কানাডা থেকে ঢাকায় পা রেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ওয়ালে ছবি দিয়ে সামিত সোম পোস্ট করেন, ‘দ্য ওয়েট ইজ ওভার’ বা অপেক্ষার অবসান। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ১০ জুন এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলবেন কানাডার জাতীয় দলে খেলা সামিত। শুধু সামিত নন, বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন করে যে উন্মাদনা, যে জাগরণ, তার মূল কারিগর হামজা দেওয়ান চৌধুরী। মাঠে নামার আগেই তারকা দ্যুতিতে জ্বলজ্বলে ফাহামিদুল ইসলামও। তিন প্রবাসী ফুটবল তারকাকে নিয়ে বাংলাদেশের ক্রীড়াপ্রেমীরা এখন নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন। স্বপ্ন দেখছেন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল হওয়ার। স্বপ্ন দেখছেন এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার। এশিয়ান কাপের ফুটবল ইতিহাসে বাংলাদেশ একবারই চূড়ান্ত পর্বে খেলেছে। সেটাও ৪৫ বছর আগে ১৯৮০ সালে। এবার চূড়ান্ত পর্বে খেলার স্বপ্ন দেখানোর কারিগর হামজা, সামিত, ফাহামিদুল, জামাল ভূঁইয়া, তারিক কাজি, কাজেম শাহ, মিতুল মারমা, রাকিব হাসান, সোহেল রানা, তপু বর্মণ, সাদ, তপুরা। হামজারা প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতে গোলশূন্য ড্র করার পর সিঙ্গাপুর ম্যাচ নিয়ে ফুটবল জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ঈদের ছুটি থাকলেও দেশজুড়ে ফুটবল উন্মদনায় ভাসছে। আলোচনায় শুধু ফুটবল আর ফুটবল।
উন্মাদনায় ভেসে যাওয়া ম্যাচটির বাংলাদেশের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা সত্যিই ভাগ্যবান। তিনি তার কোচিংয়ে পেয়েছেন হামজা, সামিত, ফাহামিদুল, জামাল, তারিক কাজি ও কাজিম শাহকে।
১৯৫৫ সালের জানুয়ারিতে ভারত-পাকিস্তান টেস্ট দিয়ে অভিষেক ঢাকা স্টেডিয়ামের। স্বাধীনতার পরও স্টেডিয়ামে ফুটবলই ছিল মূল খেলা। ১৯৮৮ সালের এশিয়া কাপ ক্রিকেটের পর থেকে ধীরে ধীরে ক্রিকেটের মাঠ হয়ে উঠতে থাকে স্টেডিয়ামটি। মিরপুরে ক্রিকেট স্থানান্তরিত হলে ফুটবল ফের ফিরে পায় নিজের ঠিকানা। ঢাকা স্টেডিয়াম এখন পুরোপুরি ফুটবল স্টেডিয়াম। এ মাঠে সর্বশেষ ফুটবল ম্যাচ হয়েছে ৫৪ মাস আগে ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর। এরপর সাড়ে ৪ বছর ধরে স্টেডিয়ামটি সংস্কার হয়েছে। প্রায় দেড় শ কোটি খরচে পুনর্গঠিত স্টেডিয়ামটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হামজা। ৩৬ হাজার আসনের স্টেডিয়ামটিতে প্রথমবার পা রেখে মুগ্ধ নয়নে সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন ইংল্যান্ড প্রবাসী হামজা। অপরূপ সুন্দর স্টেডিয়ামটির ফুটবল ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ। এ মাঠে খেলেছেন লিওনেল মেসির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা, বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতাপুষ্ট নাইজেরিয়া ও অস্ট্রেলিয়া। এবার আলো ছড়াবেন হামজা, সামিতরা। এ মাঠে উপচেপড়া দর্শক হয়েছে। আশি ও নব্বই দশকে ঘরোয়া ফুটবল দেখতে তিল ধারণের ঠাঁই হতো না। ১৯৭৭ সালে আগাখান গোল্ড কাপের ফাইনালে ইরানের সফেদরুদ ও ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন একাদশের খেলা দেখতে গ্যালারির বাইরে মাঠেও দর্শক উপচে পড়েছিল। আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ নিয়ে উন্মাদনা থাকলেও বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোনো ম্যাচ নিয়ে এর আগে এমন উন্মাদনা দেখা যায়নি। ইতিহাসের সাক্ষী হতে একটি টিকিটের জন্য চারদিকে হাহাকার। টিকিটের জন্য হুমরি খেয়ে পড়েছেন সবাই। সবার ঠিকানা এখন ঢাকা স্টেডিয়াম।
এশিয়ান কাপ ফুটবলের বাছাইপর্বে বাংলাদেশ খেলছে ‘সি’ গ্রুপে। গ্রুপের বাকি তিন দল সিঙ্গাপুর, ভারত ও হংকং। চার দলের পয়েন্ট সমান ১। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ২২ ধাপ এগিয়ে থাকা সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে জিতলেই গ্রুপ শীর্ষে উঠে আসবে বাংলাদেশ। র্যাঙ্কিংয়ে সিঙ্গাপুর ১৬১ এবং বাংলাদেশ ১৮৩। দুই দল এখন পর্যন্ত পরস্পরের বিপক্ষে ম্যাচ খেলেছে দুটি। প্রথমবার দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল মারদেকা কাপে। ১৯৭৫ সালের ২ আগস্ট ম্যাচটি ড্র হয়েছিল ১-১ গোলে। দ্বিতীয়বার মুখোমুখি হয়েছে ২০১৫ সালের ৩০ মে। আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচটি সিঙ্গাপুর জিতেছিল ২-১ গোলে। ১০ বছর পর দুই দল ফের মুখোমুখি হচ্ছে। ম্যাচটি ঘিরে গোটা দেশ এখন ফুটবল জ্বরে ভুগছে।