পেশাদার ফুটবল লিগ শেষের দিকে। একটি দলের শিরোপা প্রায় নিশ্চিত হওয়ায় আসর ঘিরে ততটা উত্তেজনা নেই। সব আলোচনা এখন বাফুফের ডিসিপ্লিনারি কমিটি ঘিরে। এ কমিটির কাজ মাঠে শৃঙ্খলা ভাঙলেই দোষী দল বা খেলোয়াড়দের শাস্তির ব্যবস্থা করা। এমন কমিটি থাকাটা খুবই জরুরি। তা না হলে একের পর এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেই চলত। যা ফুটবলের জন্য মঙ্গলকর হতো না। প্রশ্ন উঠেছে ডিসিপ্লিনারি কমিটি কীভাবে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তারা কি সব যাচাইবাছাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়? তারপর কি বাফুফের প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মিডিয়াকে জানানো হয়।
আবারও বলছি বড় কোনো আসরে ডিসিপ্লিনারি কমিটি থাকাটা খুবই জরুরি। আর ফুটবলের বেলায় ফিফার নির্দেশনাও আছে। অপরাধী যেন কোনোভাবে পার পেয়ে যেতে না পারে। তবে এই কমিটি যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা অধিকাংশ সময়ে বিতর্কমুক্ত ছিল না। এবারও তার বাইরে নয়। চলতি পেশাদার লিগে কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ডিসিপ্লিনারি কমিটি বেশ কিছু শাস্তির ব্যবস্থা নিয়েছে। কমিটি এ ক্ষেত্রে তৎপর ছিল। এ নিয়ে তারা ধন্যবাদ পেতে পারেন। তবে প্রশ্ন উঠেছে এ বিচার কতটা নিরপেক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। যারা অন্যায় করেছেন সবাইকে কি শাস্তির আওতায় আনতে পেরেছে? নাকি ছাড় দেওয়া হয়েছে। তা যদি হয়ে থাকে তাহলে শাস্তির গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই তো প্রশ্ন উঠবে।
৯ মে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাফুফে যে শাস্তির তালিকা তুলে ধরেছে তাকে কোনোভাবে সংক্ষিপ্ত বলা যাবে না। প্রথমে আসা যাক বসুন্ধরা কিংসের কোচ মাহবুব হোসেন রক্সি ও আবাহনী ফুটবলার সাদ উদ্দিনের প্রসঙ্গ। অবশ্যই তারা যা শোভনীয় নয় তা করেছেন। কিন্তু পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকবেন। এমন মহা অন্যায় কি তারা করেছেন? মাঠে রক্সি উত্তেজিত ছিলেন তা নিয়ে সন্দেহ নেই। একটি আপত্তিকর ভঙ্গি তিনি প্রদর্শন করেছেন, যা দর্শকদের নজর ও ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে। এ ক্ষেত্রে রক্সি শাস্তি পেতেই পারেন। কিন্তু কোন উত্তেজনায় তিনি কাজটি করেছেন তা কি জানতে চাওয়া হয়েছে। মজার ব্যাপার শুধু রক্সি নয়, যারা শাস্তি পেয়েছেন সবাইকে শোকজ দেওয়া হয়েছে। জবাব পাওয়ার আগেই তাহলে শাস্তি কেন?
রক্সি শাস্তি পেলেন। অথচ তার সামনে এসে আবাহনী ফুটবল দলের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করলেন তিনি কি না রেহাই পেয়ে গেলেন? হয়তো প্রমাণের কথা উঠবে। সে ক্ষেত্রে রক্সিই তো যথেষ্ট। কার গালিতে তিনি উত্তেজিত হয়েছেন। সেটা যদি কমিটিকে জানানো হয় তাহলে তাকে কি শাস্তি আওতায় আনা যাবে? একটা কথা না বললে নয় আবাহনীর এ লোকটি বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছেন। কয়েক বছর আগে স্বাধীনতা কাপ ফাইনালে এ সংগঠক রেফারির সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হয়ে রিজার্ভ বেঞ্চের চেয়ার ভাঙলেন। এরপরও শাস্তি হলো না। কোন প্রভাবে তিনি কুকীর্তিগুলো করে যাচ্ছেন সেটাই রহস্য। ফুটবলার সাদ উদ্দিন ও সোহেল রানাকে মাঠেই লাল কার্ড দেখানো হয়েছে। বলা হচ্ছে এরপরও তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। মানলাম ঘটনা সত্য। আবাহনীর খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা কি সংঘর্ষে জড়াননি? শাহিন আহমেদকে দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ করেই শেষ। জানি না ঘটনা সত্য কি না। ফুটবলপাড়ায় গুঞ্জন উঠেছে লিগে কিংসের শিরোপা জেতার যে ক্ষীণ সম্ভাবনা ছিল তা শেষ করে দেওয়া হয়েছে এসব শাস্তিতে। জরিমানার ক্ষেত্রেও রয়েছে বৈষম্য। এখন ডিসিপ্লিনারি কমিটি কার্যক্রম নিয়ে যদি প্রশ্ন ওঠে তাহলে ভরসা করবে কার ওপর। পুলিশের ম্যাচের দিন মোহামেডানের সানডে ও পুলিশের ড্যানিয়েল হাতাহাতি করেছেন। যা প্রকাশ্যে দেখা গেছে। এরপর তাদের নিষিদ্ধ না করে সতর্ক করা হয় কীভাবে? তাহলে কি আইনের মধ্যেও বিবেচনা রয়েছে?