ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানপাটসহ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। গতকাল সকাল ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটক এলাকা দিয়ে এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন ডিএসসিসির নির্বাহী হাকিম মো. আমিনুল ইসলাম। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে এস্টেট ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) ফাতেমা বিনতে মুস্তাফা উপস্থিত ছিলেন। জানা যায়, চারটি বুলডোজার দিয়ে উদ্যানে থাকা অবৈধ ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট ও স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। উন্মুক্ত লাইব্রেরিসংলগ্ন যে ঘরটি ছিল সেটাও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযানে শতাধিক দোকানপাট এবং কাঠ ও টিন দিয়ে তৈরি ঘরসহ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এই অবস্থায় তড়িঘড়ি করে ব্যবসায়ীরা তাদের জিনিসপত্র যতটা সম্ভব সরিয়ে নেন।
উচ্ছেদ অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী হাকিম মো. আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নেতৃত্বে গণপূর্ত অধিদপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ থানার পুলিশ ও আনসার সদস্যরা সম্মিলিতভাবে অভিযান পরিচালনা করছি। এটি একটি জাতীয় উদ্যান। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন। সবাই যাতে নির্বিঘ্নে, নিরাপদে চলাফেরা করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যেই আমাদের এই অভিযান। এখানে যেসব অবৈধ স্থাপনা আছে, আমরা উচ্ছেদ করে দিয়েছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট ম্যানেজার ফাতেমা বিনতে মুস্তাফা বলেন, আমরা ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করতে এ অভিযান পরিচালনা করেছি। যেখানে বিভিন্ন অংশীজন সহায়তা করেছেন। আমরা উদ্যানের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে চাই। তবে এ ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা দরকার হবে। আশা করছি, সবাই সেটি করবেন।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভিতর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা সাম্য (২৫) ছুরিকাঘাতে নিহত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পড়তেন। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশন গত বুধবার বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়। এগুলো হলো-টিএসসিসংলগ্ন উদ্যানের ফটকটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ, মাদক কারবার বন্ধ ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, ডিএমপি (ঢাকা মহানগর পুলিশ) ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালিত হবে। নিয়মিত নজরদারি ও অভিযানের জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। উদ্যানে পর্যাপ্ত আলো ও ক্লোজড সার্কিট (সিসি) টিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং সেগুলোর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হবে। শুধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ বক্স স্থাপন করা হবে। রমনা পার্কের মতো সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও চালু করা হবে। রাত ৮টার পর উদ্যানে জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে।