চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের বারান্দা। এখানে ওয়ার্ডের সামনের বারান্দা-গলির এক পাশে সারিবদ্ধভাবে শুয়ে আছেন রোগীরা। কারও হাতে স্যালাইন, কেউবা মুমূর্ষু অবস্থায় কাতরাচ্ছেন। আবার চিকিৎসকরা এখানে চিকিৎসাও দিচ্ছেন। এভাবে চমেক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাইরের বারান্দা ও গলিতে রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অপরিষ্কার, নিরাপত্তাহীনতা, গরম এবং সংক্রমণ ঝুঁকি থাকার পরও রোগীরা বাধ্য হয়ে গলি বারান্দায় ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার সুস্থ হয়ে বাসায়ও ফিরছেন।
গতকাল দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, কেবল হৃদরোগ বিভাগ নয়, হাসপাতালের মেডিসিনের তিনটি ইউনিট, নিউরো মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, কিডনি, অর্থোপেডিকসসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের ফ্লোর, বারান্দা ও গলিতে রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
হৃদরোগ বিভাগের বারান্দায় চিকিৎসা নেওয়া রোগী আশরাফুল আলমের সন্তান ফাহিম বলেন, গত তিন দিন আগে বাবার বুকের ব্যথা অনুভব করলে তাকে এখানে আনা হয়। পরে চিকিৎসক ইসিজি করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে এখানে ভর্তি করা হয়। এখন তিনি আগের চেয়ে ভালো আছেন। তবে আমি মনে করি, হৃদরোগীদের এখানে চিকিৎসা নেওয়াটা নিরাপদ নয়।
চমেক হাসপাতালের অজ্ঞাত রোগীর সেবক খ্যাত প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম নেসার বলেন, হাসপাতালের ওয়ার্ডে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের। তাছাড়া, রোগী বহনকারী ট্রলি, খাবারের ট্রলি এবং রোগীর স্বজনদের যাতায়াত ও তাদের বিকট শব্দে রোগীদের যন্ত্রণার মাত্রা আরও বেড়ে যায়। বিঘ্ন ঘটে রোগীদের চিকিৎসা ও ঘুমের। তাই চট্টগ্রাম বিভাগের বৃহত্তর এই হাসপাতালের শয্যা আরও বৃদ্ধি করা এখন সময়ের দাবি।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রামের জন্য একটি একমাত্র সরকারি হাসপাতাল। এখানে রোগী এলে তাদের ফেরত দেওয়া যায় না। তাই ওয়ার্ডে স্থান সংকুলান না হলে বারান্দা-মেঝেতে ভর্তি দিতে হয়। আমাদের চিকিৎসক-নার্সরাও চেষ্টা করেন, রোগী যেখানে ভর্তি সেখানেই সর্বোচ্চ সেবা দিতে।
জানা যায়, চমেক হাসপাতালে বর্তমানে শয্যা আছে ২ হাজার ২০০টি। কিন্তু প্রতিনিয়তই রোগী ভর্তি থাকে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার। প্রতিদিন শয্যার বাইরেও প্রায় দেড় হাজার রোগীকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রায় ৪৮টি বিভাগ আছে। তাছাড়া, আইসিইউ, এনআইসিইউ, পিআইসিইউ, সিসিইউ, কিডনি ডায়ালাইসিস, জরুরি বিভাগ, ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি কেয়ার, ওয়ান স্টপ ক্রাইসি সেন্টার, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, সাপে কামড়ের চিকিৎসা ও শিশুদের ইপিআই কেন্দ্রে বিশেষায়িত সেবা দেওয়া হয়। চমেক হাসপাতাল ১৯৫৭ সালে ১২০টি শয্যা নিয়ে প্রতিষ্ঠা হয়। পরে ১৯৬৯ সালে ৫০০ শয্যায়, ১৯৯৬ সালে ৭৫০ শয্যায়, ২০০১ সালে ১ হাজার ১০ শয্যায় এবং ২০২২ সালে ২ হাজার ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে হাসপাতালের জনবল এখনো ৫০০ শয্যার।