিত হয়ে প্রতিষ্ঠার ৭/৮ বছর পর ছায়াবাণী সিনেমা হল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে সেখানে সুউচ্চ পৌর মার্কেট করা হয়েছে। ২০১২-২০১৩ সাল পর্যন্ত ‘চিত্রবাণী’ ভালো অবস্থায় ছিল। এমন নয় যে এর সংস্কার নিয়ে কর্তৃপক্ষ ভাবেনি। কিন্তু ছায়াবাণীকে আধুনিক সুযোগ সুবিধা দিয়েও যেখানে লস প্রজেক্ট হয়েছে সেই বিবেচনায় চিত্রবাণী সিনেমা হল সংস্কার করে যে দর্শক ফিরে আসবে, লাভ হবে এটা এখনো এই সিনেমা হলের কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করতে পারছে না বলেই সিনেমা হলটি ভগ্ন দশায় রয়েছে। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র কর্মকর্তা মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, দর্শকপ্রিয় পর্যাপ্ত পরিমাণে সিনেমা নেই বলেই লোকসানের কবলে পড়ে মফস্বলের সিনেমা হলগুলো এখন অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। বিগত পতিত সরকার সিনেমা হল উন্নয়ন, নির্মাণ ও সংস্কারে যে উদ্যোগ নিয়েছিল সেখানে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকের কঠিন শর্ত আরোপের কারণে সেই উদ্যোগ আর আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমান সরকার বিষয়টি যদি অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করে একই সঙ্গে মানসম্মত ও পর্যাপ্ত সিনেমা পাওয়া যায় তাহলে দেশের সিনেমা হলগুলো আবার দর্শকপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।