রাজা সিসিফাসকে বলা হয়েছিল গোলাকৃতির বিশাল ও ভারী পাথরটিকে ঠেলে পাহাড়ের চূড়ায় তুলতে হবে। সিসিফাস প্রতিদিন ভোরে উঠে পাথরটি ওপরের দিকে ঠেলতে শুরু করেন। বিকালের দিকে পাথরটি নিয়ে চূড়ার কাছাকাছি পৌঁছান। আর তখনই পাথরটি নিচে গড়িয়ে পড়ে যায়। সিসিফাস পরদিন আবার সেই পাথর ওপরের দিকে ঠেলতে শুরু করেন। আবার চূড়ার কাছাকাছি পৌঁছান। আবারও সেই পাথরটি গড়িয়ে পড়ে। এভাবে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রতিদিন পাথর ঠেলে পাহাড়ের শৃঙ্গে তুলতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন রাজা। কিন্তু পাথরটি বারবার গড়িয়ে পড়ে যায়। এভাবে রচিত হয় এক অন্তহীন ব্যর্থতার ইতিহাস। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঐকমত্য তথা গণতন্ত্র যেন সিসিফাসের গোলাকার পাথরের মতোই হয়ে গেছে। এ দেশের রাজনৈতিক সমাজ ও জনগণ সেই ভারী পাথরটি পাহাড়ের চূড়ায় তোলার চেষ্টাই করে যাচ্ছে কেবল। কিন্তু সাফল্যের দেখা মিলছে না। চূড়ায় পৌঁছে থিতু হতে পারছে না। সিসিফাসের সেই অন্তহীন ব্যর্থতার পেছনে ছিল দেবতাদের ক্রোধ ও সিসিফাসের নিজের ঔদ্ধত্য! জানি না, কোন অজানা শক্তির ক্রোধের শিকার হয়ে আমরা; আমাদের রাজনৈতিক সমাজের গণতন্ত্রের চেষ্টা, জাতীয় ঐক্যের প্রয়াস ‘শোনাইছে ব্যর্থ পরিহাস!’
দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা ও মতবিনিময়ের পর ১৭ অক্টোবর সাড়ম্বরে স্বাক্ষরিত হয় জুলাই সনদ। ওই সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। অনেকে বলেছেন, ঐতিহাসিক অর্জন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে তিনি বললেন, ‘আমরা বর্বর থেকে সভ্য হলাম।’ বাপরে বাপ! তিনি জ্ঞানী মানুষ। কথাটা বলার সময় একবারও ভাবেননি, একটি দল বা একটি গোষ্ঠী বর্বর হতে পারে। কিন্তু জাতি হিসেবে আমরা বর্বর ছিলাম না। আল্লাহ মানুষের জন্য ভারসাম্যের বিধান দিয়েছেন। কথায় ও কাজে মিজান (ভারসাম্য) রক্ষা করা কর্তব্য। তিনি যে-ই হয়ে থাকুন না কেন!
জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ার পর পনেরো দিনও যায়নি; এরই মধ্যে ঐতিহাসিক সনদটি আজ প্রশ্নবিদ্ধ। সংকট দেখা দিয়েছে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন নিয়ে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছেন, নির্বাচন বানচালের জন্য দেশের ভিতর ও বাইরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাটো নয়, বড় শক্তি নিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হবে। হঠাৎ আক্রমণ চলে আসতে পারে। এ নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। তবে যত ঝড়ঝাপটা আসুক না কেন, আমাদের সেটা অতিক্রম করতে হবে।’ সরকারের নির্বাহীপ্রধান নিজেই যখন বড় শক্তির হঠাৎ আক্রমণের আশঙ্কা করেন, তখন উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রধান উপদেষ্টার কাছে এমন অনেক তথ্য থাকা সম্ভব, যা সাধারণ মানুষের পক্ষে জানা প্রায় অসম্ভব।
বিএনপি খুশি মনে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও এখন বলছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রতারণা করেছে। বিএনপির নোট অফ ডিসেন্ট গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। সর্ববৃহৎ দল হওয়া সত্ত্বেও বিএনপিকে উপেক্ষা করে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির সুপারিশ প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের কারণে একটা ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশন তৈরি হয়েছে। এমতাবস্থায় দ্রুত গণভোট করতে হবে। সরকারকে শিগগিরই গণভোটের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। গণভোট দেরি হলে নির্বাচন পিছিয়ে যাবে। এদিকে এনসিপি এখনো জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি। তা না করলেও বলছে, কালবিলম্ব না করে জুলাই জাতীয় সনদের সংস্কার প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। এই দলের পক্ষ থেকে আরও বলা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির আদেশ, সংবিধান সংস্কার ইত্যাদি আদেশসংবলিত খসড়া দেখে এনসিপি সনদে স্বাক্ষর করবে। রকমসকম দেখে ব্যাকরণ না মানা ইঁচড়েপাকা জেনারেশনের ভাষায় বলা যায়, ‘কিয়েক্টা অবস্থা হইসে!’ এর নাম জাতীয় ঐকমত্য? ‘রথ বলে আমি দেব, পথ বলে আমি। শোনে হাসে অন্তর্যামী।’
