রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহনে শিগগিরই শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশ্বাস দিয়েছে সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে এক পোস্টে বলা হয়, রাজধানী ঢাকায় চলাচলকারী বাসগুলো শিগগিরই একক ব্যবস্থার অধীন চলবে। বাস কোম্পানিগুলোকে নির্ধারিত রুট ও স্টপেজ মেনে চলতে হবে। এতে রুটে শৃঙ্খলা ফিরবে, পরিবহনব্যবস্থা হবে সুষ্ঠু ও নিরাপদ। ভাড়ায় প্রতারণা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি কমে আসবে।
ভয়াবহ যানজট ও গণপরিবহনে নৈরাজ্য রাজধানী ঢাকার চিরাচরিত দৃশ্য। ঢাকায় যানবাহনের গতির চেয়ে মানুষের হাঁটার গতি বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকায় ২০০৭ সালে এক ঘণ্টায় একটি গাড়ি ২১ কিলোমিটার যেতে পারত। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে। অন্যদিকে বর্তমানে মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৪ দশমিক ১৫ কিলোমিটার, যা যানবাহনের গতির চেয়ে বেশি। সড়কেই কেটে যায় মানুষের অধিকাংশ কর্মঘণ্টা। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ২০১৫ সালে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে রুটভিত্তিক কোম্পানির অধীনে বাস সেবা চালুর উদ্যোগ নিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। এরপর গত ১০ বছরে একাধিক কমিটি গঠন ও দফায় দফায় মিটিং এ সংকটের সমাধান দিতে পারেনি। ২০২১ ও ২০২২ সালে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি রুটে পরীক্ষামূলক নগর পরিবহন চালু করা হলেও নানা সমস্যায় তা মুখ থুবড়ে পড়ে।
প্রধান উপদেষ্টার পোস্টে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার বাস পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণহীনভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। ফলে প্রতিদিন যাত্রীরা যানজট, দুর্ঘটনা, ভাড়ায় প্রতারণা ও নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তুলনামূলকভাবে তরুণ ও শারীরিকভাবে সক্ষম যাত্রীরা কোনোমতে বাসে উঠতে পারলেও নারী, শিশু ও প্রবীণদের জন্য এ ভ্রমণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অত্যন্ত কষ্টকর। রাজধানীর যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ হলো অনুপযোগী রুটে চলাচলকারী বাস। এ সমস্যার কারণে বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে এবং প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে প্রায় ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা। এ অবস্থায় সব বাসকে একক ব্যবস্থার অধীনে আনা হবে। কোম্পানিগুলোকে নির্ধারিত রুট ও স্টপেজ মেনে চলতে বাধ্য করা হবে। এতে রুটে শৃঙ্খলা ফিরবে, পরিবহন ব্যবস্থা হবে সুষ্ঠু ও নিরাপদ এবং ভাড়ায় প্রতারণা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি কমে আসবে।
প্রধান উপদেষ্টার ওই পোস্টে অনেকেই মন্তব্য করে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তবে সরকার এ উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারবে তা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। মিজান বিন মজিদ নামের একজন লিখেছেন, ‘যদি সাফল্যের সঙ্গে এটি করতে পারেন, তবে হাজার সমালোচনা নিমিষেই মুছে যাবে।’ তথ্যানুযায়ী, ২০১৫ সালে প্রথম ঢাকায় রুটভিত্তিক কোম্পানির অধীনে বাসসেবা চালুর বিষয়টি সামনে আনেন ডিএনসিসির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। তখন আনিসুল হককে আহ্বায়ক করে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি গঠন করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন বলা হয়েছিল, ঢাকার পুরোনো ও জরাজীর্ণ বাসগুলো সরিয়ে ৪ হাজার নতুন বাস নামানো হবে। ২০১৬ সালে প্রথম চিন্তা করা হয় ঢাকার বাসগুলোকে একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির আওতায় আনার। এ ব্যাপারে ২০১৮ সালে গঠিত ১০ সদস্যের কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রকে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয় ঢাকা উত্তর সিটির মেয়রকে। ওই কমিটি ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত (২১ নম্বর রুট) ঢাকা নগর পরিবহন চালু করে। এরপর দ্বিতীয় দফায় ২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর ঘাটারচর থেকে নারায়ণগঞ্জের পাগলা (২৬ নম্বর রুট) ও ঘাটারচর থেকে রাজধানীর উত্তরায় (২২ নম্বর রুট) আরেকটি সেবা চালু করে। এসব রুটে বিআরটিসির ৪০টি দ্বিতল বাসসহ বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির দেড় শতাধিক বাস যাত্রী পরিবহন করত। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আগের সেবাগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি নতুন করে উদ্যোগ নিলেও আর চালু হয়নি।