রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন সামনে রেখে লড়াই জমে উঠেছে। ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন ঘিরে জমজমাট প্রচার চলছে ক্যাম্পাসে। ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকরা। ভোটারের মন জয় করতে ছুটছেন দ্বারে দ্বারে। শিক্ষার্থীবান্ধব ইশতেহার নিয়ে ভোট চাচ্ছেন। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে ক্যাম্পাসজুড়ে।
ইতোমধ্যে ভিপি ও জিএস পদে বেশ সাড়াও ফেলেছেন অনেকে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দলমতনির্বিশেষে অধিকার আদায়ে যাঁরা শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর হবেন, তাঁদেরই ভোট দেবেন তাঁরা। তবে প্রচারের শেষ দিকে এসে আলোচনায় কারা হচ্ছেন রাকসুর নতুন নেতা।
কেন্দ্রীয় সংসদে ভিপি পদে আলোচনায় আছেন ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, ছাত্রদল সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম প্যানেলের শেখ নূর উদ্দিন আবীর, আধিপত্যবিরোধী ঐক্য প্যানেলের মেহেদী সজীব। রাকসুর ইতিহাসের একমাত্র নারী প্রার্থী সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদের তাসিন খানও আছেন আলোচনায়। প্রতিযোগিতায় প্রভাব ফেলতে পারেন ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্র ফেডারেশন সমর্থিত রাকসু ফর র্যাডিক্যাল চেঞ্জ প্যানেলের প্রার্থী মেহেদী মারুফ। জিএস পদে আলোচনায় আছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী ফাহিম রেজা, ছাত্রদল সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম প্যানেলের নাফিউল ইসলাম জীবন, আধিপত্যবিরোধী ঐক্য প্যানেলের সালাহ উদ্দিন আম্মার।
এজিএস পদে আলোচনায় আছেন ছাত্রদল সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম প্যানেলের জাহিন বিশ্বাস এষা, ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী সালমান সাব্বির ও আধিপত্যবিরোধী ঐক্য প্যানেলের আকিল বিন তালেব।
ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ জানান, তাঁরা প্যানেলে বৈচিত্র্য রাখার চেষ্টা করেছেন। আছেন সনাতনধর্মের প্রার্থীও। এ ছাড়া জুলাই যোদ্ধাকে রাখা হয়েছে। ছাত্রদল সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর বলেন, অন্য ক্যাম্পাসগুলোতে কী হয়েছে, সেটা বিষয় না। এখানে তাঁরা ক্লিন ইমেজের প্রার্থী দিয়েছেন, ভোটাররা তাঁদেরই সমর্থন দেবেন বলে তাঁর প্রত্যাশা। ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্র ফেডারেশন সমর্থিত রাকসু ফর র্যাডিক্যাল চেঞ্জ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মেহেদী মারুফ বলেন, দিন যত যাচ্ছে, শিক্ষার্থীরা তাঁদের দিকে সমর্থন নিয়ে আসছেন। ভোটের একটা পজিটিভ ফল তাঁর প্যানেল পাবে বলে আশাবাদী তিনি। আধিপত্যবিরোধী ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মেহেদী সজীব প্রচার বাড়িয়েছেন ক্যাম্পাসের বাইরে। তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে ছিলেন, এমন নেতৃত্ব আছেন তাঁদের প্যানেলে। ফলে ভোটাররা তাঁদের সমর্থন করবেন বলেই মনে করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’, ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্র ফেডারেশন সমর্থিত ‘রাকসু ফর র্যাডিক্যাল চেঞ্জ’, বামজোট সমর্থিত ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’, ছাত্র ইউনিয়ন একাংশ সমর্থিত ‘অপরাজেয় ৭১-অপ্রতিরোধ্য ২৪’, কয়েকজন সমন্বয়ক সমর্থিত ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ ও ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সমর্থিত ‘সচেতন শিক্ষার্থী পরিষদ’ ও স্বতন্ত্র শিক্ষার্থীদের ‘ইনডিপেনডেন্ট স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স’ এবং ‘ইউনাইটেড ফর রাইটস’ প্যানেল অংশ নিচ্ছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম জানান, সুষ্ঠু নির্বাচনে সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। যেটুকু বাকি আছে সেটুকুও ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। ২৫ সেপ্টেম্বর সবার অংশগ্রহণে উৎসবমুখর নির্বাচন হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
কমিশনের তথ্যমতে নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদ, সিনেট প্রতিনিধি ও হল সংসদে ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জন। ছাত্র ১৭ হাজার ৫৯৬ এবং ছাত্রী ১১ হাজার ৩০৫ জন। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে ২৪৮ ও সিনেট প্রতিনিধি পদে ৫৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এতে ভিপি ১৮, জিএস ১৩ ও এজিএস পদে ১৬ জন লড়ছেন। ৯টি একাডেমিক ভবনে ১৭ কেন্দ্রের ৯৯০ বুথে ভোট গ্রহণ করা হবে।