পাকিস্তানি জমানার ২৩ বছরের ত্যাগ ও সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ত্যাগতিতিক্ষার বিনিময়ে আমরা পেলাম স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। রক্তস্নাত সেই দেশ ও দেশের মানুষকে অতি দুর্বল ভেবে নানান মহল নিজেদের মতো ডিকটেট করতে চাইছে যেন। এনসিপি ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভাগ্যলিপি পাথরে খোদাই করে দিতে চাইছে। তারা চাইছে নির্বাচনের পর এমন একটি পার্লামেন্ট হবে, যাদের মুখ ও মতপ্রকাশের অধিকার ইলেকশনের আগেই কেড়ে নেওয়া হবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যা যা লিখে দেবে তাতে তারা কেবল বাধ্যতামূলক সম্মতি জানাবে। তারা হবে রাবার স্ট্যাম্প। যদি বেয়াড়াপনা করে তাহলে জাতীয় ঐকমত্যের সনদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। যদি তাই হয়, তাহলে এই পার্লামেন্টের দরকার কী? বলা হচ্ছে গণভোটের কথা। বিএনপি শেষমেশ জুলাই সনদের স্বার্থে গণভোট প্রশ্নে সম্মত হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন বাধাগ্রস্ত না করে একই দিনে গণভোট হয়, হোক। না। গণভোট হতে হবে ইলেকশনের আগে। এর মানে আরেকটা সমস্যা তৈরি করা। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমাকে জিজ্ঞেস করা হলে নির্দ্বিধায় বলব, রেফারেন্ডাম চাই না। রেফারেন্ডাম একটা প্রহসনের নামান্তর। বাংলাদেশের ইতিহাসে যে কয়টি গণভোট হয়েছে সবই হয়েছে সরকারের ইচ্ছাকে বৈধতা দেওয়ার কৌশল হিসেবে। তদুপরি জুলাই সনদ একটি কঠিন বিষয়। এ দেশের মানুষের এক বিরাট অংশ হয় নিরক্ষর না হয় খুবই কম শিক্ষিত। জুলাই সনদ বিস্তারিতভাবে শিক্ষিতদের মধ্যেই বা কয়জন পড়েছেন? বলতে দ্বিধা নেই একালের খুব কমসংখ্যক লোকই পড়তে পছন্দ করেন। সেই দেশের মানুষ আমরা- জুলাই সনদ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে বিচার বিশ্লেষণ করে ব্যালটে হ্যাঁ বা না ভোট দেব- এটা একটা কষ্ট কল্পনা। তারপরও লোক দেখানো একটা গণভোট করতে চান, করুন। কিন্তু গণভোট ইস্যু যদি নির্বাচন অনিশ্চিত করার আশঙ্কা তৈরি করে, তাহলে গণভোট না হওয়াই ভালো। জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে। যেভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে সেভাবেই থাকা উচিত। ফাইনাল স্ক্রিপ্ট তৈরি করতে গিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আবার মুনশিগিরি করতে গেল কেন? নোট অফ ডিসেন্ট অমিটই যদি করা হবে, তাহলে নোট নেওয়া হলো কেন? এসব প্রশ্ন তো উঠবেই। এগুলো ভালো দৃষ্টান্ত নয়।
বস্তুত জুলাই সনদ একটা জেন্টলম্যান অ্যাগ্রিমেন্ট। যে দলই ক্ষমতায় যাক, তারাই এ সনদ মান্যতা দেবে। এটা একটি মরাল অবলিগেশন- নৈতিক বাধ্যবাধকতা। গণতন্ত্রে নৈতিক বাধ্যবাধকতা উপেক্ষিত হয় না। নব্বইয়ের গণ আন্দোলনের সময় তিন জোটের রূপরেখার কোনো আনুষ্ঠানিক সনদ ছিল না। তবু নির্বাচিত পার্লামেন্ট সেই অনানুষ্ঠানিক রূপরেখার নির্দেশনা মেনে দেশে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা চালু করেছিল। কাজেই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে অতটা মাতামাতি না করলেও চলে। তবে এই সনদকে ইস্যু বানিয়ে ইলেকশন বিলম্বিত বা অনিশ্চিত করার কৌশল যদি কোনো মহল করেন তাহলে সেটা সমর্থনযোগ্য নয়। আমরা এমন একটা স্বাধীন পার্লামেন্ট চাই যার চোখকান খোলা থাকবে। জনগণের স্বার্থের প্রশ্ন তারা উপেক্ষা করবেন না। এই বিশ্বাস রাখতে হবে।
