পৃথিবীর বিমানবন্দর ও সামরিক ঘাঁটিতে ব্যবহৃত রাডার (বেতার তরঙ্গ নির্গমনকারী যন্ত্র) থেকে নির্গত সিগনাল মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ছে। এ ধরনের সিগনাল এতটাই শক্তিশালী যে কাছাকাছি কোনো গ্রহে যদি উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন প্রাণী থেকে থাকে, তারা সেগুলো শনাক্ত করতে পারে—এমনটাই বলছে এক নতুন গবেষণা।
এই গবেষণাটি সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ডারহ্যামে অনুষ্ঠিত রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির জাতীয় সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়। গবেষণায় অংশ নিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের জ্যোতির্বিজ্ঞানী রামিরো সায়দে ও তার দল। তারা যুক্তরাজ্যের হিথ্রো ও যুক্তরাষ্ট্রের জেএফকে বিমানবন্দরের রাডার সিগনালের গতিপথ কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে মহাকাশে কীভাবে তা ছড়িয়ে পড়ে, তা বিশ্লেষণ করেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই রাডার সিগনাল ছড়িয়ে পড়ছে পার্শ্ববর্তী নক্ষত্র যেমন বার্নার্ড’স স্টার ও এইউ মাইক্রোস্কোপির দিকেও। উল্লেখ্য, বার্নার্ড’স স্টার সূর্যের সবচেয়ে কাছের একক নক্ষত্র, যা মাত্র ৬ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। আর এইউ মাইক্রোস্কোপি হলো একটি নবীন গ্রহীয় ব্যবস্থা, যা পৃথিবী থেকে ৩২ আলোকবর্ষ দূরে।
গবেষকরা বলছেন, কোনো গ্রহে যদি উন্নত প্রযুক্তি ও জটিল বিমান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকে, তাহলে তার রাডার সিগনাল এমনভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা অন্য গ্রহে থাকা বুদ্ধিমান প্রাণীদের কাছে সেই গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের বার্তা দিতে পারে। এটাই হতে পারে ‘বুদ্ধিমান প্রাণের একটি স্বাভাবিক সংকেত।’
সামরিক ব্যবস্থায় ব্যবহৃত রাডার সিগনাল আরও বেশি দিকনির্দেশিত ও কেন্দ্রীভূত থাকে, যা বাতিঘরের আলোর মতো একদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তাই এসব সিগনালের মাধ্যমে পৃথিবীর উপস্থিতি আরও স্পষ্টভাবে ধরা পড়তে পারে।
গবেষণার সহ-লেখক অধ্যাপক মাইকেল গ্যারেট বলেন, আমাদের রাডার সিগনাল কীভাবে মহাকাশে ভ্রমণ করে, তা বোঝা গেলে আমরা ভবিষ্যতের রাডার প্রযুক্তি আরও উন্নতভাবে তৈরি করতে পারব এবং রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার আরও নিরাপদ করতে পারব।
গবেষকরা মনে করেন, এই পদ্ধতি ভবিষ্যতে মহাকাশ অনুসন্ধান, গ্রহ প্রতিরক্ষা এবং মহাকাশে মানুষের প্রযুক্তির প্রভাব বিশ্লেষণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
গবেষণা দলের নেতা রামিরো সায়দে বলেন, এই কাজ আমাদের সেই চিরাচরিত প্রশ্নের দিকে নিয়ে যায়—আমরাই কি একমাত্র? পাশাপাশি এটি প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করতে পারে।
এই গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে, অজান্তেই আমরা হয়তো পৃথিবীর অবস্থান জানিয়ে দিচ্ছি মহাকাশের অন্য কোনো সভ্যতাকে। এতে যেমন মহাকাশ অনুসন্ধানে নতুন দিক উন্মোচিত হচ্ছে, তেমনি প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ ব্যবহারে সাবধানতার কথাও উঠে আসছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল