রাজধানীর কলাবাগানে স্ত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যার পর লাশ ডিপ ফ্রিজে রেখে পালানোর চাঞ্চল্যকর ঘটনায় স্বামী মো. নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কলাবাগান থানা পুলিশ। মামলা দায়েরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বংশাল থানার নবাবপুর রোড এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নজরুল জানিয়েছেন, স্ত্রী পরকীয়ায় লিপ্ত এবং তার সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে চান-এমন সন্দেহে তাকে হত্যা করেন নজরুল। গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম।
তিনি বলেন, গত রবিবার রাত ১১টায় নজরুল ইসলাম কলাবাগান থানার ১ নম্বর লেনের ২৪ নম্বর বাসার ৬/বি ফ্ল্যাটে ফিরে দেখেন ফ্ল্যাটের দরজার তিনটি লকের মধ্যে দুটি খোলা। স্ত্রী তাসলিমা আক্তারের প্রতি দীর্ঘদিনের সন্দেহ পরপুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক ও তার সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার ভয় তাকে উত্তেজিত করে। রাত ১২টার দিকে ঘুমন্ত স্ত্রীর মাথায় ধারালো দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেন নজরুল। এরপর লাশটি গামছা দিয়ে বেঁধে, বিছানার চাদর ও ওড়না দিয়ে মুড়িয়ে বাসার ফ্রিজে লুকিয়ে রাখেন। পরে রক্তমাখা তোশক উল্টিয়ে, মেঝে পরিষ্কার করে এবং নিজের জামাকাপড় ধুয়ে আলামত গোপনের চেষ্টা করেন। পরদিন সকালে নজরুল তার বড় মেয়ে নাজনীন আক্তারকে জানান, তাদের মা অন্যপুরুষের সঙ্গে পালিয়েছে। এ সময় নাজনীন আক্তার ঘরের দেয়ালে রক্তের দাগ দেখতে পায়। এরপর নজরুল তার দুই মেয়েকে নানার বাড়ি রেখে আসার কথা বলে রাজধানীর আদাবরে তাদের ফুপুর বাসায় রেখে নিজের প্রাইভেট কারে পালিয়ে যান। পরে এ বিষয়ে সন্দেহ হলে ভুক্তভোগীর ছোট ভাই নাঈম হোসেন ও তার দুই মেয়ে ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় কলাবাগান থানায় এসে অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কলাবাগান থানা পুলিশের একটি দল ওই ফ্ল্যাটে উপস্থিত হয়ে দরজার তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ডিপ ফ্রিজ খুলে ওপরের অংশ থেকে মাছ-মাংস সরালে চাদর দিয়ে প্যাঁচানো অবস্থায় তাসলিমা আক্তারের মৃতদেহ দেখতে পায় পুলিশ। ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্য ও সিআইডির ক্রাইম সিন দলের সহায়তায় কলাবাগান থানা পুলিশ ডিপ ফ্রিজের ভিতর থেকে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় তাসলিমার মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠায়। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওই দিন রাতে তাসলিমার ছোট ভাই নাঈম হোসেন বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ডিসি মাসুদ আরও বলেন, মামলা দায়েরের পর সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় কলাবাগান থানা পুলিশ তাসলিমার স্বামী নজরুলের অবস্থান শনাক্ত করে। মঙ্গলবার রাতে নবাবপুর রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার নিজ বাসার ওয়্যারড্রব থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো দা উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নজরুল ও তাসলিমা দম্পতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দাম্পত্য কলহ চলছিল।