রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ও সহযোগিতায় যুক্ত দেশগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। মূলত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও যে সমস্ত দেশের সহযোগিতায় রাশিয়া বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ওপরই এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে।
বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক দশকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। গত মাসেও ইইউ মস্কোর ওপর ১৮তম নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ পাস করে। এবার ১৯তম প্যাকেজ নিয়েও কাজ চলছে, যা আগামী মাসে কার্যকর হতে পারে।
প্রতিবেদনটিতে একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, রাশিয়াকে সরাসরি আঘাত করার মতো আর কোনো পথ ইইউয়ের হাতে নেই। সে কারণেই এবার রাশিয়ার মিত্র দেশগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা ভাবছে ইইউ।
ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, রাশিয়ার ওপর সরাসরি নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে ইইউ তাদের শেষ সীমায় পৌঁছেছে।
এ সপ্তাহের শেষে কোপেনহেগেনে একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বসবেন ইইউয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। সেখানে তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে। ২০২৩ সালে গৃহীত একটি অ্যান্টি-সারকামভেনশন টুল পুনরায় পর্যালোচনার কথা রয়েছে। এই টুলটি ব্যবহার করে রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সাহায্যকারী দেশগুলোতে নির্দিষ্ট পণ্যের রফতানি, সরবরাহ বা হস্তান্তর বন্ধ করা যেতে পারে।
এছাড়া, ইইউয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রাশিয়ার তেল, গ্যাস এবং আর্থিক খাতের পাশাপাশি দেশটির পণ্যের বাণিজ্যে নতুন করে সীমা আরোপের বিষয়েও ভাবছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
মস্কো বারবার বলে আসছে, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়ার চেয়ে ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্যই বেশি ক্ষতিকর।
ইইউয়ের এই নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়ার অর্থনীতিকে পঙ্গু করতে এবং বিশ্ব বাণিজ্য থেকে দেশটিকে বিচ্ছিন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ নিষেধাজ্ঞার কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর বিকল্প হিসেবে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং অন্যান্য বাজারে নিজেদের বাণিজ্য বিস্তার করেছে মস্কো।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইইউ কর্মকর্তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মস্কোর বাণিজ্যিক মিত্রদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে চাপ দিয়েছেন। কিন্তু মস্কোর ওপর আপাতত কোনো বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পক্ষে নয় ট্রাম্প প্রশাসন।
অবশ্য এর আগে রাশিয়ার মিত্র ব্রিকস দেশগুলোর ওপর পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে এখন পর্যন্ত শুধু ভারতের ওপর শুল্পের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারত থেকে রফতানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এই শুল্ক আরোপকে অন্যায্য এবং অযৌক্তিক বলে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ভারত। নয়াদিল্লি যুক্তি দিয়েছে যে, পশ্চিমা দেশগুলো নিজেরাই মস্কোর সাথে আরও বেশি ব্যবসা করে।
ভারতের দাবি, জাতীয় স্বার্থে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করছে তারা। ভোক্তাদের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি পৌঁছে দিতে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে দেশটি।
বিডি প্রতিদিন/কেএ