এতদিন জাতীয় দলের খেলা নিয়ে কারও আগ্রহ থাকত না। পরাজয় ছাড়া ফুটবলে বাংলাদেশ কিছুই দিতে পারছিল না। ২০০৩ সালের পর জাতীয় দলের কোনো শিরোপা নেই। ব্যর্থতার বৃত্তে এমনভাবে আটকিয়ে যায় যে, কখনো ঘুরে দাঁড়াবে সে আশাও অনেকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। বারবার কোচ বদল করে কোনো লাভও হচ্ছিল না। আসলে ফুটবল উন্নয়নে যে পরিকল্পনা দরকার সেই ছকও আঁকতে পারছিলেন না দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। শুধু মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন। ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো বাফুফের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর কাজী সালাউদ্দিন বলেছিলেন দেশের ফুটবলকে আমরা এমন জায়গায় নিয়ে যাব। যেখানে এশিয়ার উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করা যাবে।
টানা ১৬ বছর ফুটবলের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করলেও বিতর্ক ছাড়া ফুটবলকে কিছুই দিতে পারেননি সালাউদ্দিন। তিনি থাকা অবস্থায় জনপ্রিয় এ খেলা একেবারে তলানিতে ঠেকেছিল। এতটা খারাপ অবস্থা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ সেমিফাইনাল খেলাটাও স্বপ্নে পরিণত হয়। ব্যর্থতায় ছিল বড় ঠিকানা। জাতীয় দলের চরম দুর্দশা দেখে অনেকে বলতে বাধ্য হয়েছেন মানসম্মান বাঁচাতে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট থেকে বাইরে রাখতে।
সালাউদ্দিন ফুটবলের জন্য কতটা অনিরাপদ ছিলেন। তা প্রমাণ মিলছে তার বিদায়ের পর। সালাউদ্দিন দেশের ফুটবলের অভিভাবকের দায়িত্ব ছেড়েছেন বেশি দিন হয়নি। অথচ এরই মধ্যে পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ফুটবলের পালে যেন নতুন হাওয়া লেগেছে। অনেক বড় কিছু ঘটেনি। তারপর অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া খেলাকে আলো দেখাচ্ছে। নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়ালের কাছে চ্যালেঞ্জই বলা যায়। সালাউদ্দিন যা পারেননি তা কি পারবেন তিনি? তাবিথ ভাগ্যবান যে, সভাপতির দায়িত্ব নিতে না নিতেই ফুটবলে বড় সাফল্য এসেছে। নারী জাতীয় দল সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অবশ্য সালাউদ্দিন দায়িত্ব থাকা অবস্থাতেই এ ট্রফি জিতেছিল বাংলাদেশ। তাই এ ক্ষেত্রে তাবিথকে আলাদা করে কিছু বলার নেই।
জাতীয় দলে প্রবাসী ফুটবলারদের অংশ নতুন কিছু নয়। তবে তাবিথ যা পেয়েছেন তা অতুলনীয়। ইংলিশ লিগে খেলা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার হামজা দেওয়ান চোধুরী প্রথমবার বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলেছেন। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ ড্র করলেও হামজার অলআউট পারফরম্যান্স সবাইকে মুগ্ধ করেছে। সত্যি বলতে কি সেই ফুটবলে নতুন উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। ১০ জুন ঢাকায় সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে শুধু হামজা নয়, কানাডিয়ান প্রবাসী সামিত সোম ও ইতালিতে খেলা ফাহমেদুল ইসলাম খেলতে পারেন। মূলত তাদের ঘিরে ফুটবলে জোয়ার লক্ষ করা যাচ্ছে। আগে গ্যালারি ফাঁকা থাকলেও ১০ জুন ম্যাচ ঘিরে টিকিট নিয়ে হাহাকার। দর্শকরা চান হামজা, সামিতের খেলা দেখতে। কিন্তু টিকিট তো সোনার হরিণ। যারা পাচ্ছেন তারা নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছে। ১০ জুন মিডিয়া ছাড়া পুরো দেশ কোরবানি ছুটি। অথচ এরপরও দেশ উত্তেজনায় কাঁপছে। কারণ একটাই, হামজাদের ম্যাচ।
এসব দেখে কেউ বলছেন ফুটবল তার হারানোর রূপ ফিরে পাচ্ছে। সভাপতি তাবিথও খোশ মেজাজে রয়েছেন। গতকাল এক অনুষ্ঠানে আশা প্রকাশ করেছেন এশিয়া কাপ বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশ পরবর্তী রাউন্ড যাবে। দর্শকদের একই অবস্থা। হামজা, সামিতরা খেলবে বলেই তো প্রত্যাশার পারদ বাড়ছে। বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা অবশ্যই কৃতিত্বের। তাই বলে কি এক সাফল্যে ফুটবল হারানো রূপ ফিরে পাবে? হারানো জৌলুস ফেরানো কি এত সহজ? তাবিথ তো নিজেও ফুটবলার ছিলেন। বিষয়টা তিনিই ভালো উপলব্ধি করতে পারবেন। তাবিথ এমন এক চেয়ারে বসে আছেন। যেখানে অনেক চ্যালেঞ্জ পাড়ি দিতে হবে। সবাই বিশ্বাস করেন তাবিথ এমন কোনো প্রতিশ্রুতি দেবেন না, যা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হলে বড় স্বস্তি। তবে তাবিথের বড় কাজ হচ্ছে সাফে বাংলাদেশকে মর্যাদপূর্ণ আসরে বসানো। একবার চ্যাম্পিয়ন হলে অনেক বন্ধ দুয়ারই খুলে যাবে। সালাউদ্দিন পারেননি। তাবিথের কাছে কি এতটুকু আশা করা যাবে না?