দেশে থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে প্রতিদিন অন্তত ২০টি শিশুর জন্ম হচ্ছে। গত এক দশক আগে এ সংখ্যা ছিল ১০টির নিচে। এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন। রক্তরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ রোগ নিয়ে তেমন জনসচেতনতা না থাকায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করছে না কেউ। এছাড়া, বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া বাহকের সংখ্যা বাড়ছে। তারা বলছেন, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে দুই বাহকের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করাই একমাত্র উপায়। থ্যালাসেমিয়া রোগ এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতিবছর ৮ মে ‘বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস’ পালন করা হয়।
দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘থ্যালাসেমিয়ার জন্য সামাজিক ঐক্য গড়ি, রোগীর অগ্রাধিকার নিশ্চিত করি’।
বিশ্বের ১.৫ শতাংশ মানুষ থ্যালাসেমিয়া বহন করছে। অর্থাৎ ৮ থেকে ৯ কোটি মানুষ এই রোগের বাহক। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় থ্যালাসেমিয়ার প্রাদুর্ভাব ৩-১০ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, থ্যালাসেমিয়ার বাহক দেশের প্রায় এক কোটি ৮২ লাখ মানুষ, যা মোট জনসংখ্যার ১১.৪ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলে থ্যালাসেমিয়ার বাহক ১১.৬ শতাংশ এবং শহরে ১১.০ শতাংশ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, থ্যালাসেমিয়া বাহকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি রংপুরে ২৭.৭ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রাজশাহীতে ১১.৩ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে থাকা চট্টগ্রামে ১১.২ শতাংশ।
এছাড়া, ময়মনসিংহে ৯.৮ শতাংশ, খুলনায় ৮.৬ শতাংশ, ঢাকায় ৮.৬ শতাংশ, বরিশালে ৭.৩ শতাংশ ও সিলেটে সবচেয়ে কম ৪.৮ শতাংশ। ১৪ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে এই বাহক রয়েছে ১১.৯ শতাংশ, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মাঝে ১২ শতাংশ, ২৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মাঝে ১০.৩ শতাংশ ও ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের মাঝে ১১.৩ শতাংশ।
থ্যালাসেমিয়া বাহকরা ত্রুটিপূর্ণ জিন বহন করলেও তারা নিজেরা কখনো থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হন না। তবে এই বাহকরা কখনো কখনো স্বল্প মাত্রার অ্যানিমিয়ায় ভুগতে পারেন। কারণ তাদের রক্তের লোহিত কণিকার আকৃতি স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট। আর এ ধরনের অ্যানিমিয়ার জন্য সাধারণত কোনো চিকিৎসাও নিতে হয় না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই বাহকের মধ্যে বিয়ে হলে তাদের সন্তানদের ২৫ শতাংশ সুস্থ হয় (বাহকও হয় না), ৫০ শতাংশ বাহক হয় এবং বাকি ২৫ শতাংশ থ্যালাসেমিয়া রোগী হয়ে জন্ম নেয়। অন্যদিকে, একজন বাহক ও একজন বাহক নন— এমন স্বামী ও স্ত্রীর সন্তানদের মধ্যে ৫০ শতাংশ বাহক না হয়ে বাকি ৫০ শতাংশ বাহক হয়ে জন্ম নেয়।
তারা বলছেন, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তের রোগ। এই রোগ হলে রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদন প্রয়োজনের চেয়ে কম পরিমাণে হয় বা একেবারেই হয় না। এই হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমে লোহিত রক্তকণিকা দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ করে। শরীরের ভেতরে অক্সিজেন চলাচল কম হওয়ায় শারীরিকভাবে দুর্বল বোধ করেন থ্যালাসেমিয়া রোগীরা। তাদের ত্বক ফ্যাকাসে দেখায় ও তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়। এছাড়া, অরুচি, জন্ডিস, বারবার সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়া, পেট ব্যথা এবং শারীরিক বৃদ্ধিতে ধীরগতির মতো উপসর্গও দেখা যায়।
চিকিৎসকরা বলছেন, থ্যালাসেমিয়া এমন একটি রোগ, যার জন্য আজীবন চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয় রোগীদের। প্রতি মাসে তাদের রক্তের জোগান ও ওষুধ কিনতে একজন রোগীর সর্বনিম্ন ১৩ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। এতে আর্থিক সংকটে পড়ে অনেক পরিবার। এছাড়া, রোগী আজীবন পারিবারিক ও সামাজিক অবহেলার মধ্যে থাকে।
গতকাল বুধবার বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের অডিটরিয়ামে আন্তর্জাতিক থ্যালাসেমিয়া দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি।
বিডি প্রতিদিন/কেএ