সূর্য আমাদের আলো, তাপ এবং প্রাণ বাঁচিয়ে রাখার পরিবেশ দেয়। কিন্তু এটি চিরকাল সক্রিয় থাকবে না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রায় ৫ বিলিয়ন (পাঁচশো কোটি) বছর পর সূর্যের কেন্দ্রে থাকা হাইড্রোজেন ফুরিয়ে যাবে। তখন এটি ফুলে গিয়ে ‘রেড জায়ান্ট’ (লাল দানব) নামে একটি বিশাল আকার ধারণ করবে, যা পৃথিবীসহ আশপাশের গ্রহগুলোকে গ্রাস করতে পারে।
এই রূপান্তরের ফলে সৌরজগতের বাইরের গ্রহগুলো হয়তো কিছু সময়ের জন্য বাসযোগ্য হয়ে উঠবে, কারণ সেখানে প্রচণ্ড তাপ পৌঁছাবে। তবে এই অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হবে না, বরং কয়েক কোটি বছরের মধ্যেই তা বদলে যাবে।
পৃথিবীর ক্ষেত্রে পরিণতি হবে ভয়াবহ। সূর্যের অতিরিক্ত তাপে পৃথিবীর তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যাবে। সমুদ্র ও অন্যান্য জলাশয় শুকিয়ে যাবে। পানি না থাকায় জীবজগৎ বাঁচা অসম্ভব হয়ে উঠবে। পাশাপাশি, গরমে বাতাসের উপাদানগুলো মহাকাশে হারিয়ে যাবে, ফলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ধ্বংস হয়ে যাবে।
এই ‘রেড জায়ান্ট’ পর্যায় চলবে প্রায় এক বিলিয়ন বছর (১০০ কোটি বছর)। এরপর সূর্য নিজের বাইরের স্তরগুলো ফেলে দেবে এবং ‘হোয়াইট ডোয়ার্ফ’ (সাদা বামন) নামে এক ছোট, ঘনকণা রূপে থেকে যাবে। সেই সঙ্গে সৃষ্টি হবে ‘প্ল্যানেটারি নেবুলা’ (এক ধরনের গ্যাসীয় ধুলো মেঘ)।
এ ধাপে সূর্য আর পৃথিবীকে আগের মতো আলো বা তাপ দিতে পারবে না। তখন পৃথিবীতে প্রাণ টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। সূর্যের এই শেষ পরিণতিই আমাদের পরিচিত সৌরজগতের পরিসমাপ্তি ঘটাবে।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এ অবস্থায় টিকে থাকতে হলে মানুষকে অন্য নক্ষত্র বা গ্রহের সন্ধানে যেতে হতে পারে—যদি তখন প্রযুক্তি সেই সুযোগ দেয়।
এ নিয়ে একটি হলিউড সিনেমা তৈরি হচ্ছে—‘প্রজেক্ট হেইল মেরি’ নামে। এটি অ্যান্ডি ওয়েইয়ারের ২০২১ সালের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। সিনেমায় রায়ান গসলিং এক বিজ্ঞান শিক্ষক চরিত্রে অভিনয় করছেন, যিনি অজান্তে মহাকাশযানে ঘুম থেকে উঠে নিজের মিশন মনে করার চেষ্টা করছেন। তার লক্ষ্য হলো—সূর্যসহ অন্য নক্ষত্রদের মৃত্যু ঠেকিয়ে মানবজাতিকে রক্ষা করা। সিনেমাটি ২০২৬ সালের মার্চে মুক্তি পাবে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সূর্যের এই পরিণতি এখনই চিন্তার বিষয় নয়, কারণ তা ঘটবে কয়েক বিলিয়ন বছর পর। তবে ভবিষ্যতের পৃথিবী ও মানব সভ্যতার জন্য এটি এক গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা—যার প্রস্তুতি একসময় নিতে হতে পারে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল