বিদেশি শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময়সীমা সীমিত করার পদক্ষেপ নিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। ক্রমবর্ধমান অভিবাসন প্রত্যাশীর চাপ সামাল দিতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি নতুন নিয়মের প্রস্তাব দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
প্রস্তাবিত পরিবর্তন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে আসা শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ চার বছর দেশটিতে থাকতে পারবে। অন্যদিকে, বিদেশি সাংবাদিকদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময়সীমা ২৪০ দিন করা হবে। অবশ্য তারা আরও ২৪০ দিনের জন্য আবেদন করে মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ থাকবে।
এখন পর্যন্ত সাধারণত একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের পুরো সময়কাল বা একজন সাংবাদিকের কাজের মেয়াদ অনুযায়ী ভিসা দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও কোনো অভিবাসী ভিসা ১০ বছরের বেশি সময়ের জন্য বৈধ নয়।
এই প্রস্তাবটি ফেডারেল রেজিস্টারে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রস্তাবটি কার্যকর হওয়ার আগে সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া হবে।
মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির অভিযোগ, বহু সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনার সময়সীমা অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়ান। এরপর বছরের পর বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেন।
এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, অনেক বছর ধরে পূর্ববর্তী সরকারগুলো বিদেশি শিক্ষার্থী ও অন্যান্য ভিসাধারীদের প্রায় অনির্দিষ্ট সময় যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে দিয়েছে। এর মাধ্যমে আমেরিকার নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এছাড়া, এর মাধ্যমে করদাতাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হচ্ছে এবং মার্কিন নাগরিকদের অসুবিধা হচ্ছে।
অবশ্য, বিদেশি শিক্ষার্থীরা কীভাবে মার্কিন নাগরিক বা করদাতাদের ক্ষতি করছে তার কোনো প্রমাণ দেখানো হয়নি। বরং মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিদেশি শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অবদান রেখেছে।
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে ১১ লাখেরও বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী পড়তে এসেছে। এই সংখ্যা বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। এই শিক্ষার্থীরা সাধারণত পূর্ণ টিউশন ফি দেয়, যা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস।
সেই কারণেই ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ৫৫০টিরও বেশি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানদের সংগঠন অ্যালায়েন্স অন হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড ইমিগ্রেশন। এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য হলো অভিবাসী, নথিপত্রহীন বিদেশি শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা ও তাদের পক্ষে কাজ করা।
সংগঠনটি বলছে, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত এই নিয়ম অপ্রয়োজনীয় জটিলতা তৈরি করবে। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধার সৃষ্টি হবে। এতে ভবিষ্যতের মেধাবী বিদেশি শিক্ষার্থীরা আমেরিকায় পড়তে আসতে নিরুৎসাহিত হবে।
সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট মিরিয়াম ফেল্ডব্লাম বলেন, এই প্রস্তাব বিদেশি মেধাবী ব্যক্তিদের কাছে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের অবদানের কোনো মূল্য নেই। এই প্রস্তাব কেবল বিদেশি শিক্ষার্থীদেরই ক্ষতি করবে না। এর মাধ্যমে প্রতিভাবান শিক্ষার্থীরা আমাদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার আকর্ষণ হারাবে।
বিডি প্রতিদিন/কেএ