প্রশান্ত মহাসাগরের মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের জেমো আইলেট ও বিকার এটল দ্বীপ দীর্ঘদিন ধরে ইঁদুরে আক্রান্ত ছিল। শত শত বছর আগে জাহাজের মাধ্যমে আনা এই ইঁদুরগুলো দ্বীপের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যকে প্রায় ধ্বংস করে দেয়।
খবর অনুসারে, তারা কচ্ছপের ডিম, ছোট কাঁকড়া, পাখির ছানা ও গাছের চারা খেয়ে ফেলত। ফলে একসময় পাখি আর কচ্ছপে ভরা এই দ্বীপগুলো প্রায় প্রাণহীন হয়ে পড়ে।
২০২৪ সালে মার্কিনভিত্তিক পরিবেশ সংস্থা আইল্যান্ড কনজারভেশন মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে মিলে ইঁদুর নির্মূলের উদ্যোগ নেয়। ড্রোন ব্যবহার করে দ্বীপজুড়ে বিশেষ খাবার ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যা শুধুমাত্র ইঁদুরকে টার্গেট করে। প্রায় এক বছর নজরদারির পর নিশ্চিত হওয়া গেছে, দ্বীপ দুটি এখন সম্পূর্ণ ইঁদুরমুক্ত।
ফলাফলও চোখে পড়ার মতো। বিকার দ্বীপে যেখানে আগে একটি পাখিও ছিল না, সেখানে এখন প্রায় দুই হাজার ‘সুটি টার্ন’ ( একধরনের সামুদ্রিক পাখি) কলোনি গড়ে তুলেছে। দেখা গেছে নতুন প্রজাতির পাখি যেমন ক্রিসমাস শিয়ারওয়াটার, আবার ফিরেছে বাদামী নডি ও গ্রেটার ক্রেস্টেড টার্ন। দ্বীপজুড়ে দেখা যাচ্ছে হাজার হাজার ‘পিসোনিয়া গ্র্যান্ডিস’ (এক ধরনের স্থানীয় বৃক্ষ) গাছের চারা, যেগুলো আগে একেবারেই ছিল না।
এছাড়া, কাঁকড়া ও টিকটিকি প্রজাতি আবার ফিরে এসেছে। সামুদ্রিক পাখিদের বিষ্ঠা মাটিকে উর্বর করছে, কাঁকড়া সমুদ্রে লার্ভা ছাড়ছে—ফলে পুরো পরিবেশব্যবস্থা ধীরে ধীরে আগের ভারসাম্যে ফিরছে।
জেমো দ্বীপ সবুজ কচ্ছপের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজননক্ষেত্র। ইঁদুরমুক্ত হওয়ার পর স্থানীয়রা আশা করছে, কচ্ছপের সংখ্যা আবার বাড়বে। দ্বীপের কাছে বসবাসকারী লিকিয়েপ ও উত্রিক এলাকার মানুষ আগে মাছ ধরা, নারকেল ও পাতা সংগ্রহের জন্য এসব দ্বীপ ব্যবহার করত। প্রকৃতি পুনরুদ্ধারের ফলে তারা আবার সেই ঐতিহ্যে ফিরতে পারবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেমো ও বিকারের সফলতা ভবিষ্যতে অন্যান্য দ্বীপে একই ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার পথ খুলে দিয়েছে। ইতোমধ্যে বিকারের মতোই ইঁদুরে আক্রান্ত বোকার এটলে এ ধরনের প্রকল্প চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল