গাজায় ইসরায়েলি নারকীয় তাণ্ডবের যেন শেষ নেই। গত ৪৮ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৯০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ তাদের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়, শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। নৃশংস এ হামলা আরও জোরদার করা হয়েছে । নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে, যারা অনেকেই একটি নির্ধারিত মানবিক নিরাপদ এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
দক্ষিণের খান ইউনিস শহরে কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন, যাদের অনেকেই মওয়াসি এলাকায় একটি তাঁবুতে ছিলেন। ওই এলাকা বর্তমানে হাজার হাজার উদ্বাস্তু মানুষের আবাসস্থল এবং এটি ইসরায়েল নির্ধারিত একটি ‘মানবিক এলাকা’ হিসেবে বিবেচিত।
রাফা শহরের বিভিন্ন স্থানে পৃথক হামলায় আরও চারজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে এক মা ও তাঁর মেয়ে রয়েছেন। নিহতদের মরদেহ ইউরোপীয় হাসপাতাল থেকে নেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা গাজার বিভিন্ন অংশে হামলা আরও জোরদার করবে এবং সেখানে "নিরাপত্তা অঞ্চল" গড়ে তুলবে। এরই অংশ হিসেবে, গত ছয় সপ্তাহ ধরে গাজায় খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের প্রবেশ বন্ধ রয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সহায়তা সংস্থাগুলো জানায়— সহস্রাধিক শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগছে এবং বেশিরভাগ মানুষ দিনে একবারও ঠিকমতো খেতে পারছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান ড. হানান বালখি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ইসরায়েল রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবিকে আহ্বান জানিয়েছেন যেন তিনি গাজা অবরোধ তুলে নিতে ইসরায়েলের উপর চাপ প্রয়োগ করেন, যাতে ওষুধ ও অন্যান্য সহায়তা ঢুকতে পারে। তিনি বলেন, “আমি চাই তিনি নিজ চোখে পরিস্থিতি দেখে বুঝুন।”
রাষ্ট্রদূত হাকাবি শুক্রবার জেরুজালেমের পবিত্র পশ্চিমপ্রাচীর পরিদর্শনে যান, যেটিকে ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম পবিত্র স্থান হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি সেখানে একটি প্রার্থনার চিঠি রেখে দেন, যেটি তিনি জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজ হাতে লিখেছেন। হাকাবি বলেন, হামাসের হাতে থাকা বাকি জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা চলছে।
এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাস-নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১,২০০ মানুষকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে অপহরণ করে। পরবর্তীকালে বিভিন্ন অস্ত্রবিরতি ও চুক্তির মাধ্যমে অধিকাংশ জিম্মিকে মুক্ত করা হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরোধ অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫১,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এই যুদ্ধে গাজার অধিকাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে এবং খাদ্য উৎপাদনের প্রায় সব ক্ষমতা শেষ হয়ে গেছে। জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ এখন গৃহহীন হয়ে, তাঁবু বা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বাস করছে। সূত্র: আরব নিউজ
বিডি প্রতিদিন/নাজিম