রংপুর নগরের প্রাণ কেন্দ্র দিয়ে বয়ে যাওয়া শ্যামাসুন্দরী খাল ঘিরে আশার আলো দেখা দিয়েছে। খাল সংস্কারের জন্য ১৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে এই আশায় গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে খালের দুই পাশের অবৈধ দখলদাররা। দীর্ঘদিন থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের আন্দোলন চলে এলেও খালের দখলদারদের উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পুনঃখনন, দূষণ রোধ, ড্রেনেজ ও বনায়নের কাজ হাতে নেওয়া হচ্ছে খালটি ঘিরে। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে এটি সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করবে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড, রংপুর সিটি করপোরেশন ও রংপুর বন বিভাগ। ১৪ আগস্ট জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় শ্যামাসুন্দরী খাল পুনঃখনন দূষণ রোধ ও বনায়ন শীর্ষক প্রকল্পটির প্রশাসনিক অনুমোদন দেয় জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট। শ্যামাসুন্দরী খালের প্রবেশ মুখ ঘাঘট নদ থেকে নগরের রেলব্রিজ পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার পুনঃখনন, দূষণ রোধ ড্রেনেজ ও বনায়ন করা হবে। বরাদ্দকৃত ১৪ কোটি টাকার মধ্যে পুনঃখননের জন্য রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড ৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, দূষণ রোধ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার জন্য রংপুর সিটি করপোরেশন ৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ও খালের দুই পাশে বনায়ন বাবদ রংপুর বন বিভাগের জন্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান। টেন্ডার হয়ে গেলে আগামী নভেম্বর অথবা ডিসেম্বরে কাজ শুরু হওয়ার কথা। নগরের মাহীগঞ্জ পাটবাড়ি পর্যন্ত খালের দুই পাশের প্রায় ১০ কিলোমিটার সংস্কার কাজ হাতে নেওয়া হয়। এর জন্য আগে রংপুর বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় হাল জরিপ করা হয়েছে। মৌজাভিত্তিক কেল্লাবন্দ, রাধাবল্লভ, আলমনগর, রঘুনাথগঞ্জ ও ভগি এলাকার ১৭০ জনকে অবৈধ দখলদার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ১৭০ অবৈধ দখলদারের মধ্যে ১১ জন আপত্তি দিয়েছে। তাদের আপত্তির কারণে উচ্ছেদ অভিযান হয়নি। এটি ঘাঘট নদ থেকে শুরু করে ধাপ পাশারী পাড়া, কেরানী পাড়া, মুন্সি পাড়া, ইঞ্জিনিয়ার পাড়া, গোমস্তা পাড়া, সেনপাড়া, মুলাটোল, তেঁতুলতলা, নূরপুর, বৈরাগী পাড়া হয়ে মাহিগঞ্জের মরা ঘাঘটের সঙ্গে যুক্ত। দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার না করায় খালটি নাব্য হারিয়ে ফেলে। দুই পাশ দখল হয়ে যাওয়ায় সংকীর্ণ হয়ে পড়ে খালটি। সামান্য বৃষ্টিতেই গোটা শহরে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। শ্যামাসুন্দরী খাল পরিষ্কার করতে নগরবাসী বিভিন্ন সময় আন্দোলন, সভা-সমাবেশ করলে আশ্বাস ছাড়া কিছুই জোটেনি। নগরের মধ্যে ১৫ দশমিক ৮০ কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত। এলাকাভেদে এর প্রস্থ ২৩ থেকে ৯০ ফুট। রংপুর সিটি করপোরেশন ও বিভাগ হওয়ার পর থেকে নগরে জনসংখ্যা বেড়েছে। শ্যামাসুন্দরী দখল করে তৈরি হওয়া বড় বড় অট্টালিকা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, রেস্টুরেন্ট ও আবাসিক ভবনের আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষিত করা হচ্ছে। এতে করে খাল ভরাট হয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং দুর্গন্ধ ছড়ানোসহ নগরীতে মশা-মাছির উপদ্রব বেড়েছে। খাল সংকুচিত হওয়ায় পানিপ্রবাহের মূলধারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, শ্যামাসুন্দরী খালের পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য ১০ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হবে। এ জন্য দখলদারদের উচ্ছেদ প্রক্রিয়া চলমান।