২. সংস্কার- একটি সুপরিচিত শব্দ। বহুল ব্যবহৃত ও চর্চিত। দুনিয়ার নানা দেশে, নানান সময়ে সংস্কার হয়েছে। কখনো জনগণের প্রয়োজনে। কখনো বা শাসকগোষ্ঠীর প্রয়োজনে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণ অভ্যুত্থান-উত্তরকালে সংস্কারের আওয়াজ হয়ে ওঠে সর্বব্যাপী। অন্তর্বর্তী সরকার প্রথম ধাপে ছয়টি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও পাঁচটি- মোট ১১টি সংস্কার কমিশন গঠিত হয়। এসব কমিশনে যুক্ত করা হয় সরকারের বিবেচনায় বিশেষজ্ঞদের। জুলাই সনদে অবশ্য বলা হয়, ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল। বাকি পাঁচটি কমিশন কেন বেখবর হয়ে গেল তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। অনুমান করি সেগুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়নি। গুরুত্বহীন বিষয়ে কমিশন কেন গঠন করা হয়েছিল? সে প্রশ্ন কেউ তোলেননি। তবে জনস্বার্থের বিচারে শ্রম, স্বাস্থ্য ও মিডিয়া কমিশন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দৃষ্টি শাসনতন্ত্রের দিকে এবং অতি অবশ্যই জুলাই সনদের ওপর কেন্দ্রীভূত। এ বিষয়ে এই সময়ে এর চেয়ে বেশি কথা না বলাই ভালো। কেননা আর সাড়ে তিন মাস পরেই সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচিত সরকার এলে কোন পর্যায়ে কতটুকু সংস্কারের মাধ্যমে জনস্বার্থ সুরক্ষিত হবে সেটা তখনই দেখা যাবে।
পাকিস্তান আমলেও অনেক বড় ধরনের সংস্কার হয়েছে। জমিদারিপ্রথা বিলোপ করে প্রজাস্বত্ব নিশ্চিত করা না হলে আমরা আজ কোথায় পড়ে থাকতাম!
শোষণের নাগপাশ আমরা ছিন্ন করতে পারতাম না। ঋণ সালিশি বোর্ড না হলে মহাজনী ঋণের অভিশাপ আজও মোচন হতো না। সেই সংস্কারগুলো ছিল নিখাদ জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট। শেখ সাহেবের শাসনামলেও ভূমি সংস্কার হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শ্রম ও কৃষিনির্ভর উৎপাদনমুখী সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। খালকাটা কর্মসূচির ধারাবাহিকতা রক্ষিত হলে এতদিনে বাংলাদেশকে চাল-ডাল, সর্ষে ও সয়াবিনের মতো খাদ্যশস্য আমদানি করতে হতো না। নদী ও খালগুলো মরত না। চীনের হোয়াংহো নদী সংস্কারের সেই বিপ্লবের কথা মনে পড়ে।
১৯৪৯ সালে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতায় আসে যখন দেশটি ছিল দরিদ্র, যুদ্ধবিধ্বস্ত ও প্রযুক্তিগতভাবে অনুন্নত। রাষ্ট্রযন্ত্র তখনো পূর্ণরূপে গঠিত হয়নি। এ অবস্থায় বিশাল প্রকল্প যেমন হোয়াংহো সংস্কার, একমাত্র জনগণের শ্রমেই সম্ভব ছিল। মাও সেতুংয়ের নেতৃত্বে “mass mobilization for nation-building”- এই নীতিই চালু হয়।
১৯৫০-এর দশকে হেনান, শানডং, শানসি, গানসু প্রভৃতি প্রদেশে লাখ লাখ কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র ও সৈন্য স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণে অংশ নেয়। বেলচা, ঝুড়ি, বাঁশের খাঁচা, গরুর গাড়ি- ইত্যাদি নিয়ে পলি সরানো হয়েছে। অনেক জায়গায় একসঙ্গে দশ হাজারেরও বেশি মানুষ একযোগে খনন ও মাটি কেটেছে।
১৯৫৭-৬০ সালে নির্মিত এই বিশাল বাঁধে প্রায় চার লাখ শ্রমিক ও প্রযুক্তিবিদ কাজ করেন, যাদের একটি বড় অংশ স্বেচ্ছাশ্রমিক। সে ছিল এক মহাসংস্কার। সেটা ছিল জনগণের স্বার্থে জনগণের দ্বারা প্রকৃত সংস্কার। সেই বিচারে আমরা এই দেশে কী সংস্কার করতে চাইছি? কাগুজে সংস্কার? আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, হাসপাতাল সবখানেই পুরোনো অচলায়তন। ঘুষ-দুর্নীতি ছিল এবং আছে আগের মতোই। সংস্কার কোথায়? চাঁদাবাজি ছিল। সে-ও আছে। আমরা বলি ওরা দুর্নীতি করত, চাঁদাবাজি করত। আমরা ওদের তাড়িয়ে দিয়েছি। যদি প্রশ্ন করা হয়, এখন তোমরা কি করছ? তাহলে বলব, আমরা কাগজ ঠিক করছি আর ওদের শূন্যস্থান পূরণ করছি। আমরা খুব ভালো। এভাবে চললে সিসিফাসের পাথরের মতো আমাদের চেষ্টাগুলো গড়িয়ে পড়ে যাবে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক
 
                         
                                     
                                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        