পলিথিনের ভয়াবহ কুফলের কথা বর্ণনা করে পাট, কাগজ ও কাপড়সহ এর অন্যান্য বিকল্প ব্যবহারের আহ্বান জানালেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বুধবার বৃক্ষমেলা ও পরিবেশ মেলা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা জানান, প্লাস্টিক দূষণ রোধে নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে; সুপারশপগুলো শতভাগ পলিথিনমুক্ত হয়েছে। একবার ব্যবহারযোগ্য ১৭টি প্লাস্টিক পণ্যে নিরুৎসাহ এবং সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন চলছে। EPR ও 3R নীতির বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার।
এর আগে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা ২০২৫ এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও জাতীয় বৃক্ষমেলা-২০২৫ এর উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
পরিবেশ মেলা চলবে ২৫ থেকে ২৭ জুন এবং বৃক্ষমেলা চলবে ২৫ জুন থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
অনুষ্ঠানে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের চলমান ও অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন পরিবেশ উপদেষ্টা।
পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, পরিবেশ প্রশাসনে গতিশীলতা, জবাবদিহিতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ১৯২৭ সালের বন আইন, ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও জীববৈচিত্র্য আইনের সংস্কার চলছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।
উপদেষ্টা জানান, নদী সংরক্ষণে চূড়ান্ত করা হয়েছে দেশের নদ-নদীর তালিকা। তুরাগসহ ঢাকার চারটি নদী ও ২০টি খালের জন্য ব্লু-নেটওয়ার্ক পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে। বড়াল, করতোয়া, সুতাংসহ ১৫টি নদীর পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নদীর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় চালু হচ্ছে ‘হেলথ কার্ড’।
তিনি বলেন, বন সংরক্ষণে মধুপুর শালবন ও চুনতি বন পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে। অবৈধ দখলমুক্ত হয়েছে ১১,৪৫৯ একর বনভূমি। সোনাদিয়া উপকূলীয় বন ও রাজশাহীর দু’টি জলাভূমিকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে “নো-ব্রিকফিল্ড জোন” গঠন ও পুরনো যানবাহন নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের জন্য পৃথক ক্যাডার গঠনের প্রস্তাব, অনলাইন মনিটরিং চালু, বন অধিদপ্তরে বন্যপ্রাণী উইং গঠন এবং বনকর্মীদের ঝুঁকিভাতা প্রদানের উদ্যোগের কথাও উল্লেখ করেন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, গত আগস্ট থেকে ১৭১৭ একর বনভূমি উদ্ধার ও ২০০০ ইটভাটা বন্ধ করা হয়েছে। নির্মাণে ব্লক ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা কার্যকর করা হচ্ছে।
বন সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে শালবন সংরক্ষণ, সুফল প্রকল্প, সামাজিক বনায়ন, বিপন্ন বন্যপ্রাণী রক্ষায় দল গঠন, বননির্ভর জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন এবং ওয়াইল্ডলাইফ অলিম্পিয়াড আয়োজনের মতো কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে সরকার।
তিনি এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য “প্লাস্টিক দূষণ আর নয়” এবং স্লোগান “প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়”-কে সময়োপযোগী উল্লেখ করে বলেন, “জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।”
উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যের শেষে বলেন, “পরিবেশ সুরক্ষা শুধু দায়িত্ব নয়, আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন। এই উদ্যোগ আমাদের সকলকে সচেতন ও সক্রিয় ভূমিকা নিতে উৎসাহিত করবে।”
এ সময় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যবৃন্দ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদসহ সরকারের সচিববৃন্দ; বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ; মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর; প্রধান বন সংরক্ষক, বন অধিদপ্তর; সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ; বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণে জাতীয় পুরস্কার, বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার এবং জাতীয় পরিবেশ পদক প্রাপ্ত সুধিজন; সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ; প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ ও তরুণ ও যুব সমাজের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ সংরক্ষণ, বৃক্ষরোপণ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে অবদানের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে পুরস্কার ও লভ্যাংশ তুলে দেওয়া হয়।
পরে পরিবেশ উপদেষ্টা ফিতা কেটে বৃক্ষমেলা ও পরিবেশ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন এবং বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত