দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রবিউল ইসলাম ঈদের ছুটিতে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় সরকারি সফর করেছেন। ৯ থেকে ১২ জুন ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকলেও ছুটির মধ্যে তিন জেলায় সরকারি সফরে ছিলেন তিনি। সফরে তার সঙ্গে ছিলেন পরিবারের সদস্যরা। তিন জেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক করার কথা ছিল; কিন্তু কোথাও সেই বৈঠক হয়নি। প্রকল্প পরিদর্শনের কথা থাকলেও তা–ও হয়নি।
যদিও ৪ জুন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব শরিফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে ৯ থেকে ১২ জুন পর্যন্ত সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে তাঁর ভ্রমণসূচি জানানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রণালয়ের চলমান/বাস্তবায়নাধীন ও প্রকল্পসমূহ/কর্মসূচির সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া প্রকল্পসমূহ সরেজমিন পরিদর্শনের কথাও বলা হয়েছে চিঠিতে।
সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের দুজন কর্মকর্তা জানান, এটি ছিল মূলত আনন্দভ্রমণ। তিনি যখন এ অঞ্চলে আসেন, তখন ছিল সরকারি ছুটি। সরকারি অর্থে পরিবার নিয়ে বেড়ানোর কাজটি মূলত সেরেছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রবিউল ইসলাম বলেন, তাঁদের প্রকল্পগুলোর মেয়াদ জুনে শেষ হয়ে যায়। হাতে সময় কম। তাই সিলেট অঞ্চলের প্রকল্পগুলো দেখা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে একটু বেড়ানো—একসঙ্গে দুই কাজ সারতে চেয়েছেন তিনি। ছুটির সময়ে তিনি কোনো কর্মকর্তাকে চাপ দেননি। যাঁদের থাকা সম্ভব হয়েছে, তাঁরাই কেবল ছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হোটেলে থাকা ও বাইরে বেড়ানোর খরচ তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে বহন করা হয়েছে। তবে তাঁর ব্যবহৃত গাড়িটি ছিল মন্ত্রণালয়ের।
৪ জুন মন্ত্রণালয়ের দেওয়া চিঠিতে পরিদর্শনকালে যানবাহনসহ সার্বিক সহযোগিতা করতে অনুরোধ করা হয় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের। এ ছাড়া পরিদর্শনকালে সার্বিক সহযোগিতা করতে বলা হয় জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তাদের।
৪ জুনের ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত তারিখে চলমান ও বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতির প্রতিবেদনসহ জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিত থাকতে সংশ্লিষ্ট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তারা চিঠিও দেন। অবশ্য এসব বৈঠকের একটিও হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৯ জুন বিকেলে অতিরিক্ত সচিব মো. রবিউল ইসলাম স্ত্রী ও এক সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে সিলেট সার্কিট হাউসে আসেন। তিনি ৯ থেকে ১১ জুন জেলাটিতে অবস্থান করেন। এ সময় তিনি সপরিবার জেলার জাফলং ও সাদা পাথরসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে দেখেন।
১২ জুন বিকেলে মৌলভীজারে আসেন অতিরিক্ত সচিব মো. রবিউল ইসলাম ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা ছিলেন শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড সুলতানে। জানা গেছে, তিনি ওই রিসোর্টের যে কক্ষে ছিলেন, সেই কক্ষের ভাড়া ছিল ২৮ হাজার টাকা। ১২ জুন মৌলভীবাজারে অবস্থানকালে তিনি শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখেন। তিনি মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থানকালে তাঁর থাকা–খাওয়া সব খরচ জেলা ত্রাণ কর্মকর্তাসহ প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পরিশোধ করেন বলে একটি সূত্রের ভাষ্য।
মৌলভীবাজার জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছাদু মিয়া বলেন, তিনি (অতিরিক্ত সচিব) শ্রীমঙ্গল এসেছিলেন বেড়াতে। একদিন গ্র্যান্ড সুলতানে অবস্থান করেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। তবে কোনো প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন বা প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে কোন সভা হয়নি।
১৩ জুন হবিগঞ্জ সার্কিট হাউসে আসেন অতিরিক্ত সচিব মো. রবিউল ইসলাম। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তিনি ছিলেন হবিগঞ্জ সার্কিট হাউসে। হবিগঞ্জে এক দিন অবস্থানের পর আজ শনিবার সকালে তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
হবিগঞ্জের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আজাদের রহমান বলেন, অতিরিক্ত সচিব দ্য প্যালেসে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তবে কক্ষ না পাওয়ায় তাঁকে সেখানে রাখতে পারেননি। তা ছাড়া হবিগঞ্জ সার্কিট হাউসের ভিআইপি কক্ষে তখন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ছিলেন। যে কারণে তিনি হবিগঞ্জে বেশি অবস্থান না করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। সূত্র : প্রথম আলো
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন