মানুষ শিগগিরই তার পোষা প্রাণীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে—এমনই এক অভাবনীয় সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে লন্ডনের এক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকস ( এলএসই) সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করতে যাচ্ছে ‘জেরেমি কোলার সেন্টার ফর অ্যানিমেল সেনটিয়েন্স’—যা হবে বিশ্বের প্রথম বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্র। যেখানে পশুর চেতনাশক্তি (অর্থাৎ তারা কীভাবে অনুভব করে ও প্রতিক্রিয়া জানায়) নিয়ে গবেষণা হবে।
এই কেন্দ্রের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে—কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে কীভাবে মানুষ তার পোষা প্রাণীর অনুভূতি বা বার্তা বুঝতে পারে, তা খুঁজে বের করা। গবেষকেরা আশা করছেন, প্রাণীর আচরণ ও চলাফেরার ধরন বিশ্লেষণ করে এমন প্রযুক্তি তৈরি করা যাবে, যা মালিককে তার পোষা প্রাণীর মনের কথা বুঝতে সাহায্য করবে।
তবে এর পাশাপাশি, গবেষণা কেন্দ্রটি এসব প্রযুক্তি ব্যবহারের নৈতিক ঝুঁকি ও অপব্যবহার নিয়েও গভীরভাবে ভাবছে।
এই গবেষণায় স্নায়ুবিজ্ঞান, দর্শন, পশুচিকিৎসা, আইন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আচরণবিজ্ঞান—বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা একত্রে কাজ করবেন। শুধু বিড়াল-কুকুরই নয়, পোকামাকড়, কাঁকড়া এমনকি সামুদ্রিক প্রাণী অক্টোপাস পর্যন্ত থাকবে তাদের গবেষণার তালিকায়।
গবেষণা কেন্দ্রটির প্রথম পরিচালক অধ্যাপক জোনাথন বার্চ বলেন, আমরা আমাদের পোষা প্রাণীর মধ্যে মানুষের মতো আচরণ দেখতে পছন্দ করি। এখন এআই প্রযুক্তির কারণে তারা আমাদের সঙ্গে যেভাবে ‘কথা’ বলবে, সেটা একেবারে নতুন মাত্রা পেতে যাচ্ছে।
তবে তিনি সতর্ক করে আরও বলেন, অনেক সময় এআই এমন উত্তর দেয় যা ব্যবহারকারী শুনতে চায়, কিন্তু বাস্তবতার সঙ্গে মিল থাকে না। যদি এই ‘ভুল তথ্য’ পোষা প্রাণীর ক্ষেত্রে দেওয়া হয়, তাহলে সেটা তাদের কল্যাণের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন—ধরুন, কেউ তার কুকুরকে বাসায় রেখে অনেকক্ষণ বাইরে থাকে। মালিক হয়তো জানতে চায়, তার কুকুর একা থাকায় কষ্ট পাচ্ছে কি না। এই সময় যদি কোনো এআই অ্যাপ তার মনের মতো উত্তর দেয়, অথচ প্রকৃত সত্য না জানায়, তাহলে পোষা প্রাণীর প্রকৃত যত্ন নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
এজন্য বার্চ বলেন, প্রাণীর ক্ষেত্রে এআই ব্যবহারে এখনো কোনো নিয়ম-কানুন বা নীতি নেই। এটা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি চান, এ কেন্দ্র থেকে এমন নৈতিক নির্দেশনা (ethical guidelines) তৈরি হোক যা সারা পৃথিবীতে মেনে চলা হবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল